অমিতাভ বিশ্বাসের কবিতা

অমিতাভ বিশ্বাসের কবিতা

পথ

পৃথিবীর পথে মানুষ হেঁটে চলেছে অবিরত
একটা পথ সহজ সরল গেছে জীবনপুরে
একটা পথ গেছে জীবন থেকে অনেক দূরে
মহামারি সময়ে মোট কতো হলো হতাহত…

একটা পথ গেছে বেলতলা শ্মশানে
একটা পথ গেছে কচিকাঁচা বাচ্চাদের স্কুল
একটা পথ গেছে সমরাস্ত্র জোগানে
একটা পথ গেছে রণক্ষেত্রে শতাব্দীর ভুল

একটা পথ গেছে ফুলদলের নিষ্ঠুর নিধনে
একটা পথ গেছে আড়বাঁশির সুরে নিধুবনে
একটা পথ গেছে ফুলের বাগিচায় গন্ধ চিনে
একটা পথ গেছে মনি হারা ফনি তোমা বিনে

একাধিক পথ বেশির ভাগই সব বন্ধ ঘোরতর
করোনা দিনে। একটানা বাজছে নিস্তব্ধতার ধুন
মারিকালের ঘোষণা: নিজ গৃহে অন্তরিন থাকুন,
অনুধ্যানে আমি ভিতরঘরের গুপ্ত দরজা খুঁজছি…

চিহ্ন বিহীন প্রতিনিধি

অল্পের জন্য নারী হতে হতে সুস্থ নারী হয়ে
জন্মাতে পারেনি যে তাকে কি
সারাজীবন হিজড়ে বলে ডাকবো ?
কিংবা অল্পের জন্য পুরুষ হতে হতে সুস্থ পুরুষ…

হিজড়েদেরও সহজ শৈশব থাকে, যৌবন থাকে
বেলাশেষে বার্ধক্যের স্মৃতিচারণাও থাকে-
তাঁদের নারী-পুরুষের অস্তিত্বহীন অস্তিত্ব নিয়ে যাতনাকাহিনি লেখা যেতেই পারে দোষ নেই তাতে

কবিতায়-নাটকে-উপন্যাসে-গল্পে-প্রবন্ধে লিঙ্গহীন
হিজড়েদের কথা বিষাদ ভারে ফিরে ফিরে আসে
চিহ্নহীন নরনারীর দুরূহ জীবনকে ছুঁতে গেলে খুঁজে নিতে হয় অস্তিত্বহীন অস্তিত্বের মন গভীর অনুধ্যানে

নারীত্ব ও পৌরুষত্বের জন্য ভিন্ন ভিন্ন জীবন নিরন্তর কাঁদছে— অস্তিত্বহীনতার হতাশা জীবনভোর
তাঁদের কুঁড়েকুঁড়ে খাচ্ছে…

কিছুক্ষণের জন্য তুমিও চিহ্নহীন নারী-পুরুষ
হয়ে যেতে পারো নভমণ্ডলে উদ্বায়ু মেঘে
সুগভীর ধ্যানের সুগন্ধী গায়ে মেখে

হে আলখাল্লা পরিহিত বিধাতা, চিহ্ন দাও ওদের
হতাশার নোনাজলে সাঁতার কাটছে চিহ্নহীনেরা…

উপসর্গ চিত্রিত আলখাল্লা

বাকরুদ্ধ তন্ময় আবেশে অপরূপ সৌন্দর্য একবার
আমাকে বলেছিল যদি বুকের মধু খেতে চাও
বোধের নির্মল জলে সত্তর কুলকুচি সেরে নাও
ব্যস্ততা ভুলে অবকাশে জিভ ছুলে পাশে এসে বসো।

সেভাবে অবকাশ পাইনি কখনো একটানা
জিভ ছোলা তো দূরদেশের কথা
মনমুকুরে সেভাবে নিজেকেই হয়নি চেনা,
নিয়ত নিজের সাথে আত্মিক আলাপচারিতা…

মারিকালের গৃহে অন্তরিন দিনে একলা নিজের ভিতর নিজে প্রবেশ করে দেখি অন্য এক আমি
দার্শনিকতা বোধের আলখাল্লাটা গায়ে চাপাতে
গেলেও আগুনের নদীতে সুনির্দিষ্ট নির্ঘন্ট লাগে

অঢেল সময় হাতে পেলে অখণ্ড অবসরে ব্যথা বাড়ে
কলমের বুকে, খোলামেলা হাওয়ায় শীত শীত করে
একাকিত্বের চাদর গায়ে ঐশী আলো গায়ে মেখে
খুকখুক কাশে করোনা উপসর্গ চিত্রিত আলখাল্লা…