মামুন সুলতানের কবিতা

মামুন সুলতানের কবিতা

এই খাম

সবুজ রঙের বাড়ি
হলুদ রোডের ডান পাশে
মিতালি সড়ক ধরে
সামনে গেলেই দশ নম্বর বাড়ি
এই কদম খামে বৃষ্টি পৌঁছে দিয়ো নীলাঞ্জনার হাতে
সেই বৈশাখী বৈকাল থেকে বৃষ্টির প্রতীক্ষায় আছে

ও মেঘ-হরকরা শুনো
রেজিস্টারি করা এই খাম এক আকাশ দামে কেনা
চৈতালি খরার রঙ বিক্রি করে
বৈশাখের ঝড়ো হাওয়ার বদলে বৃষ্টি কিনেছি
আমার নীলাঞ্জনার জন্যে।

কানগোঁজা কদম আর শাদা শাড়ি পরলে
বলো তো কেমন লাগবে?
হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে গেলে তার খোলা চুল
বৃষ্টি ভিজিয়ে দেয় যদি তার চুল সরোবর
কেমন লাগবে? কেমন?

আষাঢ় আর শ্রাবণ দুই বোন মিলেমিশে
ভিজিয়ে রেখো আমার নীলাঞ্জন নগর

সজল সওয়ারি গেলে নাইওরী ফিরবে বাড়ি
নীলাঞ্জনার অপেক্ষায় বসে আছি এইখানে
আর নীলাঞ্জনা কদম খোলা বৃষ্টির প্রতীক্ষায়।

স্মৃতিহীন অনন্ত ডায়রি

আমার কোন স্মৃতি নেই সুখ কিংবা দুঃখের
প্রেমপ্রাবল্যে ভেসে গেছে অতীত
সুখের বর্তমানে আমিই কেবল দুরন্ত ঘুড়ি
বাতাসে বাতাসে ঘুরে মন উড়ন্ত উষায়।

গ্রীষ্মের গোয়াল ঘরে গৃহপালিত হয়ে
রাখালের বাঁশি হয়ে গোচরে গিয়েছি এককালে
প্রকৃতি পয়লা প্রকাশে ঝড়ের কবলে
শিলাবৃষ্টি মাথায় নিয়ে ঘুরেছি হাওরে হাওরে
এগুলো সুখ নাকি দুঃখ নাকি স্মৃতিকথা
আমার কোন পোশাকে লেখা নেই।

তবে শ্রাবণে গেয়েছি ‘শাওনো রাতে যদি’
কেবা স্মরণে গাহিবে আমার গদ্যজীবনের গান
তেমন করে আসেনি কেউ
সেতো অপ্রাপ্তির ব্যথা; বেদনা ব্যাকুল।

শিউলি ফোটার দিনে দূর্গাবেলায় রথরঞ্জনে
যে ফুল নিয়েছি হাতে তা শুকিয়ে গেছে হাতের পাতায়
কখনো বলতে পারিনি এ ফুল তোমার জন্যে

আমার বর্তমানে কেবল শুকনো সময়
চৈতালি চৌচির ধারা
কেবল ফেটে ফেটে চীর ধরে কপালের ভাঁজ
নিজের ভেতরেই ফোটে নিজের বেদনা-বকুল
তাই বুকে লিখে রাখি জীবনের অনন্ত ডায়রি।

আমার সবুজ আশ্রয়

অথৈই পানিতে ভাসে শ্যামল গঞ্জের শ্যাওলা পাড়া
তলানো উঠোনে আসে গাঙের থৈ থৈ জল-পরিবার
ঘরের চৌকির বুকে শুয়ে আছে প্লাবিত আষাঢ়
স্রোতের তোড়ানো বলে ধসে যায় মাটির বাড়ি।

আষাঢ়ের মেঘে ভিজে গ্রামে আসে বান-বংশীয় জমিদার
জলের শাসনে ওরা ভাসিয়ে নেয় গোয়ালের গরু
উগাড়ের ধান আর তলিয়ে দেয় শ্যামাঙ্গী মায়ের শাড়ি
অষ্টাদশীর উরুতলে কী দুঃসহ সাঁতরে চলে এপার ওপার
ব্রিটিশ চরিত্রে হাসে আর খাজনা তুলে বিনাশী বহরে।

তলিয়ে গেছে এই গাঁ আমার মায়ের শীর্ণদেহ
বৈতল বানের পুত নিয়ে গেছে সড়কের পা
হাট বাজারের ঘর নির্মিত মসজিদ মন্দির
ফুফুর বাড়িতে নেই দালানের ঘরবাড়ি
নানিরাও ডুবে গেছে সাঁতার পানিতে দাদার বাড়ি
কোথায় দাঁড়াবো আর আমিও ডুবে গেলে
ডুবে যাবে বাংলাদেশ আমার সবুজ আশ্রয়।

স্বকালের সাক্ষী আমি

পায়ে পায়ে পাপ নাচে রাতের সোডিয়াম মুদ্রায়
নূপুর নন্দনে বাজে রাজকীর্তন হাতের ডানায়
বাঁশির মাতাল সুরে আমিও ধ্বনিত হই
অগণন অনেকের সঙ্ঘসীমানায় আমি বেজে উঠি

অপরূপার স্বরূপ সন্ধানে পা মেলে দেই আখড়ায়
অতীব মদের বাটি মুঠি মুঠি তুলে রাখি নিজের ঠোঁটে
নেশাখোর রাত নামলে বেসামাল ভুলে যাই
সিনাই পাহাড়

মহারাষ্ট্রের কোতোয়াল আমি
আভূমি শিয়র পেতে চেয়ে দেখি রঙিন পৃথিবী
মতিঝিল নেমে আসে চোখের পাড়ায়
টাওয়ারে টাওয়ারে ওঠে মুজরা মহফিল

চোখে ভাসে পাপিয়ার মধুর হাসি
পাপ নাকি পাপিয়ার ব্যাংকের সই করা চেকবই
মোহের ললাটে চুমে পান করে বিড়ালের বড় বড় চোখ
রাঙা রাতের নেশায় ছুটে আসে ক্যাবিনেট গাধা
গিলে খায় চেটে খায় বন জঙ্গল হাকালুকি ঘাস
স্বকালের সাক্ষী আমি বোধ-দণ্ডী রাক্ষস গোপাল

জানি পৃথিবী একদিন মূর্ছা যাবে অনাদি অন্তরে
অসহায় পৃথ্বীরাজ হা হয়ে কী বলবে মশাই?

প্রেসনোট

এই শহরের সব সাংবাদিক প্রেসক্লাবে আসুন
মেঘের বৃষ্টিলিপির পেডে পাঠিয়েছি অনুরাগপত্র
রক্তক্ষরণের অক্ষরে এঁকেছি বিক্ষত নদীর বুক
পাথরের রঙে আঁকা হৃদয়ের লগো
দেখেই বুঝে নেবেন
এখানে হাওরের মতো ভাসে হৃদয়ের হাহাকার

আসুন বৃষ্টি নামার আগেই কেন্দ্রবিন্দুতে আসুন
ঝরার পাতার গানে শুনে যান বিষণ্ণ বেদনার সুর
না কোন প্রকার দাবি কিংবা রক্তদানের কর্মসূচি
অথবা বেওয়ারিশ লাশ দাফন কিংবা সম্পত্তি
উদ্ধার কিংবা নারীর শ্লীলতাহানির বিচার চাইবোনা
বুকের পাঁজর খুলে একটা একটা দেখাবো।

সন্ধ্যা নামার আগেই নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাবেন
একটা জীবন দেবো অভিজাত রেস্তোরাঁর প্যাকেটে
বলিরেখায় মোড়ানো রাতজাগা চোখের সমুচা
টাকপড়া মাথার তৈরি শুকনো সন্দেশ
দুঃশ্চিন্তায় শুকানো বিলের দেশি মাছের পেটি
হাড় গিলু অস্থিমজ্জায় বানানো বিরিয়ানি
খেতে বসলেই আপনার প্লেটে আয়নার মত
ভাসতে থাকবে সম্মেলনের ছায়ালাপ।

আপনার জীবনের সেরা নিউজ পেতে হলে চলে আসুন
আজ বিকেল পাঁচটায় জাতীয় প্রেসক্লাব
এক জীবন বসিয়ে দিয়েছি উত্তপ্ত উনুনে
আসলেই রেডি পাবেন আজকের ব্রেকিংনিউজ।