দেবী আচার্য্যের কবিতা

দেবী আচার্য্যের কবিতা

অভিমানের চক্র

তুমি অভিমান করেছ
তোমার কাছে
যে অভিমানের কোন মৃত্যু নেই।
যদি মৃত্যু না থাকে
তবে সেই অভিমান
নৈঃশব্দ্যের শুকনো পাতার
মর্মর ধ্বনিতে বাজবে
তোমার অন্তরে দিবারাত্র।
নিঃসঙ্গ কয়েদির মত
নির্বাকে সকল বেদনা
লুফে নেবে।
সুখী হরিণ হাতছানি দিয়ে ডাকবে তোমাকে
অথচ পাথর সরিয়ে
হেঁটে যেতে পারবে না
সুখ মহলের দ্বারপ্রান্তে।

এসে দেখে যাও

কোনো কোনো রাত
নির্ঘুম কেটে যায়
তোমার মুখচ্ছবির কথা ভেবে
আমার শূন্য ঘরে আগুন জ্বলে
যে আগুনে আমার হৃদয় পোড়ে
আমি ভগ্ন কন্ঠে
তোমার নাম ধরে ডাকি,
বারবার ডাকি
কিন্তু তুমি আমার ডাক
শুনতে পাও না
কারন বাস্তবের সীমাবদ্ধতা
জানিয়েছে –
আমাদের সম্পর্ক
পৃথকের ঘোষণা।
তবুও তোমাকে দেখার উপবাসে
আমি শীর্ণ,
ছিন্নভিন্ন জীবনের
এক গোলক ধাঁধায় দিশেহারা।
কিভাবে মুছে ফেলব
আমার গভীর হৃদয়ের
এই উদ্বেগের ছায়া?
অভিমানের খরায়
ভালবাসার জোয়ার এনে
সবসীমা ছাড়িয়ে তুমি এসো
একটিবার-
আমার জীবনের প্রাঙ্গণে
এসে দেখে যাও
এখনো কত
যত্নে রেখেছি তোমায়
আমার হৃদয়ের অঙ্গনে।

পৃথিবী ও মানুষ

পৃথিবীতে আজ এসেছে আঁধার
ধূলিচ্ছন্ন সব নগরীর পথ
অর্ধস্ফুট বাগানের ফুল
পথের পথিক খোঁজে
স্বর্ণালী আলোর আকার।
নিস্তব্ধ প্রকৃতি,নীরব পাপিয়া
নিদ্রাহীন বিরহে শোকাহত
আজ পৃথিবীর হিয়া,
মানুষ স্তব্ধ করে রেখেছে
ক্রন্দনের ধ্বনি
জীবনের তীর্যক গতিস্রোত
উৎসবের রণি।

আঁধারের মিছিলে হবে কি আজ
পৃথিবী অচল!
খন্ড খন্ড করে ভাসিয়ে দাও
কলহের জল।
আলোর আবির্ভাব হবে নিশ্চিত
গভীর আস্থায় বাঁধো প্রাণ
মৃত্যুর শোকে
থাকবে পৃথিবী ঋণ
করবে পুনরায় জন্মের আহ্বান।

ভালোবাসা চাই

আকাশে উঠেছে নক্ষত্র,
পূর্ণিমা চাঁদ
বইছে নির্মল বাতাস
এ যেন স্বপ্নের
এক বৈশাখী রাত।
আজ কত ভালো লাগছে
এই মায়াবী রাতে
কি করে বলবো তোমাকে,
কি করে জানবো
আমার হৃদয়ের অনুভূতি!
এই যে আমার চোখের দিকে
চেয়ে আছো তুমি
আমার চোখের কাজল
কি বলছে জান!
এই মুহূর্তটা এখানেই স্থির থাক
কি অপূর্ব সুন্দর
এই প্রেমের জোয়ার।
যেন মধুর সুর ভেসে আসছে
দূর দিগন্ত থেকে
যে সুর বাঁধতে চাই দুটি হৃদয়কে
এক বন্ধনে।
যার কোন বিচ্ছেদ নেই
যে প্রেম আনন্দের
আকাশ, বাতাস, অরণ্য,
পাহাড়, সমুদ্রের।
আমার এই আলোকিত
অপরুপ সুখ
তোমার দুচোখ চুম্বন করবে
হাজার বছর,
আমার হৃদয়ে
আর কোন হাহাকার নেই
নেই কোন শূন্যতা
আমি শুধু ভালবাসা চাই
তোমার ভালবাসা পেয়ে
চাঁদের ঝরা আলোয় ভিজে
সুখের সমুদ্রে
ভেসে যেতে চাই।
হাজার বছর
শুধু ভালবাসা চাই,
ভালবাসা চাই; ভালবাসা চাই।