অণুগল্প: নার্সিংহোম

অণুগল্প: নার্সিংহোম

নার্সিংহোম
সিদ্ধার্থ সিংহ

নার্সিংহোম থেকে ফোনে যা বলল, সেটা শুনে তাপসের দিদি পাথর হয়ে গেল।

এই তো বেলা দশটা নাগাদ তার ভাই ফোন করেছিল। বলেছিল, দিদি যে ভাবে পারিস তুই আমাকে এখান থেকে নিয়ে যা। আমাকে বাঁচা। ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।

ভিডিও কলে ভাইয়ের এই আকুতি শুনে চমকে উঠেছিল দিদি। সামান্য মাথা যন্ত্রণা করছিল। মেডিক্লেম করা আছে। কার্ডের মেয়াদও ফুরিয়ে যেতে আর বেশি দিন বাকি নেই। তাই ভর্তি হয়েছিল শহরের দ্বিতীয় নামজাদা হাসপাতালে।

ভর্তির দু’দিন পরেই হাসপাতাল থেকে দিদিকে জানানো হলো, ওর করোনা হয়েছে। করোনা! তা হলে কি নার্সিংহোম থেকেই সংক্রমিত হল! নাকি মাথা যন্ত্রণাটা ছিল প্রাথমিক উপসর্গ! প্রাথমিক উপসর্গই যদি হয়ে থাকে, তা হলে এই তিন দিনে ওরা কী চিকিৎসা করল!
তবু সাহস জোগানোর জন্য ভাইকে বলেছিল, ভয় পাস না। প্রথম স্টেজে ধরা পড়লে করোনা ঠিক সেরে যায়…
— আমার করোনা হয়নি রে, এখানে যারা ভর্তি হয়েছে তাদের কারওরই করোনা হয়নি। কিন্তু যারা ভর্তি হচ্ছে, দু-একদিন পরেই তাদের করোনা হয়েছে বলে একটা আলাদা ঘরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
দিদি অবাক হয়ে বলল, এতে ওদের লাভ কী?
—লাভ নেই মানে? মাথা যন্ত্রণা, হাঁটুতে ব্যথা বা অন্য যে কোনও রোগের চিকিৎসার যে খরচ, তার থেকে অনেক অনেক বেশি গুণ খরচ করোনার চিকিৎসায়। তাই ওরা সবাইকেই করোনা হয়েছে বলে প্রচুর প্রচুর টাকার বিল ধরিয়ে দিচ্ছে। আমার তো মেডিক্লেম আড়াই লাখ টাকা ছিল, এই তিন দিনেই কি সব শেষ হয়ে গেল?
— হ্যাঁ, ওরা তো আমাকে ফোন করেছিল। বলল, এ ক’দিনে বিল হয়েছে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। মেডিক্লেম থেকে পাওয়া যাবে আড়াই লাখ টাকা। আপনারা বিকেল চারটের মধ্যে ব্যালেন্স এক লাখ আর অ্যাডভান্স আরও পাঁচ লক্ষ টাকা হসপিটালে জমা করে দিন।
— তোকে পাঁচ লাখ টাকা বলেছে? কাউকে কাউকে তো আট-দশ লাখ টাকা বলছে। বলছে, না হলে রোগীকে নিয়ে যান। কিন্তু কেউ নিতে আসার আগেই ওরা রোগীকে মেরে দিচ্ছে।
—কেন তাদের লাভ কী?
—লাভ একটাই। এখান থেকে বেরিয়ে কেউ যদি অন্য জায়গায় করোনা টেস্ট করায়, তা হলে তো এরা ধরা পড়ে যাবে, তাই…

তাপসের দিদির গলা থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এল— ভাইয়ের কথাই সত্যি হল!