মৃধা আলাউদ্দিনের কবিতা

মৃধা আলাউদ্দিনের কবিতা

মৃধা আলাউদ্দিনের দোঁহাকাব্য

বাতাস

আজকে তুমি বাতাস থেকে বাতাসে যাও মিশে
এই দুনিয়া মরার খেলা বাতাস মারে কি সে।

প্রশ্ন

বাতাস তুমি এই দুনিয়ায় নিত্য জুয়ারি
কার বা তরে দিচ্ছো আজান অন্তঃফুঁকারি।

একদলা দুষিত বাতাস
বাতাস এলো বন্যা হয়ে বউরি দুয়ারে
নিত্য এখন ভাঙে আঘর ভাঙে বিয়ারে।

বিমূর্ত বিরহ

উড়ে আসে মিলে যায় বসন্তের বিমূর্ত বিরহ
যায় সাগর ও নদী, এ আশ্বিনী চোখ অহরহ।

ঈদের দিনে

ঈদের দিনে বন্ধু দিল অন্তর্বাস ও পায়জামা
আম্মু দিলেন চুলের কাঁটা, হতের চুড়ি গায় জামা।

স্মৃতি

বাহারি বসন্তে যদি মেলি চোখ
ঋতুর ঋতুতে বেড়ে ওঠে শোক।

কৃষ্ণ ছাড়া

যদি সামনে দেখি কৃষ্ণ ছাড়া রাই
আমি হাঁটতে গেলে আস্তে সরে যাই।

ছলকে যাবো দূর

যদি মাঠের মধু শুধায় শুধু সুর
আমি নাইতে নেমে ছলকে যাবো দূর।

লাইলী-মজনু

বাঁশি যেন ভুলে যায় আমি আছি দূরে
আমাকে পোড়াও সখি! শে নরম সুরে।

মোজেজার বাসন

ভাঙে-গড়ে মাটি হয় চাঁদের দু’কুল
লাঠি মারে সাপ হয়, সাপ প্রিয় ফুল।

ইতিহাস

আঙুলের ইশারায় ফেটে যায় চাঁদ
সামনে সোনালি দেখো ভেঙে যায় বাঁধ।

পাখি তুমি ফেরাও কহর
পৃথিবীতে নদী-নালা, খাল-বিল মাছের বহর
ফের চায় পূর্ণ তিথী পাখি তুমি ফেরাও কহর।

মুখ হয়েছে বিবর্ণ
চোখের কোণে জমছে কালি, মুখ হয়েছে বিবর্ণ
পাই না ভেবে কি নাম দেব, এ ছবিটার কি বর্ণ…

মৃত্যু

মৃত্যু নিয়ে গ্যাছে সব কিছু আর সবার শরীর
থাকবে না কেউ, জেলে-জোলা-বাদী আর বধূ বীর।

ভাগ্য
সৃষ্টি সেই আদিঅন্তে, প্রথমে যা লেখা ছিলো সব
আজো আছে তাই যে রাখেন তিনি মানুষের রব।

পথিক

গতকাল গুলজারে যে নদীর দেখেছি জোয়ার
আজ নেই, থাকবে না কেউ দোস্ত, দারুণ ইয়ার।

ফেরাও চোখ
চেয়ে থাকো আকাশের দিকে, অই তীরে তন্ময়
গরিব-ধনীর ভেদ-হিংসা যেনো হয়ে যায় ক্ষয়।

না বললে আমিও বলবো না কিছু
যা কিছু আছে হে বিশ্ব বিধাতা! তোমার অন্তরের কোষাগারে
সব কিছু অভিলাষ; অসংকোচে বলো মোরে বলো বারে বারে।

দেশ

নামে না লানৎ আজ, পাখি ও নদীর চিৎকারে
এখানে পাথর ক্ষয়ে যায় সারাদিন শীৎকারে।

ব্যর্থতা

হাটে ওঠে [অনিচ্ছায়] পানকৌড়ি পিদিম ও প্রেম
নষ্ট হয়ে পচে যায়… নাও-নদী-বসন্ত হেরেম।

প্রেমিক পুরুষ

নদী আজ জেনে গ্যাছে আমি আছি সোনার মানুষ
রাগ নেই, রোগ নেই ভেঙে গ্যাছে ফিতনা ফানুষ।

মানুষ

সাগরের সান ঘাটে ওই দেখো সাহসী নোঙর
দুধে ধোয়া রাজপুত্র, মোমবাতি মানুষ সুন্দর।

ভিন্ন রমণী

চাঁদের ভেতরে দেখি সেই শ্যাম সুখময় দেহ
কাম-কেলি-কথা শেষ করে, রাধা নয় অন্য কেহ।

বেশ্যা

চাঁদনী আদর-আর অনুরাগে এই অঙ্গ দিয়ে
রতির গভীরে যাই, হয়নি এখনো বধূূ বিয়ে!

পূর্ণ চাঁদ

রোমশ শরীরে ঢেউ ফাটে, ভাঙে, ভেঙে যায় বাঁধ
কামযুক্ত রাধা যেনো চাঁদের উপরে এক চাঁদ।

অসুখ

চন্দ্র-সূর্য-সেই রাঙা রতিসম সুখ
সব-ই ফুরায়ে গেল; অন্তরে অসুখ।

তীর তীর ভাঁজ

এইখানে, ফসলের মাঠে দেখো কতো কারুকাজ
নদী-নারী, বাতাসের তরতাজা তীর তীর ভাঁজ।

ছলনা

ঘোলা পানি, সাদা হাত, মরা নাও শে নদীর কাছে
পৃথিবীর দিনগুলো, দীর্ঘ দূরে বাঁধা পরে আছে।

শুভ্রতা সবার জন্য
ভাঙা ঘরে আঙিনায় সোনার হরিণ
নিয়ে এলো শরদিন্দু সেই শুভ্র দিন।

পানি

মায়াবি মাটিতে বর্ষা বুনে যায় রোদ
বেড়ে ওঠে শাখা, সদা-বলিষ্ঠ বিনোদ।

আজান

রঙ প্রিয় রমজানে ভিজে ওঠে পরানের কূপ
পাথর হৃদয়ে ওঠে এই দেখো আজানের রূপ।

নবীর আগমন

অই দেখো সাদা মাথা রাত থেকে রবিউল মাস
নিভে যায় অগ্নিকু-, প্রজ্বলিত প্রতারক ঘাস।

আজানের সুর

আকাশ ছুঁয়েছে অশ্ব… আলোকিত দেহ
আর নেই শে শর্করা। শত্রুর সন্দেহ।

কষ্ট

নদী গ্যাছে শেষ হয়ে হারায়ে বাছুর
আমি তারে খুঁজে ফিরি কষ্টের কসুর।

হে রাত্রি! তোমাকে অভিবাদন
নদীগুলো ভোর রাতে ফিরে পায় আজানের সুর
সমুদ্র অথবা রোদ মানুষের দারুণ দুপুর।

রূপপুর

হুর-পরী আর আরাম-আয়েশ গন্ধ নেব ধূপপুরের
খাট-বিছানা, কেটলি-চুলা বালিশ হবো রূপপুরের।

ধান

কৃষক বলে আর যাব না ধানের কাছে আর না
ধান দিয়ে আর কি হবে ভাই, ধানে আসে কান্না।

সরকার

যা পাও সামনে তাই খেয়ে নাও নিজেই নিজের দরকারে
কলেই যখন পচা পানি করবে কী আর সরকারে।

ইতালি

দালাল নিলো প্রাণটি কেড়ে সঙ্গে সুর ও গীতালি
একটু সুখ ও শান্তির আশায় যাচ্ছিলাম অই ইতালি।

নদীর নরম ডেউ

এমন জায়গায় নেওরে খোদা যেখানে নাই কেউ
আর পারি না, দেখলে কাঁপি নদীর নরম ঢেউ।

খোদার গজব

ফনি-মনি, আইলা ছবই খোদার গজবÑ হ¹লে বি জানি
আবে হালায় আর কিছু না, ঢেউয়ের লগে লৌড়াইয়া যায় পানি।

গরম

বই-পোলাপান হ¹লে বি লৌড়াইয়া যাই খালপাড়ে
আবে হালায় কী যে গরম কইলজা খালি ফালপাড়ে।

তন্বী দেহ

কেনো তোমার মনের সাথে করছ এতো দ্বিধা
দাও বিলিয়ে তোমার দেহ তন্বী দেহে মৃধা।

হারানো দিন

কোথায় গেল হারানো দিন, সন্ধ্যাগুলো কই
আবারপেলে প্রেমের টানে দিতাম তারে মই।
সুখ
একটুও নাই সুখ এখানে গরিব-দুঃখী কামলাদের
শহরটা আর ভাল্লাগে না শহর শুধু আমলাদের।

বিষ প্রয়োজন
নারীর দেহ, নীল পেয়ালা এখন আমার নিষ্প্রয়োজন
বেঁচে থাকার জন্য আমার অল্প কিছু বিষ প্রয়োজন।