লুৎফুন নাহারের কবিতা

লুৎফুন নাহারের কবিতা

অনন্ত ছুটি

চলার পথে খুলে গেছে স্টেবিলাইজার…
সেই থেকে বাদ্যযন্ত্রের মতো বেজেই চলেছে জীবন
সুরে-বেসুরে; সমস্ত তন্ত্র-মন্ত্র ভুলে হরদম।

ভুল হয়ে যাচ্ছে চলায়-বলায়
ভুল হয়ে যাচ্ছে কাজে-কর্মে, বার্তায়-বাসনায়
তারচেয়ে আরো বেশি ভুল হচ্ছে সাধনায়।

ভুলে যাচ্ছি উদয়াস্ত
ভুলে যাচ্ছি দিন-রাতের তফাত
ক্ষ্যাপে গিয়ে ভুলে যাচ্ছি মার্জিত ব্যবহার
মনে রেখে তাবৎ অবাঞ্ছিত বিষাদ।

ক্লোরোফিলের বিচ্ছেদে ঝরে যাওয়া-
রঞ্জন-পাতার পাল, আনন্দ বিলিয়ে দেয়
যেতে যেতে; ভেতরে ভেতরে মৃত্যু শোক চেপে।

এদিকে আমি, সংযম ভুলে জমিয়ে রাখি দুঃখ বিলানো সকাল
আর সুখের সন্ধানে…জীবন ভুলে যাওয়া অসুখ।

যত্নে তুলে রাখা অব্যবহৃত খুচরো মায়া
গুনতে গুনতে-
ফিরে এসে দেখি, ফুরিয়ে গেছে সবই
চারিদিকে ধূসর শূন্যতা; কুয়াচ্ছন্ন অজানা পথ
বাঁকে বাঁকে এতো আগন্তুক, এতো পথচারীর
অলস পায়চারি! অথচ কোথাও তুমি নেই!

হোঁচট খেতে খেতে সাময়িক রিসিলিয়েন্স বাড়ে বটে
তবে, বদলে যায় না আঘাত পাবার অনুভূতি একেবারে।

সংবেদনশীল সময়
সমবেদনা কুড়িয়ে বাঁচতে বাঁচতে হাঁপিয়ে ওঠে; তাই
প্রস্থান চায় জীবন নাটকের এই মঞ্চ থেকে।

এজলাসে আবেদন মঞ্জুর হলেই
মিলবে অনন্ত ছুটি
ফাইনাল ফাইলবন্দী করে, এসব অহেতুক ছুটাছুটি।

অভ্যস্ততা

অভ্যস্ত হতে না চাইলেও,
অভ্যস্ত আমরা হয়েই যাই সিচুয়েশনের সাথে।

যেমন অভ্যস্ত হয়ে উঠছি ক্রমশ
মাস্ক ও স্যানিটাইজারের সাথে, লকডাউন ও মিটার দূরত্ব-লাইনে।

অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি আমাদের ব্যক্তিগত দূরত্বে
নিরাপদ নিরবতায়, একে অপরকে
পাশ কাটিয়ে যাবার কৌশলে
ঘড়ির কাঁটা মেপে সেকেণ্ডে সেকেণ্ডে।

আমরা অভ্যস্ত হয়ে উঠছি অনলাইন ক্লাসে, অনলাইন ব্যাংকিংয়ে, অনলাইন শপিংয়ে!
সময়ে আমাদের সবই সয়ে যায় বিনা প্রতিবাদে।

অবস্থা আমাদের যেমনই থাকুক, এই মডার্ণ ট্যাকনোলজির যুগে
লাইন আমাদের ‘অন’ রাখতেই হবে;
কল্প কথার কল্পনায় নয় অন্য কোন বিকল্পতায় নয়
দৃঢ় সংকল্পে অভ্যস্ত হয়ে।