ইকবাল বাল্মীকির কবিতা

ইকবাল বাল্মীকির কবিতা

লোরকার মৃত্যু দৃশ্য

০১
কবি হতে এসেছি
কাঁঠাল বিক্রেতা নয় ।
ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুর জন্য জন্ম নিয়েছি ফ্যাসিষ্ট অভায়ারণ্যে
না না হাসপাতালের বেডে দোল খেতে নয় ।

সিস্টারের পিছন দেখে বিড়ি ফুঁকতে আসিনি
বুলেট বুকে নিতে এসেছি …

অন্ধকারে অস্ত্র উদ্ধারের অপবাদে গুলি করো না
অস্ত্রের কারখানা বানানোর অপরাধে গুলি করো

০২
লোরকার তোমার মৃত্যু দৃশ্য থেকে আমার দেশ আর কতো দূর
সমান রক্তাক্ত মাইল পাড়ি দিলেই বামদিকে তোমার দরজা
আর ঠিক একই পথে আমার জানালা …

তুমি যে দেয়ালে গুলি খেয়ে আছড়ে পড়বে
আমি তার অপর পৃষ্ঠায় ঢেউ দিয়ে নগর বানাবো
তারআগে ব্যারিক্যাড হবে
গুলি খাবো
গুলি খাবো
গুলি খাবো
লাশ পুড়ানোর আগুন দিয়ে শালুক পোড়ে খাবো

তোমার শেষ দৃশ্যটা-ই শ্রেষ্টতম দৃশ্য করে সেটে দাও আমার কপালে

০৩
ওহে গার্সিয়া
আমরা তো জন্ম জন্মের পাপী
মা মেরীর নাভিকুন্ড থেকে সোজা আইল ধরে
ক্রুসে ঝুলে ঝলসে এ দাহন বনে জাগন দিতে এসেছি

কচুপাতার পানির মতো মৃত্যু আমাদের নয় …

কামানের গুলায় বেঁধে আমাদের কে উড়াতে হবে
নাপাম-নিউটন দিয়ে আমাদের কে পোড়াতে হবে

তবেই না মরণ হবে শ্যাম সম
তবেই না মরণ হবে শ্যাম সম

০৪
তুমি অলিভ হয়ে এসেছিলে
আমি বেলফই হয়ে এসেছি

আমাদে বউগুলো গিয়েছে বোতলে বারুদ ভরতে
এবং পদ্মমুখি এন্টি এয়ারক্রাফ্ট মিসাই প্রসব করতে

আমাদের হাতে মৃত্যুর কোনো দাগ নেই জীবনের দাগ
বন্দুকের নল কেনো
কামানের ব্যারেল বুকদিয়ে বাঁকিয়ে দিতে পারি
মৃত্যু দিয়ে মৃত্যুকে হারিয়ে দিতে পারি

০৫
রিও ব্রেভো , যদি তোমার নদীর নাম হয়
আমার নদীর নাম ও এলোকেশী ডাকাতিয়া

আমাদের রক্তজবা পিতা গুলো
সিঁড়ি দিয়ে গড়াতে গড়াতে নদী হয়ে যায় …

মায়েরা , সূর্যগর্ভা বলে
নির্মাণাদিন নক্ষত্রের রাতে
চাঁদের মাংস নামক জোনাক খেতে দেন আমাদের

আমরা কেনো মরতে যাবো ইটে উষ্টা খেয়ে
মরলে মরবো রাজপ্রাসাদ দখলে
মহারানীর সাথে একান্তে , ফুলশয্যায় …

০৬
আমার দেশের মানুষ গুলো স্বাভাব কবি ছিল
এদের কে স্বভাব লোভি বানিয়ে দিচ্ছে ধনন্তরি বদ হাওয়া
ব্লু-ফিল্ম বিক্রেতারাই আমাদের নেতা …

কবিতা নয়
নীল ছবির নব টিপতে টিপতে আঙুল অরিন্দম হয়েগেছে
দেহাঙ্গে বিপরিতাঙ্গ জাগবার সময় হয়েছে

০৭
ওরা আমাদের বোকা ভাবে
আমরা নাকি চাই সিংহের ছায়ায় হরিণ বেড়াতে আসে
শার্ক গুলো মাউথ ওয়াস ব্যবহারে অব্যস্ত হয় ?

করাতির হাত থেকে গাছ উদ্ধার করা কি পাপ ?
আমরাতো সেই পাপমন্ত্রে ধিক্ষা নিতে সমুদ্র হয়েছিলাম

মানুষের পেটে তাদের শৈশব সেলাই করে দিয়েছিলাম
পাথরের বুকে পানি
মার্বেলের বুকে সবুজ শৈবাল
কসাইয়ের ঘরে গালিবের গজল প্রবাহিত করার প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ….

০৮
জানো লোরকা , আমার পিতামহী বলতেন:
দালান তোলা পাপ
তাতে মানুষের মাথায় পা উঠে যায়
উপর থেকে মানুষের মুখ দেখলে অহংকার হয়

তাইতো , আমাদের নৃতত্ত্বে
রাজধানীর চিহ্ন থাকলেও রাজপ্রাসাদের নামগন্ধ নেই

যখন সমগ্র পৃথিবীতে হিংসা-ই ধর্ম
আমরা ছিলাম অহিংসার প্রচারক
জৈনের জল আর বৌদ্ধের পানি দিয়ে কতো দুঃখ ধুইয়ে দিয়েছি

আজ আমি আগুন নদী
দালানের চিপায় পড়ে রক্ত আমার ফসফরাস হয়েগেছে

০৯
আকাশ গঙ্গায় যে নিয়ম চলে
ব্রম্মান্ডের প্রেক্ষাপটে সে ফর্মূলা ভেঙ্গেপড়ে
তাইতো তোমার চোখ
সবার চোখে লাগাতে পারিনা
তোমার স্বপ্ন
সবার বুকে জাগাতে পারিনা

তারপর করোনার পরে মহামারী শেষে

০১
তুলার ডিঙ্গি নিয়ে এসো
পাথর বোঝাই করে নিতে…

লোহার পাহাড় ছিলাম
গলে গেছি কচিকচি পাথরের দু:খে

জলে নুড়ি করে নিও
সিমেন্টের সুতায় ভবন সাজাতে

এসো কিন্তু
ভালোবেসো কিন্তু
রেচন-প্রজনন-ভোজন মেলাতে

আর যাবো না ফিরে পাহাড়ে
বৃষ্টি কে বাতাস দিয়ে গলাতে …

০২
মহামারীর ছায়া কেটে বানাবো হরিণ
গল্পে জোড়া দিয়ে তালি হবে
তালির ভিতরে হবে হাততালি
বিজয়ী বনী আদমের গান রচিবে মানুষ
পাশে নিয়ে স্রোতের বিবর্তনে নদীর বিকাশ …

আঢ়মাসে যারা হাওনের জমি কিনেছিল
সফল সঙ্গমের ঢেঁকুর নিয়ে আসবে শিকারে
জালে জালে ভরে যাবে স্থলচর মাছে
গৃহবন্ধী গাছ গুলো রচিবে ইতিহাস পত্রপঠে

০৩
নারী গুলো ঘাড় ত্যাড়া করে দাড়াবেই
পুরস্কার ও পুং পোনামাছের জন্ম দিতে

নারী বিজ্ঞাপনের পক্ষে না বিপক্ষে
এই নিয়ে রোমান সিনেটে জ্বলবে কথার আগুন

রমনী’রা গ্লাডীয়েটর দিয়ে সাজাবে বাসর
মল্লযুদ্ধে ভাঙ্গবে কাঁঠের ঢাল আর কবির কপাল


বনোমূখি ট্রেনগুলো ছাড়বে বিরাণ ষ্টেশন
আয়রন ক্রাস্টের লক্ষতম মাইল পাড়ি দিয়ে
পৌঁছে যাবে নীলনদের কিনারে …

ঐখানে কাজরী’দির গ্রাম ,জোৎস্নাদী’র বাড়ি
মেটোপথে বাজে মহান ফরাওয়ের বাঁশি
তারাও রাখাল সভ্যতার সুরমা দেওয়া চোখে

যদি তখনও আমিষ রান্না করো তীব্র ছালমে
বড় দুঃখ পাবো ইভা, করোনাকে প্রার্থনা দিয়ে
কাঁঠটুকরা পাখি হবো , মরে মাবো …