তৈমুর খানের কবিতা

তৈমুর খানের কবিতা

প্রেমের হরিণী

সান্ধ্যসরণিতে কল্লোল জেগে ওঠে
থইথই শব্দ পারাবার
কল্পনার নাও ভাসে একূলে ওকূলে
ডুবু ডুবু হয় সংসার

ভাসমান চাঁদকে আজ আলিঙ্গন করো
কলঙ্কিনী যে বলে বলুক
রাধাভাব জাগ্রত হলে গার্হস্থ্য সরোবর
আয়না বসানো জলে পদ্ম ফুটুক

ভ্রমর – ভ্রমরী আসে
গীতমালা গুঞ্জন ছড়ায়
প্রেমের হরিণী ডাকে
কস্তুরী ঘ্রাণে উন্মাদ হয়

প্রতিধ্বনি

আবার এক প্রতিধ্বনি
সিংহাসন থেকে নেমে এল
যেন সিংহ শাবক

আমাদের খোলা ঘর দুয়ার
আমাদের বেআব্রু জীবন
আমাদের আইবুড়ো মেয়ে

প্রতিধ্বনি ঢুকে গেল ঘরে
প্রতিধ্বনি সিনেমা বানাল
প্রতিধ্বনি গর্জন প্রসব করল

ঘরে ঘরে এখন সিংহ শাবক
ঘরে ঘরে এখন শিকার কাহিনি
রক্তমাংসে আমাদের লেলিহান ক্ষুধা

দ্বিধা

কর্তব্যের পাশে দাঁড়িয়ে দেখি
কে বড়ো — মানুষ না ধর্ম ?
মানুষের মুখ ধর্মের দিকে ঘুরে আছে
ধর্মের মুখ অন্ধকারের দিকে —
তাহলে মানবতা কোন্ দিকে আছে ?

যেখানে দাঁড়িয়ে আছি
সেখানে অনেক রাস্তা
রাস্তার মোড়ে মোড়ে মহাপুরুষ
সবাইকেই ডাকছেন বড়ো আন্তরিক —
কোন্ দিকে যাব ?

মাথার উপর কাক ডাকছে
মানবতার মৃত্যু হলে
কর্তব্যও অন্ধ হয়ে যায় —
তখন যতই বাঁশি বাজুক
পৃথিবী জুড়ে আতঙ্ক নেমে আসে…

লাশ

একটার পর একটা মৃত্যু আসছে
আর জীবনের আদর্শ ভুলে যাচ্ছি
পৃথিবী অচেনা হয়ে যাচ্ছে —
ফুল গাছ পাখি কোথায় হারিয়ে যাচ্ছে ?
বাবা যে পুকুরে স্নান করাতেন রোজ
হাত নেড়ে নেড়ে জলের ঢেউ নামত —
কোথায় সেই পুকুর চলে গেল ?
আর পাথর বসানো সিঁড়ি ?
খাঁ খাঁ রাস্তায় বাবার চপ্পলের দাগ খুঁজি
পুকুর পুকুরেই মরে গেছে —
হাওয়া নেই হাওয়ায়
পাখিরা কোথায় উড়ে গেছে ?

ক্লান্ত দুপুরে নিজেরই লাশ বয়ে নিয়ে যাই
অবসিত কোনো নষ্ট সভ্যতার দিকে !