সোমা পালিত ঘোষের অণুগল্প

স্বাধীনতার স্বাদ
ঘুম ভেঙে ভিখু ভাবে দিনটা আজ ভালো যাবে। মা আজ কাজে যায়নি ঘরে গুনগুন করে গান গাইছে। ভীখুর বয়স এগারো। মার হাসিমুখ তার খুব ভালো লাগে।
আজ ১৫ই আগস্ট। পাড়ার ক্লাবে হিন্দি ভোজপুরি গান বাজছে। বাতাসে মাংসর গন্ধ
আহা, ঘুড়ি লাটাই নিয়ে সে দৌড় দেয়।
আগের দিন পার্টির ছেলেরা তেরঙ্গা পতাকা, হাতের ব্যান্ড, গেঞ্জি, টুপি দিয়ে গেছে।
মার ডাকে সে দৌড়ে আসে “আর সময় নেই রে ভিখু ডিম পাউরুটিটা তাড়াতাড়ি খেয়ে নে ক্লাব থেকে টিফিন দিয়েছে। মন্ত্রীর আসার সময় হয়ে গেল। কাল বারবার পার্টি ছেলেরা বলে গেছে ঠিক সময়ে হাতে ব্যান্ড গায়ে জামা মাথায় টুপি আর পতাকা নিয়ে আমাদের দাঁড়াতে হবে চল চল আর সময় নেই …”
চারিদিকে হইচই আর ব্যস্ততা। কত ক্যামেরা নিয়ে লোকজন ছোটাছুটি করছে। রাস্তার দু’ধারে এই তল্লাটের সকলে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে।কয়েকজনকে রাস্তায় ফুল ছুঁড়তে হবে ভিখুর মা কাগজের থালায় ফুল নিয়ে দাঁড়ায়। সব দায়িত্ব ভাগ করা আছে।বড় বড় গাড়ি হুস হুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে আজ যে মন্ত্রী আসছেন। পতাকা উত্তোলন, ভাষণ তারপর খাওয়া দাওয়া নাচ…
মন্ত্রীর ভাষণে সে বুঝলো আজ দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে।
ভিখু বিড়বিড় করে বলতে থাকে কই তার মা তো স্বাধীন হয় না কখনোও হয়না। তার বাবা মাঝেমধ্যে বাড়ি এসে মায়ের কাছ থেকে পুরো কামাই নিয়ে চলে যায়। মাকে মারে মা কাঁদে খুব কাঁদে। ভিখুর খুব ইচ্ছে করে মার কান্না দুঃখ জুড়িয়ে দিতে। স্কুলের দিদিমনিরা যেমন সাজে তেমন করে মাকে সাজাতে। কানাই কাকু তাকে অনেকদিন ধরে একটা কাজের কথা বারবার বলে। সেখানে কাজ করলে অনেক টাকা রোজগার হয়। আজ যে স্বাধীনতা দিবস আজ ভিখু স্বাধীন। সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে মায়ের মুখে হাসি ফোটাবেই।আজকেই পটাই দা ঘনাকাকুর সঙ্গে সে …
স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে ভিখু আজ দেশের সঙ্গে সেও স্বাধীন হয়েছে।