তৈমুর খানের ছয়টি কবিতা 

তৈমুর খানের ছয়টি কবিতা 

পাতাবাহার

যেদিকেই ঝুঁকি
নত হয় পাতাবাহারের গাছ
এত পুরোনো রাস্তা
বাল্যের চেনা মেঘ
যৌবনের রোদমাখা উত্তাপ
একে একে নেমে আসে

পাতাবাহার কপাল ছোঁয়
চিবুক ছোঁয়
পাতাবাহার হৃৎপিণ্ডে আক্সিজেন
যোগান দেয়

পাতাবাহার, আমি কি নতুন এসেছি ?
সমস্ত বাগান জুড়ে শুরু হোক কলরোল

মুক্তোকথা

বৃষ্টিতে কথা ভিজে যায়
নোনা শব্দে গড়ায় কথা
হিরণ্য রোদে জ্বলে ওঠে কথা
অন্ধকারে যেমন জ্বলে ফসফরাস

সমুদ্রের গভীরে কথা খুঁজতে এসে
অনেক ঝিনুক তুলে আনি
কথারা কোথায় ?
ঝিনুকের খোলসে আল্পনা আঁকা

তথ্য

তুমি য পা এগিয়ে এসেছ
তার অনেক বেশি পিছিয়ে গেছ
যত চিঠি লিখেছ এতদিন
তার অনেক বেশি ছিঁড়ে ফেলে গেছ
সেসবই আমার এখন গবেষণার তথ্য

আলো

এখন আলোকেই অশ্লীল মনে হয়
অন্ধকার সুসভ্য সমাজ
সেতুর উপর দাঁড়িয়ে ভাবি  :
আমরা কোন্ সমাজের লোক ?
বিকেলে রোদের পিঠে গোধূলির মায়া
সকালে রাতের মৃদু লজ্জা পাওয়া
সারাদিন দৌড়োতে থাকি
আর প্রার্থনা জানাই :
ইহকাল পরকাল আলোকিত হোক !

অথচ আলো অর্থে নির্লজ্জ বাসনা
সমস্ত জীবন ধরে শুধু তারই বন্দনা !

ধর্মপাঁচালি

ফেনিল ঐশ্বর্যে কেঁপে ওঠে ধুরন্ধর
নাচে বাঁশি নাচে মেঘ নাচে অন্ধকার
ক্লান্তিময়  দিন যায়, দৈব সারথি
গৃহযুদ্ধ অজাচার ধর্ষণের রীতি
অসহিষ্ণু বার্তা আনে বীভৎস সঙ্গম
লিঙ্গ স্ফুলিঙ্গ হয়, রাজনীতি কাম
ধর্মফুলে হীন আরতি দেবতা সমাচার
বিকলাঙ্গমঙ্গলে পূর্ণ হয় সংসার

 

মৃতের প্রতি

ধর্মের আবেগ মাখছে রাজনীতির বিষ
ধর্মে যাব না আমি, ঈশ্বরকে বলে দিস
আমার ঈশ্বর মাটি, আমার ঈশ্বর জল হাওয়া
বেঁচে থেকে যদি যায় ভালোবাসা পাওয়া
ক্ষতচিহ্নে ঢাকা পথ, রক্ত ভেজা কলরব
মনুষ্যত্ব   মরে গেছে অথবা ছড়ানো তার শব
তবুও বিবেক দৃশ্য, তবুও ফোটে আলোফুল
উজ্জীবন ফিরে আসে, ঘ্রাণ পায় স্বপ্নমুকুল