প্রবীররঞ্জন মণ্ডলের কবিতা

প্রবীররঞ্জন মণ্ডলের কবিতা

নামতা গুনন

কী নরম হাওয়ার মধ‍্যে
চালিয়ে দিচ্ছো মেঘের ইস্পাত রক্তকণা!
খরগোশ নরম তুলতুলে বৃষ্টি ঝরছে
আমার চাতক পিপাসা বারান্দায়।
তোমার খট্বাস চোখ ফসফরাসের মতো জ্বলে উঠছে
মেঘের ভিতরে রুপোর চাঁদা মাছ খাবে বলে।
তলে তলে আকাশ মাপছে আমার মনবিড়াল,
নাগাল পেলেই ঘাপটি কাটিয়ে লড়ে দেবে ঝাঁপ।
মেঘের থেকে একটু উত্তাপ আর বৃষ্টিকণা নিয়ে
সোজা দিয়ে দেবে সমুদ্র দৌড়।
খোলামকুচির মতো সমুদ্রে ভেসে কাটাবে জীবন;
এই ভাবনায় বসে বসে দিনের নামতা গুনছে।

নারীবতী ধানগাছ

মাঠের সারিতে দাঁড়িয়ে পড়েছে ধানগাছ
ওর নরম পাতায় খেলতে এসেছে রোদ
খেলার মাঝেই ছুটে চলে এসেছে দামাল বাতাস
কানে কানে এসে বলে, বৃষ্টি তোমায় ভালোবাসে
চোখের ইশারায় মেঘের সমুদ্র দেখায়
আর চুপিচুপি ঘাসের বুকেতে মুখ ঘষে।

পলে পলে বেড়ে উঠে যৌবন পায়
মাঠের সঙ্গমে হয় পূর্ণ গর্ভবতী।
গর্ভবতী মুখ হতে চোখ ফুটে হাস
বিয়োন মাঠ জুড়ে পৌষ ফিরে আসে
নারীবতী ধানগাছ কারা বয়ে যায়!
কাঁকনে কাঁকন মেশে উঠোনের গায়।

ধাপ

মনের তালা বন্ধ করে বিছানায় ঝিমুনি কেটে
সংসার যাত্রার শেষ ধাপে
তরতর করে পৌঁছে যাচ্ছে লোকটি;
পায়রা ডানায় পতপত করে উড়বে বাতাসে
সীমাহীন শূন্যতায় রাখছে উড়াল ডানা
একটানা ঝোড়ো বাতাসের খোঁজে।

আকাশের অপরিসীম সীমানা ভেদ করলে
ডানার নীচে নেমে আসে ক্লান্ত দুঃসময়;
বুড়ো গাছের ডালপালার মতো নূব্জ‍্যে পড়ে শরীর
শূন্যতায় হারিয়ে যায় গভীর উদ্দামতা।
কাদের কোন সখের বোহেমিয়ান ঢেউ আছড়ে পড়ে
শূন্য আকাশের নীল প্রলেপ দেওয়া মহাসাগরে!

খুব আদরের সাথে চিনে নেওয়া যায়
সংসার নির্বাহের শেষ সিঁড়ির ধাপ।

নতুন এক সময়ে

পৃথিবীর সীমারেখায় দিগন্ত দাঁড়িয়ে আছে
শূন্য এক থালা হাতে নিরুপায়,
সবুজেরা বিবশ বিবর্ণ হয়ে শুয়ে আছে
মরুময় বরফের ভিতর।

কারও কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই
ফণাহীন নদীগুলো নেতিয়ে শুয়ে পড়েছে
পলিমিশ্রিত একরাশ কাদার ভিতর।

আমরা কেউ কেউ আদার ব‍্যাপারি নই
কেজি দর দুইশত টাকা ছাড়ালেও
আমাদের ভোজন মাংসের ব‍্যাপারে আদায় উদার।

এসপার ওসপার করা স্বভাবের মানুষগুলো
মুষ্টিবদ্ধ হাত তোলার অধিকার হারিয়ে
কুঁকড়ে আছে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ ভয়ে!

নিরুপায় পৃথিবী,দ্রোহকাল কাটিয়ে উঠবার
দিন গুনতে গুনতে আত্মশ্লাঘায় এগিয়ে চলেছে
হাজার হাজার বর্ষকাল পিছনে ফেলে
নতুন এক সময়ের স্রোতে গা ভাসাতে।

চলো,পৃথিবীর ঘুর্নন স্রোতে গা মেলাই সবাই
আমাদেরও দ্রোহকাল কেটে যাবে এখন।

স্বপ্নবীজ

পৃথিবীর শস্যকণাও এক একটা অক্ষরবীজ
মাটির ঔরসে জন্ম নেয় কত কথা!
গল্প হয়,গান হয়
কবিতা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র মাঠ।
অলক্ষ‍্যে পাঠ করে ফেলি
আজীবন ভোর একই ছন্দ,সুরতাল,লয়ে
আমরাওতো এক একটি অক্ষর দানা!
জীবনটা জিজ্ঞাসা থাক
কবিতা স্বপ্নবীজ বুনে যাই একটানা।