গল্প: যাহা বলিবো সত্য বলিবো

গল্প: যাহা বলিবো সত্য বলিবো

যাহা বলিবো সত্য বলিবো
দেবাংশু সরকার

সারা সপ্তাহের হাড়ভাঙা খাটুনির পর রবিবার সকালে দিলীপের চায়ের দোকানে ঘন্টা দুয়েকের আড্ডাটা যেন রুক্ষ মরুভূমির মাঝে এক টুকরো মরূদ্যান। সকালে উঠে দোকান বাজার সেরে দশটা থেকে বারোটা সাড়ে বারোটা পর্যন্ত কয়েক কাপ চা, কয়েকটা সিগারেট সমেত এই ঘন্টা দুয়েকের আড্ডাটা যেন সারা সপ্তাহের পরিশ্রমের অক্সিজেন জোগায়। মিহির, দীপক, সন্জু, রমেশ, তপন এইসব আমার মত আধবুড়োগুলো সবাই সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করে থাকে এই রবিবারের সকালটার জন্য। এরা সকলেই ভালো চাকরি করে, ভালো উপার্জন করে। মিহির জামশেদপুরে সরকারি চাকরি করে। সোমবার সকালে চলে যায়, শনিবার বাড়ি ফেরে। রমেশ, তপন, দীপকদের অফিস অবশ্য কলকাতার মধ্যে। সকালে যায় সন্ধ্যায় ফেরে।কেউ আগে কেউ পরে। এদের তুলনায় আমার অবস্থা কিছুটা ঢিলে। বেসরকারি কোম্পানীতে চাকরি, আজ ভালোতো কাল অবস্থা খারাপ। হাড়ভাঙা খাটুনি, বসের রক্তচক্ষু। অফিসে ঢোকার নির্দিষ্ট সময় আছে, ফেরার নেই। তার ওপর মাইনেও কম। এভাবেই লাট খেতে খেতে দিন, মাস, বছর কেটে যাচ্ছে। এরমধ্যে রবিবার মানে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচা। দিলীপও দোকান সামলাতে সামলাতে আমাদের গল্পে, আড্ডায় যোগ দেয়। পোস্ট অফিসের সামনেই তার দোকান। তাই সারা সপ্তাহ ভালোই খদ্দের হয়। আগে রবিবারটা বন্ধ রাখতো। কয়েক বছর হল রবিবার সকালেও দোকান খুলছে। বলে আমাদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার জন্য রবিবার দোকান খোলে। তার সঙ্গে কিছু উপার্জন হয়।

কোনো রবিবার দিলীপের দোকানে যেতে একটু দেরি হলে ফোনের পর ফোন আসতে থাকে। আজ বাজার করতে একটু দেরি হয়ে গেল। যথারীতি কয়েকটা ফোন এসে গেল। আমিও দৌড়াতে দৌড়াতে দিলীপের দোকানে এসে পৌছলাম।

আমাকে দেখে দীপক চিৎকার করে বলে উঠলো, “তাড়াতাড়ি আসবিতো। আজকের কাগজটা দেখেছিস? খোদ কোলকাতা সহরে ভুতের নাচন শুরু হলো।”

রমেশ খবরের কাগজটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো, “দেখ দেখ, নাগের বাজার ব্রিজের ওপর ইদানিং ভুতের উৎপাত শুরু হয়েছে। রানিং গাড়িগুলোকে অ্যাটাক করছে।গাড়ির চাকা মাটিতে আটকে যাচ্ছে। গাড়ির কাঁচ ভেঙে যাচ্ছে। অনেকেই নাকি দেখেছে।”

কাগজে খবরটা পড়ে অবাক হয়ে বললাম, “নাগের বাজার ব্রিজ মানেতো বিরাট জমজমাট এলাকা। এর দুপাশে কত দোকান, স্কুল, ব্যাঙ্ক, ডাক্তারখানা। বিরাট বড় বাজার। বাস, রিক্সা, অটোর দৌড়োদৌড়ি রাত বারোটা পর্যন্ত। রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো, নাইট গার্ড। ব্রিজের পাশে মন্দিরও আছে। তারপরেও ভুত! অন্ধকারেই যাদের বাস, ঘর সংসার তারা রাত দুপুরে নাগের বাজার ব্রিজের ওপর নেচে বেড়াচ্ছে! প্রত্যেকেরই নিজস্ব অ্যাক্টিভিটির জন্য লঞ্চ প্যাড বা প্লাটফর্ম দরকার। তাই বলে আলোর বন্যায় ভেসে যাওয়া একটা ব্রিজ কিনা ভুতের কর্মক্ষেত্র! এইসব ভুতের পেছনে কোনো অদ্ভুত নেইতো? নাগের বাজারের লোকাল ভুতেরা অনেক কাল আগেই লোটা কম্বল নিয়ে এলাকা ছেড়েছে। মনে হচ্ছে এরা ইমিগ্রেন্ট মানে পরিযায়ী ভুত। হঠাৎ মালদা, মেদিনীপুর বা শিলিগুড়ি থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। বা কলকাতা দেখতে এসেছে। কদিন পরেই ফিরে যাবে। বা কোনো কনসাইনমেন্ট নিয়ে এসেছে, কাজ শেষ হলেই কেটে পড়বে।”

“না, না, ওদের নিয়ে ওরকম ফাজলামো করিস না। ওরা দুর থেকে সব দেখতে শুনতে পায়। তারপর বদলা নেয়। তোর কথাও হয়তো শুনতে পাচ্ছে। এবার হয়তো তোকে টার্গেট করবে।” চোখ মুখ বিকৃত করে মিহির বলতে থাকে। মনে হলো আমার হাল্কা কথাগুলোতে খানিকটা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

– “ঠিক বলেছিস যারা দেখেনি, দেখেনি। যারা দেখেছে তারা জানে অশরীরী আত্মা কি ভয়ঙ্কর হতে পারে !” মিহিরের কথায় সায় দেয় রমেশ।

রমেশের কথার মাঝেই মিহির আমাকে প্রশ্ন করলো, “তুই কোনো দিন ভুত দেখেছিস?”

বললাম, “দেখেছি, অনেক দিন আগে, কলেজ লাইফে।”

আমার কথা শুনে রমেশ বলে উঠলো, “তাহলে দেখা যাচ্ছে ভুত দেখার অভিজ্ঞতা সবারই কিছু না কিছু আছে। মিহির দেখেছে, সঞ্জু দেখেছে, দীপক দেখেছে। সে সব এক একটা হাড় হিম করা ঘটনা। তুই দেরি করে এলি তাই শুনতে পেলি না। তোর অভিজ্ঞতাটা এবার শেয়ার কর।”

কিছুটা সময় নিয়ে বলতে শুরু করলাম, “সে প্রায় ত্রিশ বছর আগের ঘটনা। তখন আমি সুরেন্দ্র নাথ কলেজে পড়ি। অনান্য দিন বিকালে বাড়ি ফিরে এলেও শনিবার কলেজের পর একজন প্রফেসরের বাড়ি প্রাইভেট টিউশন পড়ে ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যেতো। এরকমই এক শনিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ অঝোরে বৃষ্টি নামলো। প্রফেসরের বাড়ি অনেকক্ষন আটকে গেলাম। কয়েক ঘন্টা পর বৃষ্টি একটু কমতে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। কোথাও হাঁটু জল, কোথাও কোমর জল। রাস্তায় গাড়ির দেখা নেই, দোকান বাজার সব বন্ধ। অনান্য সহপাঠীরা কাছাকাছি থাকে। তারা কেউ বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটতে লাগলো, কেউ বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে রইলো, যদি কোনো বাস পাওয়া যায়। বাড়িতে খবর দেওয়ার কোনো উপায় নেই। তখনতো আর মোবাইল ফোন চালু হয় নি, ভরসা পাবলিক বুথ, তাও বন্ধ। আমিও আর দেরি না করে শিয়ালদা স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম।

যখন শিয়ালদা স্টেশনে পৌছলাম রাত দশটা বেজে গেছে। পুরো স্টেশন চত্বরটাই জনশূন্য। লোকজনের কোনো চিহ্ন নেই। দৌড়ে গিয়ে একটা ট্রেনে উঠলাম। ট্রেনটা ছেড়ে দিয়ে ছিল। চলন্ত ট্রেনে দৌড়ে উঠতে গিয়ে আমার একপাটি চটি পা থেকে খুলে পড়ে গেলো। একটা সীটে গিয়ে বসলাম। কামরাতে একজন প্যাসেঞ্জারও নেই। কেবল আমি একা। সারা শরীর বৃষ্টির জলে ভিজে গেছে। ব্যাগের মধ্যে বই খাতাগুলো ভিজে গেছে। এতক্ষণে ট্রেনটা গতি বাড়িয়ে ছুটে চলেছে। ট্রেনটা ছুটছেতো ছুটছেই। কোথাও থামছে না। এতক্ষণে পার্কসার্কাস, বালিগঞ্জ স্টেশনগুলো ছেড়ে যাওয়ার কথা! কিন্তু ট্রেনটা কোথাও দাঁড়াচ্ছে না! আবার মুষলধারে বৃষ্টি নেমেছে। বাইরের দিকে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। তবে কি ভুল ট্রেনে উঠে পড়লাম। নাকি কখন স্টেশনগুলোতে ট্রেনটা থেমেছে খেয়াল করিনি! কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সব কিছু তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ কিছু দুরে একজনকে দেখতে পেলাম। তাহলে ট্রেনে আমি একা নই। এগিয়ে গিয়ে দেখলাম একজন শুয়ে আছে চাদর মুড়ি দিয়ে। আমি খুক খুক করে কাশির শব্দ করতে লোকটা নড়ে উঠলো, তার পর উঠে বসলো, তার পর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। গায়ের চাদরটা খসে পড়লো। কি বিভৎস একটা চেহারা! জবা ফুলের মত লাল রঙের চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে, পাথরের মতো শক্ত মুখ থেকে জিবটা বেরিয়ে আছে। ক্রমশ যেন আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আমার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে । চোখের দৃষ্টি ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে। মাথাটা যেন কাজ করা বন্ধ করে দিতে শুরু করেছে। তারপর আর কিছু মনে নেই।

সকালে সূর্যের আলো মুখে পড়তে ঘুম ভাঙলো। সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা, জ্বরে পুড়ে যাচ্ছি। তাও আস্তে আস্তে উঠে বসলাম। দেখলাম কারশেডে একটা পরিতক্ত কামরাতে রয়েছি। পাশেই পড়ে আছে বইয়ের ব্যাগটা। কি আশ্চর্য চটি জোড়াও আছে! গতকাল যে একপাটি চটি হারিয়ে গিয়েছিল সেটা এলো কিভাবে? কিছুই বুঝতে পারছি না। মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে। কিভাবে কি ঘটলো? কিভাবে এখানে এলাম? কোনো কিছু ভেবে দেখার মত শক্তিটাই যেন হারিয়ে ফেলেছি। কোনো রকমে ঐ কামরাটা থেকে নেমে শিয়ালদা স্টেশনে এসে আবার ট্রেন ধরলাম।

বাড়ি ফিরে দেখলাম কান্নাকাটি শুরু হয়ে গেছে। বেশ কয়েকজন প্রতিবেশীও এসে হাজির হয়েছে। আমাকে দেখে সবাই যেন ভুত দেখার মত চমকে উঠলো। বুঝতে পারলাম একরাতে আমার শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আমার টলোমলো শরীরটাকে সোফাতে বসালো। তারপর প্রশ্নের পর প্রশ্ন। সেই সঙ্গে উপদেশ, কেউ বলে ডাক্তার ডাকতে, কেউ বলে ওঝা ডাকতে। দশ দিন লাগলো আমার সম্পূর্ণ সেরে উঠতে। তারপর যেদিন কলেজে গেলাম …।”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ ঠিক কথা, শয়ে শয়ে মানুষ একসাথে ট্রেনে যাতায়াত করে তাই কিছু বুঝতে পারে না ।” আমাকে থামিয়ে দীপক বলতে লাগলো, “বছরের পর বছর কত মানুষ ট্রেনে আত্মহত্যা করে, কাটা পড়ে। তাদের অনেককেই বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাহ করা হয়, কিন্তু শ্রাদ্ধ শান্তি কিছুই করা হয় না। সেই সব অতৃপ্ত আত্মারা রেল লাইনেই অবস্থান করে। তারপর বল যেদিন কলেজে গেলি, স্টেশনে বা রেললাইনে কিছু দেখলি?”

আমি বলতে শুরু করলাম, “না, রেল লাইনে নয়। আসল ঘটনা ঘটলো…।”

“শুধু কি আত্মহত্যা বা কাটা পড়া ।” আমি কথা শেষ করার আগেই মিহির বলতে লাগলো, “কত গুন্ডা, বদমাইশ, অ্যান্টি শোশালরা খুণ করে রেল লাইনের উপর ফেলে দিয়ে যায়। কারন শুনেছি কেস রেল পুলিশের আন্ডারে গেলে আর সেভাবে তদন্ত হয় না। আমি একদিন সকালে রেল লাইন পেরিয়ে যেতে গিয়ে দেখি একটা বডি পড়ে আছে গলা কাটা অবস্থায়। কিছু দুরে পড়ে আছে মাথাটা। সত্যি কত কিত্তিই যে রেললাইনে ঘটে! যাকগে, তোর কেসটা বল। এরপরেও আসল ঘটনাটা বাকি আছে!”

“আছে, আছে। এর পরের ঘটনাটাই সব থেকে রোমহর্ষক।” আমি বলতে শুরু করলাম, “আমি যখন কলেজে পৌছলাম, বন্ধুরা জিজ্ঞাসা করলো এতোদিন কলেজে আসিনি কেন? আমি সব ঘটনা তাদের বর্ণনা করলাম। তারপর, ও! এখনো ভাবতে গেলে গায়ে কাঁটা দেয় ! এই পর্যন্ত বলে আমি একটু থামলাম।”

আমাকে থামতে দেখে রমেশ আবার বলতে শুরু করলো, “মিহির ঠিক বলেছিস, শুধু কি আত্মহত্যা বা খুণ ! এইসব অশরীরী আত্মারা তাদের অলৌকিক শক্তি বলে অনান্য প্রাণীদেরও টেনে নিয়ে আসে রেললাইনে। কত কুকুর, বিড়াল, গরু, মোষ, ছাগল এমনকি হাতি, চিতাবাঘও কাটা পড়ে। সেকি এমনি এমনি! তারাই এসব ঘটায়। না হলে ভেবে দেখ একটা বিড়াল বা কুকুর বা চিতাবাঘ কি কানে শুনতে পায় না, নাকি দেখতে পায় না, নাকি দৌড়াতে পারে না। তাও কাটা পড়ে, মারা যায়। কিভাবে?”

“শুধু কি রেল লাইন?” দীপক বলে ওঠে, “রাইটার্স বিল্ডিং সমেত অনেক পুরানো বাড়িতে আজও অনেক অস্বাভাবিক কান্ড ঘটে বলে শোনা যায়। কিছু কিছু বাড়িতে রাতে সিকিউরিটি গার্ডরাও থাকতে চায় না। ব্যাপার গুলো রহস্যে মোড়াই থেকে যায়। যুক্তিতে এর কোনো সমাধান হয় না।”

তপন সাধারনত কথা কম বলে, শোনে বেশি। সেও বলতে শুরু করলো, “আরো এক ধরনের অলৌকিক কান্ড এখনো গ্রামে গঞ্জে ঘটে বলে শোনা যায়। সেটা হলো নিশি ডাকা। ভীষণ ভয়ঙ্কর ব্যাপার। মাঝ রাতে চেনা পরিচিত কারো গলার স্বর নকল করে ডাকে। যাকে ডাকে সে মোহগ্রস্তের মত সেই ডাকের পিছু পিছু চলতে থাকে। পরের দিন সকালে কাছাকাছি কোথাও তার ডেড বডি পাওয়া যায়। ওসব গল্প এখন থাক। তোর কথাটা শেষ কর। কি যেন বলছিলি এর পরের ঘটনা আরো ভয়ঙ্কর !” শেষ কথাগুলো আমার উদ্দেশ্যে বললো।

আমি বলতে লাগলাম, “সত্যিই ভীষণ ভয়ঙ্কর ব্যাপার। শেষ অবধি শুনলে বুঝবি ভয়ঙ্কর বলতে কি বোঝায়। তোদের মন থেকে হিংস্রতার ডেফিনেশনটা পাল্টে যাবে।”

রমেশ আবার বলতে শুরু করে, “তাদের নিজেদের মধ্যেও হিংস্রতা, লড়াই, মনো মালিন্যের কথা শোনা যায়। তোরা রাণী পদ্মা আর মেঘনার প্রেতাত্মার লড়াইয়ের কথা শুনেছিসতো?”

“না তো, এ গল্পতো শুনিনি !” অবাক হয়ে উত্তর দেয় মিহির ।

“ঠিক আছে সে গল্প আর একদিন বলবো। সে এক লম্বা কাহিনী। সে কথা ছাড়। এখন তোর গল্পটা শেষ কর।” কথা শেষ করে রমেশ আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো।

“তারপর কি হলো কলেজে?” তাড়া লাগালো সঞ্জু, “তোর বন্ধুগুলো সব আসল মানুষ ছিল, নাকি তারাও এক একটা প্রেতাত্মা?”

“আগে পুরোটা শোন, তারপর প্রশ্ন করবি। তবে ওদের একটাকেও আমার মানুষ বলে মনে হয়নি।” বললাম আমি।
“সেকিরে!” ভয় বিস্ময় একাকার হয়ে যায় সঞ্জুর চোখে মুখে।

আমি আবার বলতে শুরু করলাম, “যেই আমি পুরো ঘটনাটা ওদের কাছে বর্ণনা করলাম। চারি দিক থেকে আমার উপর পড়তে লাগলো…।”

“কি, কি পড়তে লাগলো?” অত্যন্ত উদগ্রীব হয়ে ওরা সমস্বরে আমাকে প্রশ্ন করলো। তারপর একে অন্যকে থামতে বলে আবার আমাকে বলার সুযোগ করে দিলো।

বলার সুযোগ পেয়ে এক নিঃশ্বাসে আমার কথা শেষ করলাম, “চারিদিক থেকে কিল, চড়, ঘুষি আমার মাথা, পিঠের উপর পড়তে লাগলো। কতগুলো যে আমার ওপর পড়লো গোনা হয় নি। ব্যথাটা এখনো অনুভব করতে পারি। বন্ধুরাও এভাবে গন ধোলাই দিতে পারে! ওফ্! যাস্ট ভাবা যায় না! অমানুষের মত পিটিয়ে ছিল আমাকে। সেই জন্যইতো বললাম ওদের একটাকেও আমার মানুষ বলে মনে হয় নি। তবে সেদিন মনে মনে শপথ নিলাম, অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া আর কোনো দিন অকারণে মিথ্যা বলবো না। যাহা বলিবো সত্য বলিবো।”