গল্প: দরদী মেয়ে

গল্প: দরদী মেয়ে

দরদী মেয়ে
আব্দুস সাত্তার বিশ্বাস

চাকরির পরীক্ষায় বসে বসে চাকরি হয়নি উৎপলের। এ বছর সে তাই চাকরির পরীক্ষায় বসল না। সমস্ত চক্ষু লজ্জা ভুলে একটা টুকটুকি কিনবে ভাবল। না হলে যে চাকরির আশায় থাকতে গেলে তার আর চলছে না। অন্তত পকেট খরচের পয়সাটা তো করতে পারবে। তারপর যা হয় হবে। দিন গেলে তার পঞ্চাশ থেকে একশো টাকা পকেট খরচ লাগে। পকেট খরচ করবে না বললেও হয়ে যায়। বন্ধুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে। এর জন্য প্রতিদিন তার মায়ের কাছে তাকে হাত পাততে হয়। আর তার মায়ের মুখে প্রতিদিনই তাকে শুনতে হয়,’তোর জন্য আমার হাতে একটা পয়সা থাকল না, একটা পয়সা না। তুই তো জানিস, আমি কোন চাকরি করি না। করলে না হয় হাতে পয়সা কড়ি থাকত, দিতে বাধত না। তাহলে তোর জন্য রোজ রোজ এত পয়সা পাবো কোথায় শুনি! আমরা খেয়ে না খেয়ে তোকে লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছি এই কত। তারপরও যদি তোর পকেট খরচ যোগাতে হয় আমরা পারব কী করে? তোর বাবাও তো কোন চাকরি করে না যে, তার পকেট থেকে নিয়ে তোকে দেব। ভালোই তো জানিস, তোর বাবা একটা লেবার খাটা মানুষ। লেবার খেটে আর ক’টাকা রোজগার হয়? তিনশো টাকা। তাও আবার তোর পকেট খরচের জন্য তোকে রোজ একশো টাকা করে দিতে হয়। রোজ তো আর কাজ থাকেনা। এই তো একমাস থেকে বাড়িতেই চুপচাপ বসে রয়েছে। তাছাড়া আজকাল জিনিস পত্রের যা দাম তাতে সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়ছে। ভালো তরকারি ছাড়া তুই আবার ভাত খেতে পারবি না। তাহলে পয়সা কী করে থাকবে শুনি! আবার থাকত, যদি হাঁস, মুরগি পুষতে পেতাম‌। ডিম বেচতে পেতাম। তোর আর তোর বাবার জ্বালায় তো সে সবও পুষবার জো নেই। পুষলে তোরা আবার সহ‍্য করবি না। হাঁস, মুরগির পায়খানা দেখতে পারবি না। পুষলে তো ওরা পায়খানা করবেই। পয়সা তো আর এমনি এমনি আসবে না। মেয়েমানুষের হাতে ওসব পুষেই তো পয়সা আসে। যাইহোক, এই নে পঞ্চাশ টাকা। আর চাইবি না। এর চেয়ে বেশি পয়সা আমার কাছে আর নেই। যা ছিল তাই দিলাম। এখন তেল, লবণ কিনতে হবে তো পয়সা নেই। পেঁয়াজ কিনতে হবে তো পয়সা নেই। দোকানে এখন ধারে বাজার করতে যেতে হবে। আগেরই কিছু টাকা পাবে। সেটাই শোধ দেওয়া হয়নি। তারপরে আবার ধারে চাইতে যাবো কী করে সেটাই তো ভাবছি। গিয়ে যদি দেয় তো ভালো। না হলে তেল, লবণ এবং পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করতে হবে। খেলে খাবি, না খেলে না খাবি। আমার কিছু করার নেই। মেয়েমানুষের মতো তোকে আর পুষতে পারছি না। আচ্ছা, তুই ব‍্যাটা ছেলে হয়েছিলি কী করতে বল তো! পয়সা যদি রোজগারই করতে না পারবি। যা ভালো বুঝিস কর, আমাদের আর ক’দিন! তারপর একদিন ঠিক বুঝবি। বিয়ে করে সংসার যেদিন পাতবি।….’
অত:পর উৎপল ভাবনা মতো একদিন
একটা টুকটুকি কিনেই ফেলল এবং চালাতে লাগল। চালাতে চালাতে কিছু দিন চালানোর পর টুকটুকিটা বেচে দিল। কারণ, তার কলেজ লাইফের এক বান্ধবী তাকে একদিন দেখে ফেলে বলল,’কী ব‍্যাপার উৎপল, তুই! আজকাল টুকটুকি চালাচ্ছিস নাকি!’
উৎপল বলল,’না চালিয়ে কী করব বল, চাকরির পরীক্ষায় বসে বসে চাকরি হল না। তাই বাধ্য হয়েই—- কিছু না হোক, পকেট খরচের পয়সাটা তো হচ্ছে। পকেট খরচের পয়সা বলে তো আর চিন্তা করতে হচ্ছে না।’
‘টুকটুকি দেখে তো নতুন বলে মনে হচ্ছে। কেনা নিশ্চয়ই খুব বেশি দিন হয়নি?’
‘না। মাত্র কয়েক দিন হল।’
‘বাড়ি থেকে কিনে দিল? না তুই নিজে কিনলি?’
‘বাব্বা! বাড়ি থেকে টুকটুকি কিনে দেবে আমাকে! টুকটুকি কিনেছি বলে বাবা তো আমাকে ভালো করে কথাই বলে না। টুকটুকি আমি নিজে কিনেছি।’
‘তুই তো বেকার। পয়সা পেলি কোথায়?’
‘লোনে কিনেছি।’
‘লোন শোধ দিবি কী করে?’
‘টুকটুকি চালাব আর শোধ দিব।’
‘হুম, বুঝেছি।’
‘কী বুঝেছিস?’
‘তোর বাবা তোর সঙ্গে কেন ভালো করে কথা বলেন না।’
‘কেন বলে না?’
‘তুই বল।’
‘বাড়িতে না জানিয়ে টুকটুকি কিনেছি তার জন্য।’
‘শুধু তার জন্য নয়।’
‘তাহলে আর কীসের জন্য?’
‘সেটা হল, তোর বাবার তোকে নিয়ে একটা স্বপ্ন ছিল; তুই একটা ভালো চাকরি করবি। চাকরি না পেলে সমাজে পরিচয় দেওয়ার মতো কিছু করবি। সমাজে একটা মানুষের মতো মানুষ হবি। কিন্তু টুকটুকি কিনে তুই ওনার সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিস, ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিস। ওনার সমস্ত ইমেজ নষ্ট করে দিয়েছিস। আমার যতদূর মনে হয়, তাই উনি তোর সঙ্গে—-‘
‘কিন্তু চাকরির জন্য আমি তো অনেক চেষ্টা করেছি, অনেক পরীক্ষা দিয়েছি এবং পাশও করেছি। তারপরও যদি না হয় আমি কী করব?’
‘তবু টুকটুকি কেনা তোর উচিত হয়নি। কারণ কী জানিস? কারণ হল, সব মানুষের জন্য সব কাজ নয়। জীবনে দারিদ্র্য আছে বলেই যে যেকোন সময় যেকোন কাজ করে বসবি এটা একদমই ঠিক নয়, অন্তত আমার কাছে। সব কাজেরই একটা গ্রেড আছে। তুই শিক্ষিত ছেলে। তোর কাজ হবে পরিচয় দেওয়ার মতো। টুকটুকি চালানোয় কোন পরিচয় আছে আমাকে বলতে পারিস? বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হলে কী করবি? তোর লজ্জা করবে না? এক্ষুনি তো আমাকে দেখে পালাচ্ছিলি, আর লজ্জায় মরছিলি। ভেতর ভেতর তোর বাবাও কিন্তু তোকে নিয়ে এই ভাবেই লজ্জায় মরছেন, তা কি তুই জানিস? কী হল, চুপ করে রইল কেন? কথা বল।’
না, উৎপল কোন কথা বলতে পারল না।
মাথা নিচু করে সে খালি চুপ করে থাকল।
‘তুই টুকটুকিটা বেচে দে, উৎপল।’
উৎপল মাথা তুলে এবার তার মুখের দিকে তাকাল,’বেঁচে দেব!’
‘হ‍্যাঁ, টুকটুকিটা বেচে দে।’
‘কিন্তু বেচে দিয়ে কী করব? পকেট খরচের জন্য তো তাহলে আবার মায়ের কাছে—- আর মায়ের মুখ থেকে—-‘
‘ভুল বলছিস কেন?’
‘কী রকম ভুল বলছি?’
‘তোর মা তোকে কখনোই কথা শোনাতে পারেন না।’
‘তাহলে শোনায় কেন?’
‘ওটা তোকে শোনান না।’
‘তাহলে কাকে শোনায়?’
‘অন্য কাউকে। আর সেই অন্য কেউটা কে জানিস?’
‘কে?’
‘তোর জীবনের দারিদ্র্য। উনি কথা শোনান তোর জীবনের দারিদ্র্যকে, তোকে নন। হ‍্যাঁ উৎপল, হ‍্যাঁ।’
অমনি উৎপল চুপ করে গেল।
‘তাই বলছি, যত তাড়াতাড়ি পারিস টুকটুকিটা তুই বেচে দে।’
উৎপল বলল,’বেচে দিয়ে?’
‘কী করবি?’
‘হ‍্যাঁ।’
‘বলছি, তার আগে তুই বল, পার ডে তোর কত টাকা পকেট খরচ লাগে?’
উৎপল বলল,’একশো টাকা ধর।’
উৎপলের এই বান্ধবীর নাম হল মিনা। মিনা তার ঘাড় থেকে তখন দামি চামড়ার ব‍্যাগটা নামিয়ে টুকটুকির সিটে রাখল,’পকেট খরচের জন্য তুই আর কোন চিন্তা করবি না। তোর কাছে কোন ব‍্যাগ আছে?’
উৎপল বলল,’নাইলনের একটা ব‍্যাগ আছে।’
মিনা বলল,’ব‍্যাগটা কুইক দে আমায়!’
‘কী করবি?’
‘দরকার আছে।’
উৎপল তখন তার বসা সিটটা তুলে ব‍্যাগটা বের করে মিনার হাতে দিল,’নে।’
মিনা ব‍্যাগটা হাতে নিয়ে তার ব‍্যাগটা উপুড় করে ঢেলে দিল,’ব‍্যাগটা তুই এবার সিটের তলায় ভরে ফেল, উৎপল।’
মিনার কথা মতো উৎপল তাই করল, ব‍্যাগটা সিটের তলায় ভরে ফেলল। ফেলে জিজ্ঞেস করল,’ব‍্যাগে কী আছে?’
মিনা বলল,’লাখ খানেক টাকা আছে। বাবা আমাকে ব‍্যাঙ্কে ডিপোজিট করতে দিল।’
‘তো ব‍্যাঙ্কে যা, ডিপোজিট করে আয়। আমার কাছে রাখছিস কেন?’ উৎপল বলল।
মিনা বলল,’তোর কাছেই থাক, ব‍্যাঙ্কে আর যাচ্ছি না।’
উৎপল শুনে অবাক হল,’যাচ্ছিস না মানে!’
‘মানে টাকা গুলো আমি তোকে দিলাম। তুই পকেট খরচ করবি।’
‘যা, তাই কখনো হয় নাকি? এত গুলো টাকা! তোর বাবা তোকে বকবেন না!’
মিনা তার উত্তরে বলল,’না, বকবে না। বাবা আমাকে কিচ্ছু বলবে না। বাড়ি গিয়ে শুধু বলে দেব যে, রাস্তায়— ব‍্যস, আর কিচ্ছু বলবে না। বরং আমাকে আদর করে জানতে চাইবে, আমার কিছু হয়নি তো?’
উৎপল বলল,’তুই বাবার একমাত্র মেয়ে ঠিকই। কিন্তু তাই বলে—মনে উনি কষ্ট পাবেন না?’
মিনা বলল,’এ টাকা বাবার কাছে খুবই সামান্য টাকা। সামান্য টাকার জন্য বাবা কষ্ট পাবে না।’
উৎপল তখন মিনাকে বলল,’আমার জন্য তুই এতখানি মিথ্যা কথা বলবি!’
মিনা উৎপলের হাত দুটো চেপে ধরে এবার বলল,’টুকটুকিটা তুই বেঁচে দে উৎপল, তোর মতো একটা ব্রিলিয়ান্ট ছেলে টুকটুকি চালাচ্ছিস, দেখে আমার কী যে কষ্ট হচ্ছে!’
উৎপল বলল,’এ কী মিনা, তুই কাঁদছিস!’
মিনা অমনি তার চোখ দুটো রগড়ে নিয়ে বলল,’টুকটুকিটা তুই বেচবি তো উৎপল, টুকটুকিটা তুই বেচবি তো!
উৎপল বলল,’বেচব।’
মিনা বলল,’প্রমিস?”
‘প্রমিস।’
মিনার লাল টুকটুকে ঠোঁটের আগায় তখন অমনি হাসি খেলে গেল এবং বলল,’দু’হাত ভরে তুই পকেট খরচ করবি। এর জন্য আমি তোকে কিচ্ছু বলব না। প্রয়োজনে আমি তোকে আরও টাকা দেব, আরও। বিনিময়ে তুই শুধু আমার একটা কথা রাখবি। হ‍্যাঁ, শুধু একটা কথা।’
উৎপল জানতে চাইল,’বল, কী কথা?’
মিনা বলল,’তোকে আবার চাকরির পরীক্ষায় বসতে হবে। তোকে আমার এই ছোট্ট কথাটা রাখতে হবে। বল, তুই আমার এই ছোট্ট কথাটা রাখবি!’
উৎপল বলল,’আবার তুই আমাকে— না না, আমি আর চাকরির পরীক্ষায় বসব না। বসে বসে অনেক দেখেছি, হয়নি। এবারও হবেনা। তাই, আমি আর চাকরির স্বপ্ন দেখি না। স্বপ্ন দেখে দেখে স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দিয়েছি। তুই আমাকে আর নতুন করে স্বপ্ন দেখতে বলিস না মিনা, নতুন করে স্বপ্ন দেখতে বলিস না। আমি তোর টাকা চাই না। নিয়ে যা তোর টাকা। আমি টুকটুকি চালাচ্ছি টুকটুকিই চালাব। হ‍্যাঁ, টুকটুকিই চালাব।’
মিনা উৎপলকে বোঝানোর চেষ্টা করল,’সব সময় মাথা গরম করলে হয়না বুঝলি! আমার কথাটা তুই আগে ভালো করে শোন, একবার বোঝার চেষ্টা কর। তারপর যা বলার বলিস।’ বলে বলল,’রাগের বশবর্তী হয়ে কোন যুদ্ধ জেতা যায় না। ঠাণ্ডা মাথায় যুদ্ধ চালিয়ে গিয়ে লড়াইতে জিততে হয়। ধরে নে, এবার তুই জীবনের সবচেয়ে বড় যুদ্ধে নামবি। ধরে নে, আগের গুলো তোর কাছে কোন বড় যুদ্ধ ছিল না। ছিল যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা মাত্র।’
মিনার অকাট্য যুক্তি উৎপল এড়াতে পারল না। কথা গুলো সে দাঁড়িয়ে শুনল। তারপর বলল,’তুই বলছিস তাই, হবেনা। কারণ কী জানিস, টাকা ছাড়া আজকাল চাকরি হয় না। টাকার জোরে একটা কমা ছেলেরও ভালো চাকরি হয়ে যায়। আর একটা ভালো ছেলের কমা চাকরিও হয় না।…’ বলতে বলতে উৎপল গলার স্বর সপ্তমে তুলে বলল,’আমি চ‍্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, যারা চাকরি পাচ্ছে তারা আমার থেকে কেউ খুব ভালো ছাত্র নয়। না হলে বিমল মাস্টারের ছেলে মদনের চাকরি হয়? যে কিনা মাধ‍্যমিকে তিনবার ফেল…’
মিনা বলল,’আমি সেটা জানি তো। আর জানি বলেই তো আমি তোকে আবার—- তবে এবার তুই আর মাস্টারের চাকরি পরীক্ষায় বসবি না। তুই এবার এমন একটা চাকরির পরীক্ষায় বসবি যেখানে কোন টাকা লাগেনা, কোন ঘুষ লাগেনা। লাগে শুধু মেধার জোর। মেধার জোর থাকলে এ চাকরি আপনিই হয়। কী চাকরি নিশ্চয়ই তুই সেটা অনুমান করতে পেরেছিস? হ‍্যাঁ, আই এ এস চাকরি। তুই এবার আই এ এস চাকরির পরীক্ষায় বসবি। পাশ করতে পারলেই হয়ে যাবি আই এ এস অফিসার। একটা আই এ এস অফিসারের কী দাম বল! আমার বিশ্বাস, তুই পরীক্ষায় বসলেই তোর হয়ে যাবে। তোর যা মেধা আছে তোকে টপকে যাবে এমন কোন বাপের বেটা নেই। হ‍্যাঁ উৎপল, হ‍্যাঁ।…’
উৎপল বলল,’হবে বলছিস!’
মিনা উৎপলকে সাহস দিল,’হবে।’
‘তোর কথায় তাহলে আমি পরীক্ষায় বসব। আর হ‍্যাঁ, যদি হয়ে যায় আমি তোকে কোনদিন ভুলব না, কোনদিন না। তুই আমার হৃদয় মন্দিরে চিরকাল অধিষ্ঠিত হয়ে থাকবি।’
মিনা বলল,’ওসব কথা এখন থাক, পরে হবে।’
উৎপল এরপর টুকটুকিটা বেচে দিল। কিছু টাকা তাতে তার লস হল। এর জন্য বন্ধু মহলে সে চরমভাবে সমালোচিত হল যে, উৎপল একটা রাবিশ ছেলে। না হলে নতুন টুকটুকি কিনে কেউ লসে বেচে দেয়! আজকাল টুকটুকি চালিয়ে কত মানুষ কত টাকা রোজগার করছে! আর সে সেই রোজগারের জিনিসটাই চালাতে পারল না, বেচে দিল। তাহলে সে খাবে কী করে? অমন ছেলের হাতে জীবনে কেউ কোনদিন মেয়ে দেবেনা। শেষে মেয়েটাকেই যদি— ভাগ্য ভালো যে, মা-বাপ ভালো পেয়েছিল। অন্য মা-বাপের পাল্লায় পড়লে কবেই ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিত।
উৎপল যে আবার চাকরির পরীক্ষায় বসবে সে কথা সে আর কাউকে জানাল না। কেবল তার মা-বাবাকেই জানাল। উৎপলের মা-বাবা তখন উৎপলের জন্য ঠাকুরের কাছে হাত তুলে প্রার্থনা করল,’ঠাকুর! আমাদের উৎপলের দিকে তুমি একবার তাকাও, ঠাকুর! আমাদের উৎপলকে তুমি বড় করো ঠাকুর, অনেক অনেক বড় করো।…’
উৎপল বন্ধুদের সঙ্গে এরপর আস্তে আস্তে বেড়ানো কমে দিল। আই এ এস পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করে দিল। দিন রাত এক করে সে শুধু পড়ল আর পড়ল। তারপর একদিন পরীক্ষায় বসল। উৎপল সেই পরীক্ষায় পাশ করল এবং প্রথম স্থান অধিকার করে দেশের সমস্ত কাগজ ও চ‍্যানেলের শিরোনামে চলে এল। সারা দেশ তাকে জেনে গেল। আর তার বন্ধুরা তার এই সাফল্যে সবাই স্তম্ভিত হয়ে গেল। এ কী! এটা কী করে হল! উৎপলের মা-বাবাও কেঁদে ফেলল। শুভেচ্ছা জানাতে মিনা ছুটে এল। উৎপল ও মিনার চোখ দুটো এখন কী চিকচিক করছে! মিনার মতো দরদী মেয়ে হয়না, দরদী মেয়ে!