আশরাফ হাসানের কবিতা

আগুনশৃঙ্খল ও গোলাপের
গোলাবারুদ
পৃথিবীকে আবারও কেউ যদি ধুয়ে দিতো গোলাপজলে
আগরের নিঃশ্বাসে ভরে দিতো বাতাসের পাঁজর
ফুলের দুর্বৃত্ত ঠেকাতে এই হাতে তুলে দিতো গোলাপের গোলাবারুদ
বিশ্বাস করো আমি ফুলের পেখমে লুকিয়ে থাকা
সাপের ওম জ্বালিয়ে দিতাম
ক্যামিকেল দূষণের সকল ট্রানজিটে ঝুলিয়ে দিতাম
রেড সিগন্যাল
বুভূক্ষু বন্দরে পাঠাতাম চিরহরিৎ জাহাজ
ভালোবাসার স্বাসকষ্টে যারা আজ ঘরে গড়েছে হাসপাতাল
বিশ্বাস করো আমি তাদের মুক্তি দিতাম হ্নদয়পণের বিনিময়ে।
পৃথিবীকে যদি কেউ জীবাণুহীন অক্সিজেনে সঞ্জীবিত করতো
পাখিদের কোরাস থামিয়ে দেওয়ার স্পর্ধাকে ভেঙ্গে দিতো
জলদস্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারতো নদীর যৌবন
বৃক্ষের অজর শাখাগুলো দুলিয়ে দিতো হাওয়ায়
বিশ্বাস করো আমি মানুষের আবাস থেকে
বানরের লম্ফঝম্ফ ঝুলিয়ে রাখতাম ইতিহাসের পাঠকক্ষে
দূরাগত চাঁদের খানাখন্দক ভরে দিতাম মৃত্তিকার জৈব সারে
বেদনার সকল উপত্যকায় নির্মাণ করতাম আবাসিক হ্নদয়।
আমার পৃথিবীর নিরপরাধ দুই হাতে আজ যারা
পরিয়েছে আগুনের শৃঙ্খল
বিশ্বাস করো
আমি ওদের অক্ষরগ্ঞানের বিনিময়ে মুক্তি দিতাম
মূর্খদের অজস্র জনপদে।
তুষারের ঝড়
ইচ্ছেডানার মতো যে শাদা তুষার ঝরে
ছিন্ন ফুলের মতো যে বাঁধন ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ে
কোনোদিন দেখা হলে তারে তুলে দিয়ো এই পত্র-হিমাদ্রি
শিশিরের ঘোরলাগা বিন্দুবিন্দু জলে
হিম-সওয়া চাদরের নিচে স্থিতবিষাদ যে জীবন
অজস্র সামুদ্রিক ঝড়ের উন্মত্ত গতি
যেখানে মিশেছে আকাশের উন্মুক্ত লেনে
কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়ার মতো জীবন থেকে হারিয়ে গেছে সূর্য-উঠোন
কোনোদিন তারে দেখা হলে খুলে দিয়ো বাঁধন
বক্ষ পাঁজর
শুনিয়ে দিয়ো কবিতা নির্জর।
যেখানে টিউলিপ ডেফোডিল হদয়বন্দর ছেড়েছে
অনেক আগে
রোদের ঠোঁট থেকে খসে গেছে গোলাপ-বিকেল
বিমর্ষ রাতের মতো পেঁচার ভীবিবহ অক্ষিগোলক
গাছেদের কান্না বুকে শুয়ে থাকে বরফনগর
সেখানে কোনোদিন তারে দেখা হলে
শুনিয়ে যেয়ো তুষারের ধ্বনি, ভাঙ্গা পাপড়ির গোঙানি।
ক্ষুধার্ত সীগালের চীৎকারের ন্যায়
যে জীবন ঘিরে আছে ডাইনী ও দস্যূদের উৎপাত
কোনোদিন দেখা হলে তারে খানিক বসতে দিয়ো
রোদেলা গ্রামে
ছায়াবীথি-হ্নদয় মেলে দেখে নিয়ো তুষারের ঝড়।