আনোয়ার রশীদ সাগরের কবিতা

আনোয়ার রশীদ সাগরের কবিতা

বিভক্তি

মেঘটা উঠে এসে ঢেকে দেয় চাঁদের আলো।
তাকিয়ে দেখি-
হারিয়ে গেছে সোনালি আলোর ঝলকানি
ফুরিয়ে গেছে বাঁশির সুর
পুজা-প্রীতি,ঈদ-উল্লাস,প্রতিবেশি-প্রদ্বীপ;
চতুর্দিকে নিকস অন্ধকার।
খানকা-ঘরের বারান্দার সিন্নি বিলি
রশনা’বুর বিয়ের গেট, সারি-সারি দুটো পোঁতা কলাগাছ-বন্ধন।

পোয়ালগাদার আড়ালের লুকোচুরি
ইন্দ্রাণীর ঠোঁটের উষ্ণ ওম,ভেজা পিঠার রস;
পাটজাগের কষ্টে পাওয়া বিরক্তভরা মিষ্টিসুখের গন্ধ,
হারিয়ে গেছে গোছা-গোছা হাতভরা চড়ুই পাখির দোল।
অহর্নিশ অন্ধকার
অদৃশ্য অক্টোপাস ফতোয়াবাজের ছায়া
ছিন্ন করে,ভেঙে দেয় সম্প্রীতির বসবাস।

শব্দহীন বাক্য

হরিণীর সোনালি ছায়া রোদ্দুরমাখা স্নানের ঘাটে এসে দাঁড়ায়।
বাঁধভাঙা চোখের ঢেউ-
কবিতার পুঙক্তি খুঁজি উনুনে জ্বলে-জ্বলে
বুনো হাঁস সাঁতার কাটে নদীর জলে জলে
অজস্র অভিমান জেগে-জেগে খোঁজে নির্জনতা।
রঙ ও রমণীর ডানা নিঃসঙ্গতায়, নিস্তব্ধতায় এবং নিমগ্নতায় নিমজ্জিত হয় অভিসারে,
নিসর্গের নির্মলতায় নারী ও নারকীয় প্রেম পতাকা উড়ায় তুষের
কবিতা কী শুধু তোমারই জন্য
এসেছিল অনুচ্চারিত শব্দের গাঁথুনিতে!

মানুষ

রঙ মাখানো মেঘগুলো উড়ে উড়ে যায়।
চেয়ে চেয়ে চাহনিটায় দেখে দেখে
ভেঙে দেয়-ভেঙে ফেলে সকল অঙ্গিকার।
নীল আকাশের কোলে চাঁদ ঝলমল হাসি
ছড়িয়ে দেয় দিকে দিকে ঝর্ণাধারা,
নিঙড়িয়ে নোঙর ফেলে বুকের গহীণে
তৃষ্ণা কাতর ফোয়ারা রেখে যায় রাতভর,
শিয়রে ভাঙে স্মৃতির মিনার, নেমে আসে নিমিষেই
কম্পনময় বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞান।

জলপরী নয়,রাত যেন যৌবনের পুঁথিঘর-
নগ্নতায় ও কৌষ্ঠ কাঠিন্যতায় নেড়েচেড়ে ভেঙে দেয়
ভাঙিয়ে দেয় মরুক্ষুধার আকাশ।
ছিন্ন করে-ভিন্নধাঁচে, ভিনগ্রহের প্রাণি যেন,
অঙ্গীকার অবিকল যৌনদাসের কাছে হেরে যায়
জাগরণের সব অভিমান।
আজব এক রক্তলোলুভ প্রাণির নাম হোমোস্যাপিয়েন্স-
প্রতারক-প্রতারণায় শ্রেষ্ঠ,শ্রেষ্ঠ যৌনক্ষুধায়;
সব লেনা-দেনা ভেঙে ফেলে, প্রাণিকুলের কলঙ্কময় অধ্যায়,মস্তিস্কও যুদ্ধময়, স্বার্থের কাছেই শুধু তার পরাজয়।