অনিন্দিতা মন্ডলের কবিতা

সম্পর্ক
আমি আর আমার স্বামী এক বারান্দায় বসে চা খাই, চেয়ার বারান্দা রেলিং রাস্তা সব একই আছে ;
শুধু আমিই বদলে বদলে যাই।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে
আমার স্বামী সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে …
পাশে বসা অচেনা মানুষের উপস্থিতি টের পায় না।
দেওয়াল
কম্পানি দায়িত্ব নিয়ে জানিয়েছে,
এই দেওয়ালটা আর ঝামেলা করবে না।
আগের দেওয়ালটা ভীষণ একরোখা জেদী ছিল, সরালে একটুও সরত না ;
বাধ্য হয়ে ওকে ভেঙে দিয়েছি,
এবার বাধ্য দেওয়াল আসছে।
যতদূর ইচ্ছে সরিয়ে বাড়িয়ে নেব আমার পরিসর।
ছোরা
ছোরাটা পূর্বপুরুষের, এখন ওটা আমার।
কাগজ কাটা ফল কাটা থেকে
পেঁয়াজ কুঁচি করা, সব হয়।
সেদিন অবশ্য আমার স্ত্রী একটু চমকে উঠেছিল – কুমড়ো ফাঁসানো হলে কুমড়োর গায়ে রক্ত
ওর ভালো লাগেনি।
কিন্তু তাই বলে তো আর
বংশের সম্পদ হাতছাড়া করা চলে না।
টেবিল
টেবিল গোল হলেই ভালো,
মাথায় বসে হুকুম দেবার কেউ থাকে না –
এসব ভাবনার মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে এক উর্দিধারী। ভেতরে ডাক পড়েছে,
ঢুকে দেখি বিরাট গোল টেবিল ঘিরে অসংখ্য চেয়ার, গম্ভীর মুখে কর্তারা বসে।
আমার দাঁড়িয়ে থাকাই রীতি।
মনে পড়ল, এখানে সকলেই হুজুর।
আয়না
আমাদের ছোটবেলায়
বাড়িতে অনেকগুলো আয়না ছিল,
সেই সব আয়নায় আমরা
অনবরত মুখ দেখতে পেতাম।
চলতে ফিরতে খেলতে খেলতে
আয়নার সামনে দিয়ে চলে যেতাম,
দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখার কথা মনে হত না।
সেই আয়নাগুলো আর নেই।
এখন যা আছে –
তাতে আমি নিজেকে ঠিক দেখতে পাই না,
এপার ওপার !