অণুগল্প: রূপকথার সংসার

অণুগল্প: রূপকথার সংসার

রূপকথার সংসার
শর্মিলা ঘোষ

টুক করে হাতের কাজটা সেরে অনামিকা চাকরির অ্যাপ্লিকেশনগুলো পাঠিয়ে দেয়।
সন্ধের পর রমেশ অফিস থেকে ফেরে।অনামিকা চা, জলখাবার সব গুছিয়ে রেখেছে টেবিলে।তাও রমেশ চিৎকার করছে,এই এক স্বভাব ছয় বছর ধরে
অনামিকা দেখছে।আজ আর টেবিলের কাছে যায় না সে, আলমারিটা গুছাচ্ছে।ময়ূরকন্ঠী টিসু বেনারসীটা হাতে নিয়ে প্রথম বিবাহ বার্ষিকীর কথা মনে পড়ে।স্বপ্নগুলো কত নিবিড়,কত সুন্দর ছিল।
সপাটে চড় গালে পড়তেই অনামিকা সম্বিৎ ফিরে পায়।
রমেশের মারধোর নিত্য নৈমিত্তিক ব্যপার। সন্তান না হবার দায়টা যে তার সেটা মেনে নিতে তার পৌরষে বাধে।
অনামিকা মার গুলো হজম করে আজকাল। ছোটোবেলায় স্কুলের রুটিন যেমন সত্য , তার বৈবাহিক জীবনে মার খাওয়াও তেমন সত্য এবং রুটিন মাফিক।
একমাস পর চাকরির ইন্টারভিউ এর একটা চিঠি আসে।অনামিকা ইন্টারভিউ দেওয়ার পুরষ্কার স্বরুপ কিছু সিগারেটের ছ্যাঁকার চিহ্ন শরীরে ধারণ করে।
চাকরিটা হয়ে গেছে, চিঠিটা পেয়েই অনামিকা সুটকেস গুছিয়ে নেয়…
আগে দক্ষিণ ২৪ পরগণা এসপি’র সাথে দেখা করে স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়,তারপর মেয়েদের মেসে এসে ওঠে।বাপের বাড়ির একটু মানিয়ে নে মা , সোনার সংসারটা ভেঙে দিসনি মা, এই গল্পগুলো ঠাকুরমা’র ঝুলির রূপকথার মতো শোনায়।
দুদিন পরেই মেয়েদের মেসে এসে ঝামেলা পাকানো ও বধূ নির্যাতনের অপরাধে রমেশ অ্যারেস্ট হয়।

অনামিকার পোড়া ঘা গুলো শুকোচ্ছে আস্তে আস্তে…
সে দাগ মেলানোর মলম লাগায় ক্ষতে।