অণুগল্প: চাতকপাখি

চাতকপাখি
তনিমা সাহা
রিতম দূর্ধর্ষ কত্থক-নৃত্যশিল্পী। রিতমের এরমধ্যেই রাজ্যস্থরে, জাতীয়স্থরে অনেক পুরস্কার জেতা হয়ে গেছে। পিহু রিতমের খুব ভাল বন্ধু। রিতমের একটাও প্রোগ্রাম সে মিস করে না। একবার তো টিকিট কিনতে পারেনি বলে পাঁচিল টপকে টাউনহলে ঢুকতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে পা-ও ভেঙেছিল। রিতম অবশ্য জেনেছে যে, ক্যারাটে প্রাকটিস করতে গিয়ে পা’ভেঙেছে। রিতম জানেই না যে পিহু রিতমের প্রতিটা অনুষ্ঠান দেখে। পিহুই জানতে দিতে চায়নি। পাছে রিতম যদি তার মনের ভাবটা ধরে ফেলে তার থেকে দূরে চলে যায়।
স্বভাবলাজুক রিতম তেমনভাবে কারোর সাথে মিশতে পারে না। কিন্তু পিহুর সঙ্গে ব্যাপারটাই আলাদা। ভীষণ ভাল লাগে পিহুর সাথে সময় কাটাতে। পিহু যখন কথা বলে তখন রিতমের মনে সমস্ত সংসার যেন সুরেলা-সংগীত গাইছে। রিতমের মনে কদিন ধরেই এক অদ্ভূত ভাললাগা জন্মেছে পিহুর জন্য। কিন্তু পিহুকে সেকথা জানায় না, পাছে তাদের বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়ে যায়।
পিহুরও রিতমের জন্য একটা স্পেশাল ফিলিং আছে…ভীষণ স্পেশাল। টিভি-সিরিরালে দেখেছে মেয়েগুলো কেমন ন্যাকামি করে চোখের জলের পুকুর নিয়ে ‘ভালবাসি…ভালবাসি’ বলতে থাকে। পিহুর ওসব পোষায় না। রিতমকে তো সে ভালবাসেই…
শুধু রিতম কথাটা জানেনা।
রিতম আজ প্রথমবার তার নৃত্যগুরু পদ্মনাভ-গুরুজীর সাথে নৃত্য পরিবেশন করবে। পিহুকেও বলেছে আজ তার অনুষ্ঠান দেখতে আসার জন্য। অবশ্য পিহু কোন না কোনভাবে টিকিট ম্যানেজ করে যেতই। রিতম যখন আমন্ত্রণ দিল অনুষ্ঠানে যেতে মুখে একটা ‘যাবে কী যাবে না’ ভাব থাকলেও মনেমনে প্রচণ্ড খুশি হয়েছিল।
পিহু ভেবেছে, অনুষ্ঠান শেষে তার ডাইরিটা রিতমকে দেবে। পিহুর ডাইরি ‘চাতকপাখি’তে সব লেখা আছে…তার প্রতিটি ভাললাগা-খারাপলাগা, রিতমের সাথে প্রথম পরিচয়-ভালবাসা…সব লেখা আছে। আজ অনুষ্ঠান-শেষে ওটা রিতমের হাতে তুলে দেবে। তারপর রিতম যা ভাল বুঝবে করবে!
অনুষ্ঠানের পর ঢিপঢিপ বুকে ডাইরিটা হাতে নিয়ে রিতমের কাছে গিয়ে দেখে সে একটি মেয়ের সাথে খুব গল্প করছে। ব্যস রাগে দিগ্বিদিক শূণ্য হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে অ্যাক্সিডন্ট করল।
তিনদিন পর পিহু চোখ খুলে দেখে রিতমের একটা হাতে তার হাতের ওপর আর আরেক হাতে ‘চাতকপাখি’। রিতমকে দেখে পিহু হঠাৎই ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। রিতমের চোখেও জল। সে পিহুর চোখের জল মুছিয়ে কানেকানে বলে, ‘পাগলী একটা!’