অণুগল্প : অর্ধ সত্য

অণুগল্প : অর্ধ সত্য

অর্ধ সত্য
পীযূষ কান্তি সরকার

বিখ্যাত কনস্ট্রাকশন কোম্পানি ‘কিউসিএল’ – এর অবস্থা আগের মতো নেই। বছর দুই ইনক্রিমেণ্ট বন্ধ। কিছু স্পেশাল স্টপেজ- এ বাস পাঠিয়ে স্টাফদের যাওয়া-আসার ব্যবস্থা কোম্পানিই করতো, এখন তাও বন্ধ। তবে তার বদলে লাঞ্চটা সবাই ফ্রি পায়। সোম থেকে শুক্র। পাঁচদিনের মধ্যে প্রতি মঙ্গলবার রান্নার সব পদ- ই নিরামিষ। কোনোদিন একবাটি মটর-পনীর, কোনদিন দু-পিস্ মটরডালের ধোঁকা আবার কোনো মঙ্গলবার দু-পিস্ পোস্তর বড়ার ঝাল। সঙ্গে একশো গ্রাম টক বা মিষ্টি দই, যার যেমন পছন্দ।
সেদিন ক্যাণ্টিনে পোস্তর বড়ার ঝাল মেখে ভাত খেতে খেতে সম্বিত বলে উঠল, ” দ্যাখ্ দ্যাখ্ আজ পোস্তর বড়ায় সুজি মিশিয়ে দিয়েছে রে ! খাওয়ার দফা-রফা !”
অন্যরা সমর্থন করলেও অর্ক বলে উঠল, ” আরে না না সুজি নয়, সাদা তিল বেটে মিশিয়ে দিয়েছে। সুজি মেশালে হড়হড়ে হয়ে যেত।”
সম্বিত পাল্টা চাল দেয়, “তাই নাকি ! তোর তো বেশ অভিজ্ঞতা আছে দেখছি !”
— আসলে মা মাঝে মাঝে সাদা তিল বেটে চালগুঁড়ির সঙ্গে মিশিয়ে মুচমুচে বড়া বানিয়ে দেয়। খেতে তো ভালোই লাগে। তাই তার টেষ্ট বুঝি !”
“ওফ্ তাই বল !” খাওয়ায় মন দেয় সম্বিত। অন্যরাও।
পূর্ণ সত্যটা তো সবার সামনে বলা যায় না। অর্কও তাই বলেনি। তার ঠাকুরমা যতদিন বেঁচেছিলেন এক-সংসারেই খাওয়া-দাওয়া হত। অর্ক-র জ্যাঠামশাই পুরো বাজার-দোকানের ভার নিয়েছিলেন, তার সিংহভাগই ছিল জ্যাঠাইমার দখলে।তখন পোস্ত এতো দামি ছিল না। দেড়শো গ্রাম পোস্ত শিলে বাটা হত। তার অর্ধেক জ্যাঠাইমা ঘরে নিয়ে গিয়ে ছেলেমেয়ে আর নিজেদের জন্য রেখে দিতেন। তারপর সাদা তিল বেটে বাকি পোস্তবাটার সঙ্গে মিশিয়ে বড়া তৈরি হত। সেই বড়ার ঝাল বাকি সকলের জন্য বরাদ্দ ছিল।
ছোটোবেলায় বাবাকে হারানো বড়ো যন্ত্রণার।বিনাপ্রশ্নে সবকিছুই সহ্য করতে শিখে গিয়েছিল অর্ক।