দিলারা হাফিজের কবিতা

দিলারা হাফিজের কবিতা

আমাদের মায়েরা

বঙ্গ দেশের এ মায়েরা মানুষ নয়,নারী নয়,
হৃদয় উজার করা এক মানবিক আইডিয়া
প্রাণস্পর্শে,নিবেদনে,নিত্য শোনা এক শ্রুতিকাব্য…

সে যে কখনো হৃদয় হরণ করা কারু প্রেমিকা ছিলো,
ভুলে যায়,
বুকভরা মধু নিয়ে একদা ছিলো শয্যায় প্রার্থিত বধূ,
ভুলে যায়,
কিংবা ছিলো তো পিতার বুকে আদরের দুহিতা-কন্যা,
ভুলে যায়
বোন-ভাই-বন্ধু কিংবা খালা-মাসি—
মধুর এই নিগূঢ় সম্পর্কের গায়ে বেমালুম সে
এক হাঁড়ি কাদা-জল ঢেলে দেয় অনায়াসে,
হলুদ পাতার মতো তারা হারিয়ে যায় কোনো দূরদেশে—-

সন্তান ভূমিষ্ঠকালে মাকে ছাড়া মনে পড়ে না কোনো মুখ।

মুহূর্তেই প্রসব কাতর সে যজ্ঞ-সেনানী
জননীর সাজ-সজ্জায় সজ্জিত মা
আভূমিনত হয়ে সন্তানের মুখে রাখে মুখ
ত্বকের স্পর্শ মাত্র সর্বংসহা ধরিত্রীর মতো
ছায়া হয়ে ওড়ে তার মাথার’পরে
মুখে তুলে দেয় আপন দুগ্ধস্রোত
এবার সে জন্মভূমি স্বর্গাদপি গরিয়সী বটে।

সংসারে শতভাগ মা হতেই যেন সে জন্মেছে এদেশে
মাতৃত্ব রসে ভারানত ঝলমলেএক কাজলা নদী…

সন্তানের হাত ধরে ডে-কেয়ারে যায় প্রথম বছর
স্বরধ্বণি ও ব্যঞ্জন বর্ণের সাঁকো পার হলে
স্কুলেও মা তার বন্ধু ও সহপাঠী বটে,
নতুন রাইমস,ছড়া আর সংখ্যা শেখে দু’জনে মিলে
ধারাপাতের পাতা থেকে—নামতা,
পাটিগণিত,অ্যালজেবরার সূত্র—-
কিছুই কি বাকী থাকে আর?

সন্তানের শৈশব জড়িয়ে এ যেন মায়ের দ্বিতীয় জন্ম,
‘একমেবা দ্বিতীয়াম’।
তিনি এক,একক—যার কোন দ্বিতীয় নেই!