গোলাম কিবরিয়া পিনু’র কবিতা

গোলাম কিবরিয়া পিনু’র কবিতা

ভৌতিক অবস্থা

ও ভূত তুমি তো তুতগাছে ছিলে?
এখন কোথায়!
সংসদ ভবনের আমগাছেও
গণভবনের পাইনগাছেও
আদালতের বটগাছেও
সচিবালয়ের নারকেলগাছেও
হাসপাতালের চালতাগাছেও
কলকারখানার গেঁউয়াগাছেও
পার্কের ফুলগাছেও
মাঠের শিমুলগাছেও
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেয়ার ঝোপেও!
কী বলছো তুমি? সবখানে!
তুমি পাকিস্তানের সেই বাইশ পরিবারের ভূত-আত্মা!
এখন পাকিস্তান আমলের চেয়ে–আরও বেশি নিরাপদ,
এই বাংলাদেশে—কত রকমের বেশে!
সেই বাতিল আত্মা পাতিল ভরা–
দ্রুত ডিম ফুটছে–আরও দ্রুত বাচ্চা হচ্ছে!
ছড়িয়ে পড়ছে কোথায় না!
জন্মনিয়ন্ত্রণ নেই–
যারা ভূতের জন্মনিয়ন্ত্রণ করবে
তারা আজ ভূতগ্রস্ত!
তারাও হয়ে পড়ছে কবন্ধ ও পেঁচো—
মামদো ভূতের চেলা!
জন্মনিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সকলেই–
ভূতের সাথেই সজনেতলায় চোরপুলিশ খেলায় মেতে উঠছে,
জন্মনিয়ন্ত্রণ-সামগ্রী হাতে তুলে নিতে ভুলে যাচ্ছে, লজ্জা করছে!

আমার কবিতা পৌঁছানোর আগে

তাদের কাছে আমার কবিতা পৌঁছানোর আগে
তোমার কাছে আমার কবিতা পৌঁছানো জরুরি
–হে স্বদেশ!
তার পর পৌঁছে যাক যেখানে খুশি!

আমি তো বিচ্ছিন্ন থাকিনি কখনো তোমার কাছ থেকে
দূরবর্তী গিয়ে–গোলকধাঁধায় পড়ে;
কোনো পথভ্রান্ত খরগোশের মতন বাসভূমি
হারিয়ে ফেলেনি!
আমি সেই ডেঁয়োপিঁপড়ে নই–
লকলকে গাছের লতায় উঠে পড়ে
পদ্মপুকুরের পদ্মফুলে ঝাঁপিয়ে পড়ার লোভে
জলের ভেতর হারিয়ে যাইনি!

আমার কবিতা তো–তোমার মৃত্তিকার
পলিমাটি, এঁটেল ও বেলেমাটি দিয়ে তৈরী,
ত্রসরেণু ও কাদামাখা!

আমার কবিতা তো–তোমার উদ্ভিদের
ফল ও ফুল দিয়ে তৈরী,
শজিনাডাঁটায় দোলে।

আমার কবিতা তো–তোমার নদীর
কল্লোল ও জলতরঙ্গে তৈরী,
ও তরঙ্গবিক্ষুব্ধ।

আমার কবিতা তো–তোমার সময়
ও অভিঘাতে তৈরী,
সুখ-দুঃখ ও কান্নায় স্পর্শমান।

আমার কবিতা তো–তোমার দিগন্তে
তাকানোর স্পর্ধা দিয়ে তৈরী,
ও গগনপ্রান্ত নিয়ে উঁচু।

আমি তো তোমাকে নিয়ে উদাসীন থাকিনি
তোমার কালজ্ঞ কাল নিয়েও,
আমি ছন্নছাড়া ও নিস্পৃহ থেকে
আত্মরতিতে হারিয়ে ফেলেনি তোমাকে!

তুমি ও তোমার মানুষ
আমার কবিতার উচ্চারণে সক্রিয় থেকেছে।
আমি তো তোমাকে ছাড়া
আর কিছুকেই এত গভীরভাবে ভালোবাসিনি!

তুমিই আমার মূলভূমি হয়ে বেঁচে আছো–
তোমার ভেতর দিয়েই–অন্যসব ভূগোল দেখেছি
আমি তো তোমাকে আবিষ্কার করার মধ্যে দিয়ে
অন্যকে আবিষ্কার করা শিখেছি!

আমার কবিতা তাদের কাছে যাওয়ার আগে
তোমার কাছে পৌঁছাতে চায়!

আত্মঘাতী

একটু দাঁড়ান—আমিও দাঁড়াচ্ছি!
একটি শোনেন—আমিও শুনছি!
একটু দেখেন—আমিও দেখছি!

ওরা কারা?
কান্না বোঝে না!
দুঃখ বোঝে না!
কষ্ট বোঝে না!
যন্ত্রণা বাড়িয়ে— শোকগাথা বাড়িয়ে
মানুষকে রাখছে না নিরাপদ!
রক্ত ছাড়া লিখতে পারে না কোনো ক্রিয়াপদ!

আত্মঘাতী হয়ে—
নিজের দেশের নিরাপরাধ মানুষকে মারছে,
নিরীহ শিশু, নারী ও পথচারী
নামাজে থাকা মুসল্লি
হাসপাতালের রোগীও রেহাই পাচ্ছে না,
অন্য দেশে গিয়ে মন্দিরে, গির্জায় ও প্যাগোডায়
বিপনিবিতানেও মানুষ মারছে!

তুমি মরছো– সেইসাথে
আরও দশজন-বিশজন-পঞ্চাশজন -শতজনও মরছে!

পঞ্চভূতেরা গুহার ভেতর নিরাপদ থেকে
সিংহাসনের লোভে,
ভোজবাজি দেখিয়ে
রিমোট-কন্ট্রোলে তোমাকে নাচাচ্ছে!
শৃগাল হচ্ছো–নেকড়ে ও বাঘও হচ্ছো
হাতির মতন গর্জন করছো,
শেষমেশ হচ্ছো কবন্ধ-পুতুল!

মিথ্যে, অলীক ও অনর্থক অভিসারে
নিজেও রক্তাক্ত হচ্ছো,
রক্তাক্ত করছো তোমার ভূমিও,
তোমার জনপথও,
তোমার পৃথিবীও!
মিথ্যাজ্ঞান শুধু মায়া ও ধাঁধার ভেতর নিয়ে যাচ্ছে
ভ্রান্তির ঘূর্ণিতে ফেলে দিচ্ছে,
নদী ও সমুদ্র পার হতে পারবে না!

কোনটা ন্যায়পথ? তুমি বুঝতে পারছো না!
তুমি তো নেশায় বুঁদ!
কোনটা সত্যপথ? তুমি বুঝতে পারছো না!
তুমি তো হাঁড়িয়া মদে মত্ত!
ভ্রান্তি ও ভ্রমে রজ্জুতে দেখছো সর্প!
পানদোষে বোধশূন্য হয়ে তোমারও কোষে কোষে নাচে
নারকীয় ও অমানুষিক ব্যভিচার!

এভাবে নিজেকে উৎসর্গ! স্বর্গ পাবে? পাবে না!
মানুষের ভালোবাসার বর্গ! এক ইঞ্চি পাবে? পাবে না!