এলিজা খাতুনের কবিতা

প্রত্যাশার অনন্ত অঙ্গন থেকে
গতরাত্রে হারানো অনেক কিছু ফেরত পেয়েছি
ফিরে পেয়েছি
সেই বিশ্বাস, প্রশান্তি, সারল্যময় আলাপন
মেধা-সাহস-শ্রমের নির্ভেজাল প্রতিদান
লাটাই সুতো কাটা ঘুড়িটা ফিরে এলো আকাশ থেকে
পেয়ে গেছি সেই জীবন্ত মহানন্দা, শঙ্কাহীন পূর্ণিমা রাত
কার্তিকের অনটন মুছে ফেলা শস্যের দুরন্ত ভূমি
এইসব প্রাপ্তি-আনন্দে রাতটা এগিয়ে চলে বেশ
এরপর জানলাম, আমাদের কারখানা থেকে-
শ্রমের বদলে প্রতিষ্ঠিত-প্রতারণা মুছে গেছে
ফসলের বাজার-দর পাচ্ছেন মাঠের কৃষক
খবর পেয়েছি অতিকায় কদাকার বন্য মানুষগুলো
নির্মূল হয়ে গেছে ; ফিরে পেয়েছি-
শোষণ-শঠতা থেকে মুক্তি, ক্ষুধা-যন্ত্রণাহীন ঘুম
পৃথিবীর সমস্ত মানুষ সুচিকিৎসার আওতায় পড়েছে
তীর দখলকারী কংক্রিট-দানবের দাঁত ভেঙে
আপন মাধুর্যে ফুঁসে উঠেছে স্রোতশীল নদী
নতুন বউ এর মুখে হাসি এনে দেয়-
জাংলায় ফোটা চিচিঙ্গার সাদা ফুল
যেন পেয়ে গেছি প্রানবন্ত ভোর !
রাত শেষের দিকে স্বপ্নটা ভেঙে গেলো
আমাকে বিদ্রুপ করতে লাগলো স্বপ্নের সমূহ প্রাপ্তি
ভেবেছি পরবর্তী রাত্রে যদি আবারও দেখি স্বপ্নটা
ঘুমের ভেতর থেকে তা পেড়ে আনবো মানুষের পাড়ায়
যে কথার সময় এখন
পাথর-প্রাণে কে রেখে গেছে আগমনি ছাপ
জলের বদলে কে দিয়েছিল কচি ডাবের জল
সেসব কথা এখন নয়
পায়রা ওড়ানো উৎসবে কে এসেছিল
কার আসার পথে ঝরেছিলো ফুলবৃষ্টি
সেসব কথা এখন নয়
ফুল দোলাতে কে উঠেছিলো শিরীষের ডালে
মনের কোথায় জমে আছে দুল হারানো দুঃখ
সেসব কথা এখন নয়
বেলির শাখায় ফড়িং-এর ডানা
পাতার গালে রোদের আদর ; কে কবে দেখিয়েছে
কে তুলেছে পায়ের পাতায় বিঁধে যাওয়া ভুল কাঁটা
সেসব কথা এখন নয়
বুক-পাঁজরে এখন ধু ধু কালের হাঁচড়-পাঁচড়
আজ আমাদের সমস্ত রং ক্ষণস্থায়ী বিরহে কাঁদুক
আজকে রাতের বৃষ্টি বাদল
ফসল-ক্ষেতে আনে যদি কিছু দানার স্বপ্ন
এখন কেবল কথায় কথায় ভাঙার সময়-
কাস্তের চোখে নেমে আসা মরিচা-ঘুম