অণুগল্প : টাকা

অণুগল্প : টাকা

টাকা
দেবাংশু সরকার

মোবাইল ফোনটাকে নিয়ে মহা সমস্যাতে পড়েছেন মলয় বাবু । কয়েক বছর বেশ চলছিল । আচমকাই বিগড়ে গেল । সকালেও এক জনকে ফোন করেছেন, তখনো ঠিক ছিল । এখন বেমালুম বন্ধ ! কোন কিছুই করা যাচ্ছে না ! অনেক নাড়াচাড়া করলেন । পাওয়ার সুইচে বারে বারে চাপ দিলেন । কিছুই হল না । কিন্তু ফোন ছাড়াতো এক মুহূর্তও চলে না !
বেরিয়ে পড়লেন অফিস থেকে । হাঁটতে লাগলেন । হাঁটতে হাঁটতে চলে এলেন ধর্মতলায় । তিনি দেখেছেন লেনিন সরনির আসে পাশে অনেক ফোন সারানোর দোকান আছে । এসে দাঁড়ালেন ‘গৌর হরি মোবাইল সেন্টার’ নামে একটা দোকানের সামনে । ফাঁকা দোকান, কোন খদ্দের নেই । একজন মাঝ বয়সি দোকানদার বসে আছে । মলয় বাবু তাকে দেখালেন মোবাইলটা, বললেন সমস্যার কথা । ফোনটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলো দোকানদার ।
– সারানো যাবে । ছশো টাকা লাগবে ।
– ছশো টাকা ! ইতস্তত করতে থাকেন মলয় বাবু । কিন্তু না সারিয়েও তো উপায় নেই । অগত্যা রাজি হলেন ।
ফোনটা খুলে দোকানদার কিছু ঝালাই করে বললো – হয়ে গেছে । আমার কাজ আমি করে দিয়েছি । তবে এখুনি চালু হবে না । ফোনের মধ্যে একটা নম্বর থাকে, তাকে আই, এম, ই নম্বর বলে । ওঠাতে কিছু সমস্যা আছে । সফটওয়্যারের কাজ । এটা ঠিক করতে হবে ।
– করে দিন ।
– সেটা এখানে হবে না । আমার ছোট দোকান । সফটওয়্যারের দোকানে যেতে হবে । দেখছেন না এখানে অধিকাংশ দোকান বন্ধ । আসলে লকডাউনের পর রাস্তা ঘাটে লোকজন নেই । একদম খদ্দের নেই । তাই অনেকে দোকান খুলছে না । আপনাকে খিদিরপুরের ফ্যান্সি মার্কেটে যেতে হবে । খিদিরপুর বিরাট মার্কেট । অনেক বেশি দোকান । আমরা খদ্দেরদের ওখানে পাঠাই । এক দেড়শো টাকা খরচ হবে । ওরা বেশি চাইবে । কিন্তু দেড়শোর বেশি দেবেন না ।
কি আর করা যাবে । মলয় বাবু ছুটলেন খিদিরপুরে । বিভিন্ন দোকানে ঘুরে, কথা বলে বুঝলেন পুরোটাই জালিয়াতি হয়েছে তার সঙ্গে । আবার ফিরে এলেন ধর্মতলায় । এলেন গৌরহরি মোবাইল সেন্টারে । কিন্তু একি ! অন্য লোক বসে আছে ! তবে কি তিনি ভুল করলেন ? দোকানের নাম মিলিয়ে দেখলেন । ঠিকই আছে । দোকানে ঢুকে সব বললেন ।
– আমি দুপুরে থাকি । আমার নাম হরি ।সকালে গৌর থাকে । মনে হচ্ছে গৌর আপনার ফোন সারিয়েছে । ঠিক আছে, আমি কথা বলছি ।
হরি গৌরকে ফোন করে । ফোন বেজে যাচ্ছে । গৌর ধরছে না । ওদিকে মলয় বাবু রেগে আগুন । বলে চলেছেন – জালিয়াত কোথাকার । লোক ঠকানো টাকায় ও বড়লোক হবে না । ও আমার থেকে টাকা ছিনিয়েছে । ওপর ওয়ালা ওর থেকে ওই টাকা ছিনিয়ে নেবে । দেখবেন ঐ টাকা ওর কোন কাজে লাগবে না । ঐ টাকা ডাক্তারখানাতে খরচ হবে ।
মলয় বাবু চলে যাবার কিছু পরে গৌর ফোন করে হরিকে ।
– হরিদা ফোন করেছিলে ?
– হ্যাঁ অনেকবার ।
– আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম । দুপুর থেকে ছেলেটার ভীষণ জ্বর । ডাক্তারখানাতে নিয়ে যেতে হল । ছশো টাকা খরচ হল । ডাক্তারের ফি চারশো, ওষুধ দুশো ।
– একটা খদ্দের এসেছিল । খুব রাগারাগি করছিল ।
– ওর ফোনটা ডেড হয়ে গেছে । সারানো যাবে না । হাতে টাকা নেই । তাই একটু টুপি পরালাম । টাকাটা কাজে লেগে গেল । ডাক্তারখানাতে খরচ হয়ে গেল ।
খদ্দেরটা বললো, টাকাটা কাজে লাগবে না ডাক্তারখানাতে খরচ হবে । আবার গৌর বললো, টাকাটা কাজে লাগলো । ডাক্তারখানাতে খরচ হল । তাহলে ডাক্তারখানাতে খরচ হওয়া টাকাটা কি কাজে লাগলো না ? নাকি লাগলো ? মাথা মোটা হরি ভেবে পায় না ।