তৈমুর খানের কবিতা

সম্পর্ক
আমিও পুরোনো শব্দের কাছে আসি
উলঙ্গ হই
সব ইন্দ্রিয় মরে গেলেও চৈতন্য মরে না
জেগে থাকে নিশিরাত, একাকী মুহূর্তগুলি
কথা ও কথার সূর্য সব ডুবে যায় একে একে
তবু আঁধারে খেলা পাতি
ইচ্ছা গড়াই রোজ কুসুমের কাছে
কথা নেই, কথা নেই আর — তবু মনে হয় কথা আছে
উলঙ্গ হই
বিষাদ আমাকে দ্যাখে
তার সঙ্গেই শয্যা পাতি
কেউ আর অবৈধ ভাবে না
আমরা চৈতন্যের ঘরে আছি
সংসারী নই তবুও সংসার হয়
পুরোনো সম্পর্কগুলি এভাবেই বাঁচে ।
পুরোনো প্রেমিক
কত তির বিঁধে আছে বুকে
তবুও নতুন আলোর গানের কাছে
সুর চাইতে এসেছি
সব ক্ষত ঢেকে আবার জ্যোৎস্নায়
কিছুটা উপশম চেয়েছি
ওদের বারান্দায় নেমেছে কত সাদা পাখি
রোদের সুস্পষ্ট উচ্চারণগুলি তাদের ঠোঁটে ঠোঁটে স্বরলিপি
গড়ে যাচ্ছে শূন্যতায়, উচ্ছ্বাসে
ভোরবেলার দিকে কোনও নক্ষত্রের কাছে
নিজের জাগরণ লুকিয়ে
এখনও লজ্জানত আমি
মহাপ্রস্থান
ভাঙা ভাঙা চৈতন্য, দ্রাবিড় দিনের রাস্তায়
কোথায় চলেছি?
দেখা হবে না কারও সঙ্গে
নতুন কোনো মুখের আভাসও জেগে ওঠবে না
রাত্রির কলোনিতে দেহ বিক্রি করছে সভ্যতা
ভ্রষ্ট রাজনৈতিক চরিত্রদের কাছে।
তীব্র পিপাসায় বিষণ্ণ জল পান করে এগিয়ে চলেছি
কেউ কি আলো হবে আমার?
কেউ কি ছায়া-মুকুলের ঘ্রাণ হবে?
বুকের আঁচল খসে পড়লে তার
একটা নতুন পৃথিবী গঙ্গা-যমুনার ধারায় বয়ে যাবে
আর দেহটি তরণি আমার
নিরুদ্দেশের গান শুনতে শুনতে
সম্মোহনের তীর খুঁজে পাবে।
কম্পিত বঙ্গদেশ, দগ্ধ বাংলাভাষী
ভাষাহীন হয়ে যেতে থাকি
আনমনে তোমারই নূপুর বাজে
রাঙা সূর্য তোমার মুখেই লেগে থাকে
জ্যোৎস্নায় শাড়িপরা রাতে
তুমিই ধারণাতীত লাজুক রূপসী
আমি কম্পিত বঙ্গদেশ, দগ্ধ বাংলাভাষী
উদাসীন চেয়ে চেয়ে দেখি
আমারই রক্তে প্রবাহিত নদী
শ্যামল সবুজ মাঠ, কাতর আত্মীয়
কারা এসে দাগ কাটে?
দাগে দাগে অন্ধকার
মৃত প্রজ্ঞার কাছে একা একা কাঁদি
সমৃদ্ধির হাতটুকু ধরবে না এসে?
রাখালিয়ার শেষে বাজাবে না বাঁশি?
মৃদঙ্গে আবার তবে গৌরাঙ্গ হই
গৃহসন্ন্যাসী
মুখর বাংলায় অমরত্ব খুঁজে দেখি…
এখন এবার
শয্যা পেতে দাও
এখানে বিশ্রাম নিই।
ঘুমের সাধ জেগে আছে
আর কোনো স্বপ্ন নেই।
কত বৃষ্টি, কত গর্জন গেল
পাড়া ভরতি এখন নির্জন
রাজনৈতিক দৃশ্যগুলি অন্তর্হিত হলে
স্বর্গের আভাস দেখা যায়।