হাকিম উদ্দিনের কবিতা

হাকিম উদ্দিনের কবিতা

ক্ষীণদৃষ্টির বেড়াজালে

অকারণ অহমিকা আর দাম্ভিকতায়
বিভোর হয়ে
জীবনের চাওয়া পাওয়ার
হিসাব মিলাতে মিলাতে
চোখ রাখে
আকাশ পানে
এবং
ক্ষীণদৃষ্টির বেড়াজালে আটকে থাকে
অনেকটা সময়
তারপরও
আকাশের এ প্রান্ত থেকে সে প্রান্ত অবধি
হাতড়ে বেড়ায়
আরও কিছুক্ষণ
কোন হিসাবই মিলাতে না পেরে
ক্লান্ত ও অবসন্ন মনে
চোখ রাখে মনের জানালায়।

আকাশ, নদী ও নীলাকাশ পেরিয়ে
গ্রহ নক্ষত্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে
সীমাহীন সৃষ্টির
ভাঁজে ভাঁজে
অজানা যে সত্য লুকিয়ে আছে
তা কখনোই খুঁজে পায় না
এবং অজ্ঞতার অহমিকায়
কারণে অকারণে
ভুল পথেই হেঁটে বেড়ায় জীবনের অনেকটা পথ
এবং নিজেকেই ভাবে মহা-জ্ঞানী।

অজ্ঞতার অন্ধকারকেই
আলো ভেবে
বিপথগামী স্বার্থান্বেষীরা দিনের পর দিন
এ ভাবেই রয়ে যায়
মিথ্যে ফানুশের আড়ালেই,
জীবনের ছল-চাতুরীর
ধূম্রজালে
আটকে থেকে
কখনোই খুঁজে পায় না
সঠিক পথের ঠিকানা,
তবুও দাম্ভিকতার আড়ালেই
হাসে
মিথ্যে কপট হাসি।

পথ চলতে চলতে
অবশেষে
দিশাহারা এবং পরিশ্রান্ত হয়ে
শেষ বিকেলের
গোধূলির আলোয়
চোখ রাখে
দূরের আকাশ পানে
দুচোখের ঝাঁপসা দৃষ্টি আটকে যায়
রক্তিম দিগন্ত রেখায়,
অতঃপর,
দুচোখ জুড়ে নেমে আসে
অমানিশার ঘন কালো অন্ধকার
আর দূর হতে
ভেসে আসে
ভুলে ভরা যাপিত জীবনের
অজস্র
শূন্যগর্ভ ধারণার নিদারুণ হাহাকার।

একান্তই তোমার এবং আমার

তবুও স্বপ্ন আসে এবং বারবারই আসে
কারণে অকারণে মনোহারিণী
স্বপ্ন আসে,
চেনা অচেনা হাজারো বর্ণীল স্বপ্নে
এ মন যেন
ভাসে আর ভাসে
কখনো ভাসে স্বপ্নের ভেলায়
কখনো ভাসে
ভরা পূর্ণিমার
রূপালী চাঁদের জ্যোৎস্নার ছায়ায় ।

মাঠ-ঘাট, সবুজ শ্যামলিমা
পাহাড়ি নির্জন উপত্যকা
নদ-নদী
খাল- বিল ছাড়িয়ে
তেপান্তরের পথ মাড়িয়ে
এ মন যেন ছুটে যায় দূর দিগন্তের
ঠিক ওপারে
কিংবা
আলো-ছায়ার পথ ধরে
হারিয়ে যায় আরও আরও
দূরে
তবুও এ মন
কি যেন কি খুঁজে ফিরে
ফেলে আসা অজস্র স্বপ্নের ভীড়ে।

দিবসের কোলাহল, সন্ধ্যা তারার ঝিলমিল
সাঁঝের বেলায় নীড়ে ফেরা
পাখিদের কল-কাকলী
বহতা নদীর কলতান
পাহাড়ী ঝর্ণার ঝিরিঝিরি ব্যকুলতা
এসব কিছুই যেন
এ মনকে আজ আর আবদ্ধ করতে পারে না
চৌহদ্দির কোন সীমানায়।

পাহাড়ে গাঁয়ে লেপ্টে থাকা
ধূসর নির্জনতা
রাতের আঁধারের গভীরে
লুকিয়ে থাকা
সুনসান নিরবতা
এসব পিছনে ফেলে আমি আজ
ছুটে এসেছি
আমার হারিয়ে যাওয়া সেই
বুনো স্বপ্নের কাছে
যেখানে এ মন আজও খোঁজে
প্রশান্তির সেই ঠিকানা
যা ছিল একান্তই তোমার
এবং আমার।

খসে পড়া নক্ষত্রগুলো

রাতের নির্জনতা ভেঙে হঠাৎই
খসে পড়লো একটি নক্ষত্র
আমি হাত বাড়ালাম
আঙুল গলিয়ে বেড়িয়ে গেল নিমিষেই
দলছুট নক্ষত্রগুলো এভাবেই খসে পরে এবং
হারিয়ে যায়
অন্ধকারের গভীরে-
অসংখ্য শব্দমালা যেমন মিশে যায়
বাতাসের বুকের গভীরে।

শব্দদের অনুভূতির নাগাল আমি
কোনদিনও পাইনি
তবে অনেক শব্দই
রক্তাক্ত করে অনুভূতির চারদেয়ালকে
রাতের ভাবনায় জুড়ে থাকা
শব্দগুলো
দিনের আলোতে যেন অনেকটাই অস্পষ্ট মনে হয়
তবুও নতুন শব্দের খোঁজে আমি
রাতের আঁধারেই
হেঁটে বেড়াই
কিছু এলোমেলো শব্দ আমায়
রোজ রোজ তাড়িয়ে বেড়ায়
এমনকি নিভৃতে এসে ভিড় জমায়
আমার মনের অলিগলিতে
আমি ঐ শব্দগুলোকে
কখনোই আমার কবিতার পঙক্তিমালায়
বিন্যস্ত করতে পারি না
তবুও বারবারই
শব্দগুলোকে সাজাতে থাকি
কিন্তু, যারপরনাই চেষ্টা করেও
শব্দগুলো দিয়ে
একটি কবিতাও আমি কোনদিন লিখতে পারিনি।

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবন এবং
স্বপ্নের মাঝে দাঁড়িয়ে আছি আমি
জীবনকে যতবারই স্বপ্ন দিয়ে
সাজাতে চেষ্টা করি
ততবারই তা এলোমেলো হয়ে যায়
এবং হারিয়ে যায় সময়ের গহ্বরে
কখনোবা আটকে থাকে
জীবনের পরতে পরতে
কখনো আবার স্মৃতির ভাণ্ডারে জমে থাকে
অসম্পূর্ণ স্মৃতি হয়ে
যা কখনো কখনো চুপিসারে
উঁকি দেয়
আমার মনের জানালায়
আবার কখনোবা হারিয়ে যায়
শূন্যতার গভীরে
যেমন করে শূন্যতার গভীরে হারিয়ে যায়
রাতের অন্ধকারে
খসে পরা নক্ষত্রগুলো।