বিকাশ চন্দের কবিতা

স্পন্দন
আটপৌরে ঘরের বিষাদ ধরা দেয় না তেমন
তবুও হৃদয়ে থাকে ছলাৎ ছল পরবাসী উঠোন,
পয়লা আষাঢ় ভরা বুক নদী সুমঙ্গল বরষা ভাসান
বেল জুঁই বকুলের আত্মা ভিজেছে জলে স্নানের যুবতি,
নীল নেশায় মেতেছে ধমনী রক্তে পায়েলের সুর
অবাক সকালের রোদ শরীর ডাকে বিষণ্ণ দুপুর।
যযাতি যৌবন জড়িয়ে আছে বহু বর্ণ চিঠির ভাষায়
সকল অক্ষর বুকে শব্দময় জুঁই গন্ধ মেখেছে কাঁচুলি,
মেঘ রঙে তখন বিজলি চমক ছুঁয়ে যায় শঙ্খ চিল
উদাসী নদী চর দু’দিকে অলক্ত সে সূর্য ঘরনি,
কি নামে তুমি জল রঙে জল ছবি দেহ বাসে সনাতন মায়া
আষাঢ়ের যুবক শরীর চোখে মায়া সুর বাউলের গান।
রঙের ভেতরে সহ মরণ লাল নীল রাত গেরুয়া গোধূলি
ডানা ঝাপটে পাখিদের শ্লোক বাতাসে আকাশের গায়,
প্রতিদিনই বেঁচে বর্তে জীবন জানে নষ্ট শরীর আমরণ
খেলাঘর জানে উন্মত্ত বাতাসে ও রাতে জ্যোৎস্না নামে,
সকল প্রীতি কথা স্তুতিময় ঘিরে আছে স্পন্দিত বুকে
আত্মার আলো মুখ এসো শেষ বেলা আগুন প্রহরে।
এক মুঠো মাটির আবাহন
কথারা বড়ো বেশি জড়িয়ে ছিলো পালকের মতো নরম
অন্তর কুলে অবিশ্বাসী যত বরাভয় ছিল নিবিড় উচ্চারণে,
সহমর্মি শরীরের স্পর্শ ঘিরে আছে সে কেমন অরূপ বলয়
বুক পেতে ধরে আছি আমি বৃক্ষ পিতার বিদীর্ণ হৃদয়,
সমকাল বোঝেনি বংশের ধারাপাত শাখা পাতা ফুল ফল
ধমনী শিরার মতো শেকড়ে বাকড়ে রেখেছে অঞ্জলি বৃক্ষ জননী।
নীরবে জ্যোৎস্না নামে পাড়ায় জানে হাহাকার শুধু
গতায়ু সময় বুনছে কথা নীল পথে হাঁটে যুবক যুবতী,
অবহেলায় ভেসেছে শরীর গর্ভ ছেঁড়া নদীর উজানে
অহংকারী রাজার উল্লাস মোছে পদ চিহ্ন যত কাদা মাটি,
বিষণ্ণ ফুলেরা বেহিসেবী জীবনের কানাকড়ি পলিমাটি
উৎস জানে প্রতিদিন নদীর গতিময় মগ্ন আত্ম রতি।
গাছ পাখি জল মাটি জানে ঘিরে আছি প্রকৃতি বাসনা
আমার শ্বাসের শব্দ বাতাসে সম্মতি দিয়েছিল বৃক্ষপিতা,
বৃক্ষ জননীর আঁচলে শস্যের বাগানে আমার সন্ততি
ভেজা ঘাসের উপর ফেলে গেছে বাঘিনী থাবার ছাপ,
সুগন্ধি ফুলের ঘ্রাণে বুনো সময় ছেঁড়ে শরীরী যাপন
আত্মাহীন শরীরে অন্বিষ্ট এক মুঠো মাটির আবাহন।
সকালের আগুন পোয়াতি
ছায়াহীন বিভীষিকা আগুন স্পন্দন দোলে আমরণ
বন্দীত্ব বোঝেনি মেঘ প্রেম দূত সাদা কালো জল ছবি,
জল জমিনে মেলেছে শরীর নীল রাত একা
বনভূমি রঙ মাখে যন্ত্রণা জড়িয়ে রঙে রঙিন প্রজাপতি,
বাধ্য সময় ডেকেছিল নির্দিষ্ট ছিলনা আমারও আবাস ভূমি
সমুদ্র হাওয়ায় নুন স্বাদ পরস্পর জল ভেজা ঠোঁট।
পশ্চিমা মেঘ গোধূলি চাতরে বিষণ্ণ কটা গাছ কঙ্কাল
তবুও সবুজ সঙ্কেত চেনে ক’টা শাদা বক মাছরাঙা মেয়ে,
জল থই থই স্রোতের টানে দুলছে শরীর আঁতুড় শেকড়
ভালোবাসা বল্লরী দোলে আহা মৃদঙ্গের বোলে ব্রজবাসী,
কুঞ্জবন চেনে পরকীয়া সুখ তোর চেনা অরণ্য ঘর
শরীরী উষ্ণতায় ডানা মেলে মন ময়ূরী তখন।
প্রান্তর বাস বহুকাল নিঃশ্বাসে দোলে কৃষ্ণচূড়া লজ্জানত
ফেলে এসেছি হলুদ বিকেল চেনা আয়োজন পরম অধিবাস,
সকল কথার ভেতর সবেদন অক্ষর ভেজে নিঃসঙ্গ যখন
রাধা কাল ডেকেছিল যমুনার নীল ব্রজের বিকেল,
বহুবার বলেছি ডানে বামে আছি ঝলসানো সাঙ্গাত আমি
অন্তঃসত্ত্বা রাতের সময় তুই সকালের আগুন পোয়াতি।