গল্প:ফিল গুড

গল্প:ফিল গুড

ফিল গুড
নন্দিতা দত্ত

এই দ্যাখ কেমন করে তাকিয়ে আছে! আমি ফিদা।
রিনি কি বলে!! রঞ্জনা তাকিয়ে থাকে বলে না কিছুই।
সেই কবে থেকে দেখে আসছি।আমি শুধু অপেক্ষায় ছিলাম।কবে আমায় দেখবে।
রিনি এক নিশ্বাসে ঝর ঝর করে বলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে দেখে রঞ্জনা পুরো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
কি রে তুই তো কিছুই বলছিস না?
অনেকটা অভিমান নিয়েই বলে রিনি।
কি হবে তোর এই পাগলামির কথা শুনে।
তুই কাকে দেখলি?এখানে তো কেউ নেই।
কে বললো নেই।!!তুই তো দেখতেই চাসনা।আমার কথা বুঝবি কি করে?
শোন মোহ বুঝিস মোহ? তুই মোহে পড়েছিস।এই যে ড্যাশিং, হ্যান্ডসাম আউটস্পোকেন -অভিনব যা যা শব্দ বলিস ওগুলো এমন শব্দ যা কখনো ঝন ঝন করে। কখনো বিজ্ঞাপনের পুরুষের প্রতিরূপ। এগুলো প্রেমে পড়তে ব্যাবহার করা যায়।এই যেমন তুই শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে তোর ভালো লাগা মানুষ টাকে অন্যের কাছে প্রেজেন্টেবল করছিস।দ্যাটস এনাফ। এর বেশি হলোএই ওয়ার্ল্ড ফিগার মানুষকে নিয়ে তোর যে অবসেশন তার স্বপক্ষে তোর যুক্তি।তিনি কেন তোকে দেখবেন।কেন বলতো??
যা যা বোকার মত কথা বলিস না। বুঝিস না বলেই নেগেটিভ কথা বলিস।
আচ্ছা তুই কি কোনদিন কথা বলেছিস?বা তোর সাথে কখনো মুখোমুখি গল্প হয়েছে?
না হয়নি।।তবে হবে হবে।
বাহ অপূর্ব।কি করে হবে?
হবে হবে।ওর নেক্সট সেমিনারে আমি যাব।কি সুন্দর কথা বলে।প্রতিটা শব্দ আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি।এবার একদম সামনের চেয়ারে বসবো।
চোখের তারায় ঝলকানি দিয়ে রিনি রঞ্জনাকে বলে,
দেখবি দেখবি যেদিন দেখা হবে আমায় কি করে আগলে ধরে রাখে দেখবি।
হুউম,তোকে হাগ করবে কফি খাওয়াবে,নদীর ধারে নিয়ে যাবে।রাবিশ সব স্বপ্ন।তাও যদি বুঝতাম ফিল্ম ষ্টার বা কেউ।
ছাড় আদিখ্যেতা ছেড়ে বাস্তবে আয়।চল হোস্টেলে যাই।
বলেই রঞ্জনা হাঁটতে থাকে- কিছু টা যেন অন্য মনস্ক।

রিনি রঞ্জনার পাশে পাশে হাটলেও শূন্যে ভাসছে।

এইসব কথোপকথন এর ঠিক তিরিশ দিনের মাথায় ড.আরফান ফারুকের সেমিনারে রিনি হাজির ইউনিভার্সিটির অডিটোরিয়ামে।
কথা দিয়ে কথা সাজাচ্ছেন ফারুক।রিনির মাথায় শব্দগুলো সুর্যের তাপের মত লাগছে।এই যে এত শব্দ এত আলো সব নিয়ে রিনি অতলান্ত নীলে।জন্মজন্মান্তরের জন্মভিখারি রিনি সুর্যকে দেখার চেষ্ঠায় কল্পনার রেলিং য়ে মাথা পাতে।
ফারুকের গলার প্রতিটা শব্দ যেনো হুকে গাঁথা -দেখা যাচ্ছে নাগাল পাচ্ছেনা। ক্রমশ নীল আলোয় শব্দরা বাসা বাধে রিনির জন্য।
এমন একটা খবরের কাগজের স্বপ্ন দেখি যেখানে প্রতিদিন শুধু ভালো খবর থাকবে।কোন রাজনৈতিক মতামত
, মন্ত্রী আমলা,দুর্নীতি র খবর নয়।ঘুম থেকে উঠেই যেন খারাপ খবরের সাথে দিন শুরু না হয়।অনেকেই বলবেন যা !এমন সংবাদপত্র হয় নাকি!হবে। হয়না বলে কোন কথা হয়না।অসম্ভব বলে কিছু হয়না।প্রতিদিন রাজনীতি, দোষারোপ,মৃত্যুর খবর,হিংসা,হানাহানি জেনে সাধারন মানুষ কি করবে? সাধারন মানুষ কি তাদের পৃথিবী পালটে ফেলতে পারে এই সব খবর জেনে।তার চেয়ে বরং এমন খবরের কাগজ লোকে পড়ার সুযোগ পাক যেখান থেকে মানুষের মধ্যে পসিটিভ ভাবনা গুলো সাজানো থাকবে। মানুষ সুস্থ ভাবে বাঁচার রসদ পাবে।যেখান থেকে পৃথিবী র সুন্দর দিকটা দেখতে শেখাবে।
পৃথিবী দেখেছে খবরের কাগজে অর্ধসত্য,কাল্পনিক খবরের
কুফল।
ধরুন সকালবেলা খবরের কাগজ টা হাতে নিয়ে ই প্রথমেই সুন্দর ভোরের সুর্যের ছবি থাকলো।সুর্যের সাথে মানুষের জীবনের ভূমিকা কোথায়। সেই কথা থাকলো। রোজ কেউ এমন কিছু বিষয় নিয়ে ভাবেন ,যা ভাবনা তে নয়,আসলে কেউ কেউ সে কিছু গুলো করেন।
তাই নিয়ে কলাম হতেই পারে।প্রতিদিন নতুন ভাবনায় একটা একশ শব্দের লেখা।যা পড়ার পর মনে হবে আরেকটু জানতে পারলে ভালো হতো।
একজন দুজন করে বিষয় টায় আগ্রহ জমবে।
তারপর ধরুন যে অঞ্চল থেকে কাগজটা বের হয় সেখানে প্রতিটি ঋতুকে কিভাবে অনুভব করা যায় বা আপনি কি ভাবেন – বলে এক টা স্পেস থাকবে সেখানে সপ্তাহের সাতটি বার নির্দিষ্ট থাকবে সাতটি রংয়ের জন্য।যেমন নীল। নীল রংয়ের কি কি আমরা দেখি!-আকাশ দেখি,কিন্তু পাখি, ফুল ফল,গাছ কি নীল দেখি? এখানেই কতকিছু ভাবার আছে।হলুদ,বেগুনি,লাল,কালো,সবুজ,সাদাকে -দিয়ে দিই বাকি ছটা দিন।
রিনি মন্ত্রমুগ্ধের মত ড.ফারুকের শব্দের সাথে জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে।
২৩ বছরের মেয়েটা এমনিতেই ক্ষনে ক্ষনে অদ্ভুত প্রশ্ন করে তার বন্ধু বান্ধব দের।অনেক সময় এমন সমস্ত বিষয় নিয়ে কথা বলে যার আদ্দেক ই বন্ধু রা বোঝেনা।খিল্লি উড়ায় রিনির।কখনো রিনি প্রচন্ড ক্ষেপে যায় বোঝাতে না পেরে চিৎকার করে।নিজের সাথে লড়াই করে।
তাহলে এভাবে একটা কাগজ করা যায় কি বলো।পুরো বিষয় টা না বলে ড.ফারুক রিনির দিকে চোখ রেখেই জিজ্ঞেস করেন।
আপনি তো পুরোটা বললেন না। আরো শুনতে চাই।
রিনি আধকাচাপাকা চুলের ড.ফারুকের দিকে তাকিয়ে কথা টা বলেই ঘোরের মধ্যে চলে গেল।
আচ্ছা রিনি তুমি যে আমায় সেদিন কথাগুলি বললে কিছু ভেবে তো বলেছিলে!তোমার মাথায় ওই ফিল গুড ব্যপার টা কি করে এলো?
দেখো ড.ফারুক না শুধু ফারুক বলছি,স্যার বলব না কিছু মনে কোরনা।
হ্যা যা বলছিলাম ফিল গুড মানে এই যে তোমার সাথে আমি এতক্ষন কথা বলছি বা তুমি বল আমি হাঁ করে শুনি,বা আমি বলি তুমি শুনতে থাকো। একটা ভালো লাগা থাকে তো? বা মাঝে মাঝে হাটতে বের হই তোমার সাথেএইটা ভীষন ভাল লাগে।তখন মনে হয় পৃথিবীতে শুধু তুমি আর আমি। আমাদের ভাবনা চিন্তা গুলো একটা সরলরেখা ধরে চলে যেখানে সময় টা ভালো কাটে।আচ্ছা তুমি ও তো নিশ্চয় আমার সাথে সময় কাটাতে ভালোবাসো।এটাও তো পসিটিভ।এই যে কত মানুষের সঙ্গ এটাই ফিল গুড।প্রতিদিন একটা ফিল গুড ষ্টোরি লোক পড়বে।মন ভাল থাকবে।প্রতিদিন যদি মানুষ এভাবে কারো সাথে সময় কাটায় তাহলে হুট করে খারাপ কিছু করতে পারবেনা।
আচ্ছা খারাপ বলতে কি মিন করছো?
ড.ফারুক রিনিকে থামিয়েই জিজ্ঞেস করে।
না মানে খারাপ মানে খারাপ ধরো কেউ হুট করে একটা মানুষকে না জেনেই তার সম্পর্কে আজে বাজে কথা বলে।বা একজন অন্য জনকে যে ছোট করে আনন্দ পায় -এগুলো তো ভীষন খারাপ তাই না।
আমার ভীষন কফি খেতে ইচ্ছে করছে চলো ওই কফি শপে।
রিনিকে ফেরাতে মন চায়না।।ড.ফারুক রাজি -হন। খুশি রিনি।
.কফি খেতে রাজী হয়েছেন শুধু তাই নন।কফির কুপন কেটে ফারুক রিনিকে নিয়ে কোনার একটা সোফাতে বসেন।রিনি আড়চোখে চারদিক দেখে নেয়।ফারুকের সাথে এসেছে এটা রঞ্জনা দেখুক। কিন্তু রঞ্জনা কই।কোথাও দেখতে পায়না।
আচ্ছা এই যে ফিল গুড বলছি,এটা কিন্তু শুধু একটা ফিলিং নয়।বা এমন একটা ভাবনা বা সম্পর্ক সৃষ্টি যা কিছু
তেই শুধু একটা বয়সের জন্য হবে এমন নয়।
সমবয়সিদের মধ্যে হবে এমন ও নয়।যেমন তোমার সাথে আমার বন্ধুত্ব। আমি কবে থেকে ভাবতাম জানো? যেদিন প্রথম তোমার লেখা পেপারে পড়েছিলাম।তখন মাধ্যমিক দিয়েছি।তুমি একটা স্টোরি করেছিলে ভালো আছি – সেই সিনেমার আত্রেয়ী নিয়ে।আত্রেয়ী মাধ্যমিকে ষ্টার পেয়ে
ইন্টারভিউতে বলেছিল জার্নালিষ্ট হতে চায়।পরে
সে জার্নালিজম পরে জার্নালিস্ট হয়নি থেকেহয়ে গেল ফিল্ম ষ্টার।সেই স্টোরিটা পড়ে তোমায় চিনি।আমিও তখন থেকেই ঠিক করেছিলাম জার্নালিজম পড়বো আর কোন দিন কোন রাজনৈতিক নিউজ করবোনা।
আর তোমার লাস্ট সেমিনার থেকে আমি একটা বিষয় ভেবে নিয়েছি আমি এমন একটা কাগজ করব।
আর তিন বছরের অপেক্ষা।।আমার পিএই ডি শেষ হলেই আমি সম্পাদক আমি প্রকাশক হয়ে কাগজটা করব।দেখে নিও। তুমি আমার সাথে থাকবেতো?।
নিশ্চয়।তোমার পত্রিকার প্রথম ক্রেতা পাঠক আমি হবো।
ড ফারুক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললেন আমায় এখন কিন্তু উঠতে হবে।
সিওর। চল ওঠা যাক।
রিনি রঞ্জনার বন্ধুত্ব অটল।কিন্তু ফারুকের সাথে যেদিন রিনি কথা বলে, দেখা করে সেদিন রিনির নাগাল পায়না রঞ্জনা।
রঞ্জনা বোঝায়। রিনি বোঝেনা।
কল্পনায় প্রতিবার ফারুকের সাথে দেখা হবার দুদিন পরে রিনি রঞ্জনাকে পাকড়াও করে।
এই শোন জানিস ফারুক আজ যা দারুন একটা শার্ট পরেছিল,কি হ্যান্ডসাম লাগছিল।গালে হাত দিয়ে যখন কথা বলছিল আমি না ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কোথায় যে ডুবে গেলাম।
ডুব লে তো মরবি।ভেসে থাক।
রঞ্জনা কেমন উদাসি ্গলায় বলে।
কি বললি?তুই কি জেলাস? শোন সব কিছুর ভাগ হয়না। তাই সব দিতে পারলেও ফারুকের বন্ধুত্বের ভাগ তোকে দেবোনা।
যা ভাগ। বয়ে গেছে তোর বুড়ো সাংবাদিকের ভাগ নিতে। জানিস ওর বয়স কত?? বয়স আবার কি?
বয়স দিয়ে কি হবে।?ওটা সংখ্যা।
তোর দ্বিগুন।।তুই কি করে নাম ধরে ডাকিস। কি যে করছিস তুই ই জানিস।
বয়স নিয়ে কথা বলবিনা।বয়স দিয়ে কি ধুয়ে জল খাব।বয়স হয়েছে তো কি হয়েছে?বন্ধুত্ব বুঝিস।বন্ধুত্ব হলো এমন একটা জিনিস সারা জীবনেও পাওয়া যায়না।আশে পাশে যারা থাকে তারা বন্ধুত্ব শব্দের একটা টুকরো।আসল যে মানে সেটা কোন শব্দে ব্যাখ্যা করা যায়না।
রঞ্জনা অবাক হয় ড.ফারুক ক্লাশ নিতে আসেন শুনেছে .কিন্তু দেখেনি।রিনির কথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।।রিনি কল্পনার জমিতে চাষ করে কোন গভীর অসুখের দিকে যাচছে? রঞ্জনা ভাবে। ভেবেই যায়।
তুই যে এমন হাবুডুবু খাচ্ছিস তিনি জানেন?
কি জানি। হয়তো বা হয়তো নয়।
বোঝে তো বোধহয়। আমি যে প্রচন্ড ভালোবাসি।
সেটা তো প্রেম নয় মোহ।।মোহ বুঝিস ক্র্যাশ।একটা অদ্ভুত মোহের মধ্যে থেকে তুই ভাবছিস ভালবাসিস এটা কিন্তু প্রেম নয়। মানে ক্র্যাশ আর সোলমেট আলাদা ব্যাপার তুই বুঝবি কিছুদিন পর।কারন উনি তোর প্রেমে পরেন নি। ধরে নিলাম তোদের দেখা হয় তোকে স্নেহ করেন।তোর কৌতুহল , ভাবনাগুলো তিনি নারিশ করেন।
কিন্তু এভাবে ভাবলে তোকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে আমায়।রিনি রঞ্জনার কথা মানতে পারেনা।রিনির মনে হয় রঞ্জনা জেলাস।
রঞ্জনা ইউনিভার্সিটিতে মনোবিদ্যার অধ্যাপক ড মঞ্জুলা নায়েক এর সাথে কথা বলে।রিনি রঞ্জনার সম্পর্কে ধুলো পড়ে।সেই ধুলো উড়িয়ে দেবার মতো কোন বাতাস বয়নি।

কতবছর পর রিনির চোখের সামনে ইউনিভার্সিটি র দিন গুলোর কথা মনে পরে।মনে মনে কত কল্পনা ড.ফারুকের সাথে দেখা হলে কি বলবে।কল্পনার জাল বুনতে বুনতে কেটে গেছে কতদিন।কোন দিনই ড,ফারুকের সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার সুযোগ পায়নি। বেশ কয়েক বছর পর ড.ফারুখ আবার একটা বড় মাপের সেমিনারে
..ইউনিভার্সিটিতে এলেন।রিনি এবার সামনা সামনি কথা বলতে পারবে। দু একবার সেমিনারে অনেক পেছনের সারিতে বসে কথা শুনেছে।

সারাবছর কত জায়গায় পড়াতে যান। ভারতবর্ষের ছোট আঞ্চলিক কাগজগুলো যখন বিজ্ঞাপনের দোহাই দিয়ে
গসিপ সাজানো খবর ছেপে বের করে ড.ফারুকের কাগজ লড়াই করে। তার অন্য ধারার কাগজের জন্য কিছু লোক সেলাম জানায়।
একটাব্র্যান্ড নেম ড.ফারুক। রিনি কদিন ধরে ফিল গুড কাগজটা অনলাইনে পাচ্ছে।খুব ইচ্ছে করে পোষ্ট এডিটোরিয়ালে এই কোরোনা কালের যন্ত্রনা কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখতে চাায়।যা লিখতে হবে তা পসিটিভ ভাবনার হতে হবে। কিন্তু এখন সময় এমন বিষাদের,ক্লান্তির সেখান থেকে বেরিয়ে নেগেটিভ ভাবনাটাকে পসিটিভ স্টাইলে সাজানো তাও আবার ফারুকের কাগজের জন্য! রিনি ভয় পায়। পারবেনা ভেবে পিছিয়ে যায়।
দুতিনবার পারবনা পারবনা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ লিখে ফেলার কথা ভেবে দুলাইন লিখে ফেলে।
____আমি যা ভেবে বিচলিত তুমি উদাসীন-___

_এই ক্যাপশানে লেখার শেষ অংশটুকু লিখে ফেলে।রিনি লেজ আগে সাজায় পরে মুড়ো।শেষ অংশ টা লিখে অনুভব করে একটা নরম জোনাকি আলোর খুশি তার মাথা থেকে সারা শরীরময় ভাসছে।
বিকেলের মধ্যে পাঁচশ বত্রিশ শব্দের লেখাটা নিয়ে রিনি কিশোরী হয়।
কি করবে লেখাটা নিয়ে!নিজেকে দাঁড় করায় প্রশ্নের মুখে।
যদি মনোনীত না হয়? রিনি কি পারবে সেই অমনোনীত লেখার চাপ নিতে।আবার একটা কনফিউশান। কেন এমন হচ্ছে এমন হওয়া উচিত নয়।এমন অবস্থা জীবনে কখনো হয়নি।বিশ্বাসে,উচ্ছ্বাসে,নির্ভরতায় আঁকড়ে সেই কলেজবেলা থেকে।। তার কাছে বাস্তবে যেতে কেন এত সংকোচ?তাহলে পসিটিভ নেসের বার্তাটা নিয়ে রিনি নিজেকে গড়তে পারেনি।!

ইউনিভার্সিটিতে পড়াচ্ছে তাও বছর দশেক হয়ে গেছে।রিনির মা বিয়ের কথা বললে জবাব দেয় করবো।একটু গুছিয়ে নিয়েই বিয়ে করব।বা কখনো বলে তোমায় ছেড়ে থাকবো কি করে?
বেশ কয়েক বছর পর ড.ফারুক ইউনিভার্সিটিতে সেমিনারে এলেন।সাংবাদিকতা এখন কিসের মোড়কে এই
বিষয়ে বলতে।সেই ছটফটে রিনি তো এখন ড.রিনি সেন।
কল্পনার রাজ্যেই কাটিয়ে দিল এতটা সময়। ভাবে এবার একদিন সরাসরি ড.ফারুখের সাথে কথা বলবে। নিজেকে তখন থেকেই ফারুখের ছায়া সঙ্গী ভাবতো।
তাই আজীবন ড.ফারুকের কল্পনার ছায়া সঙ্গী হয়েই আছে।
একটা লাইন যা দিয়ে লেখাটা সেটার টাইটেলেই রিনি কে ধরা যায়।আমি যা ভেবে বিচলিত তুমি ততটাই উদাসীন।রিনি ড.ফারুখ কে নিজের পরিচয় জানায় ফোনে।দেখা করার ইচ্ছে প্রকাশ করে। রিনি এত বছরের ফিল গুড
পত্রিকার পাঠক ড. ফারুখ জেনে খুশি হয়ে অফিস কাম বাড়িতেই আমন্ত্রন জানায়।
রিনি এক উদাসীন
উৎসাহ নিয়ে জুড়ে আছে ।একটা অদ্ভূত কল্পনায় জড়িয়ে ফেলে নিজেকে।
ড.ফারুখের নির্দেশ মত রওয়ানা হয় রিনি। বাড়ি শহর ছাড়িয়ে রেসিডেন্টশিয়াল এরিয়ার অভিজাত পাড়ায়। বড় রাস্তা থেকে ডান দিকের বাই লেনে ৭ নম্বর বাড়িতেই ফিল গুড পত্রিকার কালোর উপর লাল রংএর সাইনবোর্ড রিনির মধ্যে একটা পসিটিভ সংকেত বয়ে আনে।
তিনজন বসে ল্যাপটপে কাজ করছে।দেওয়ালের দুটো টিভিতে চলছে খবর।।ড.ফারুখের সামনে দুটো ছেলে মেয়ে বসে কিছু আলোচনা করছে।রিনিকে দেখতে পেয়ে ফারুক উঠে আসেন।রিনি এতকাছে দাঁড়িয়ে ড.ফারুক।এমন লাগছে কেনো।আমি কি নার্ভাস? ধ্যাত নার্ভাস হবোনা।আসুন বসুন।সেই গলার আওয়াজ।ক্লাস নয় একদম মুখোমুখি।
প্রায় তেরো বছরের উড়ানটার কথা বলতেই ড.ফারুখ জিজ্ঞেস করে,
এখন কি পত্রিকা বের করতে চান?
সেভাবে ভাবিনি।কিছু একটা করতে চাই।সাপ্তাহিক কাগজ করা যায় কি আমরা আমরা করে রিনি । ঠোঁট জড়িয়ে গলা শুকিয়ে আসছে রিনির।
করা যাবেনা কেন?
আমি যদি সপ্তাহে একদিন এখানে আসি, কিভাবে কি করেন দেখতে চাই।ড.ফারুখ সম্মতি দেন।
আচ্ছা চলুন ওদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
রিনি ড.ফারুকের সাথেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
আমার ওয়ার্ক ফোর্স।
নেশান গড়ার একটা সুন্দর প্রচেষ্টা আপনার এই কাগজের মধ্যে দিয়ে।
না সেভাবে ভাবিনি। সত্যি মিথ্যা র ফারাক,মেকি জীবন আর বাস্তব কি বা রাষ্ট্রের ভাবনার মুখোশের কারিগরি টা চিনে নেওয়ার চেষ্টা।সবটা এখন ই একদিনে হবেনা।মনের দেওয়ালে তে মরচে পড়েছে সেগুলিকে পরিষ্কার করতে হবে।ওরা নিজেরা নিজেদের তৈরী করতে পেরেছে।এখন তার প্রতিফলন কাগজে তুলে আনার জন্য যাচাই করাটা ওরা আয়ত্বে এনেছে।
ওরাই সব রেডি করে তবে পুরো কাগজ রেডি হলে আমি দেখে না দেওয়া অব্দি প্রিন্ট এ যায়না।আমি যেখানেই থাকিনা কেন আমি নিজে হাতে এডিটের কাজ করি।রিনি চুপচাপ শুনে যায়।
অনেক কিছু জানার সুযোগ হল।এখন আমি যাব আর প্রতি রবিবার আসব।একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে নিয়ে রাস্তায় পা ফেলে।
সপ্তাহ দুয়েক যাওয়ার পর রিনি র কেমন যেন একঘেয়ে মনে হল।সেদিনের পর ড.ফারুক শুধু রিনির উপস্থিতি দেখেছে নির্লিপ্ত ভাবে।
রিনি অন্যের নজর বাঁচিয়ে ড.ফারুকের দিকে তাকিয়ে দেখে। বয়স ষাটের র বেশি অথচ কি হ্যান্ডসাম এখনো।
রিনি নিজেই ভাবে উনি এত গম্ভীর কেন? সেমিনার বা ক্লাসের বাইরে এক অন্য মানুষ।
অফিসের এই ছেলে মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব নয় রিনি চায় ড. ফারুকের বন্ধুত্ব।
আমি যে কলামটা লিখলাম সেটা একটু দেখবেন?.রিনি কথাটা বলে কয়েক সেকেন্ড কোন উত্তর না পেয়ে আবার জিজ্ঞেস করতেই ড.ফারুক বিরক্তি নিয়ে বললেন রেখে যান।
রিনির বুকের মধ্যে জোরে ধাক্কা লাগলো।
আমি ড.রিনি সেন।আমার ও একটু মর্যাদা আছে।
রিনি ঘণ্টা খানেক অপেক্ষা র পরও ডাক পেলনা।
কিছুক্ষনের মধ্যে ড.ফারুককে বেরিয়ে যেতে দেখে রিনি বেরিয়ে আসে।সপ্তাহ খানেক কেটে যায়।রিনি সে সপ্তাহে অফিসে ফারুক কে দেখতে পায়নি অফিসে।
বাড়ি ফিরে দুবার ফারুক কে ফোন করে কিন্তু ফারুক
ফোন কেটে দেয়।
একটা মানসিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আরো কয়েকটা দিন কাটে।রিনি ফিলগুড অফিসে যাবার উৎ সাহ পায়না।
সবমিলিয়ে ১৩/১৪ দিন সময় পেরিয়ে গেছে ফারুক কে কাছ থেকে দেখার ইচ্ছে টাকে মন থেকে মুছে ফেলতে চায়।
এত দিনের মানসিক যোগাযোগটা ছিন্ন করে এক অন্য রিনি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করে। আবার বাস্তবে ফিরে অধ্যাপনার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে।
বেশ কয়েকবছর কেটে যায়।
একটা ছোট ফ্ল্যাটে একাই থাকে।বেশ ভালো আছে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে।আর হৃদয় জুড়ে ড.ফারুক আছেন নিঃশব্দে।।