গল্প:নেশা

গল্প:নেশা

নেশা
জয়িতা ভট্টাচার্য

হাল্কা আলো এখনো ঢুকছে জানলার বুক চিরে।এখনো উত্তাপ লেগে আছে উপত্যকায় ।
স্তনবৃন্তে দাঁতের সাক্ষর,ঠোঁটে রক্তস্বাদ।ব্যথাতুর আয়েসে পাশ ফেরে পর্ণা।আরো একটু।
আরো কিছুক্ষণ মৌজ করে কোঁচকানো চাদরের আরামে।চৌম্বকে ডুবে যায়।এখন সময় তার।
একার।
প্রতাপ চলে গেছে অনেক্ষণ।রক্তাক্ত ঠোঁটে আরো একটা আলতো চুমু খেয়ে।
কিছু এসে যায় না তার।নিকোটিনের গন্ধ দামী ডিও ছাপিয়ে,
“স্ল্যাপ মি বেবি ,
মোর ……
উফফ
আরও
গিভ মি পেইন…
দাও
দাও…
ঘরের সিন সিন এসির বাতাস প্রতিধ্বনি করছে এখনও।লেহনে সুখ।
“আহ্হ” বাছা বাছা খেউড় বেরোয় মুখ দিয়ে শিখরে পৌঁছে প্রতাপের আর আরো বন্য হয়ে ওঠে পর্ণা।
তার কোনো ভালোবাসা নেই।
তার কোনো প্রেমিক অথবা স্বামী নেই।কিবা যায় আসে!
ভালোবেসে কে কবে বন্য হতে পারে!
পর্ণার কোনো প্রেম নেই।তার নেশা আছে শুধু।
কাচের জানলায় গোল বিবাহিত গোধূলির টিপ।ঘুম পাচ্ছে পর্ণার ক্লান্তির ঘুম। অবসাদ।স্খলনের পর পড়ে থাকে শূন্যতা।
পর্ণা একসময় উঠে পড়ে। বাথরুমে নিঃসরণে কষ্ট ,চারিয়ে আছে ব্যথা।যে কদিন ঠোঁট ফুলে থাকে,ব্যথা থাকে পর্ণা আমেজে থাকে।
পাশের ঘরে স্টুডিও। সাদা ক্যানভাস অপেক্ষা করছে রং।
অতীনকে ভালোবাসত কিনা মনে নেই আর।তবে সঙ্গমটা অভ্যেসে।অতীনের ছিলো নরম সরম যৌনতা,পর্দার আড়ালে চুপি চুপি ।গাড়ি দুর্ঘটনায় অতীন চলে যেতে সে যে অনেকটাই ভেঙে পড়েছিলো ঠিক তা নয়।আর্থিক অবস্থা একই ছিলো।
হঠাৎ অনুভব করেছিলো অতীন কে সে ভালোই বাসেনি কোনোদিন।
বিহ্বল দিনগুলোয় কর্তব্য। রাতে একা আর মলিন চাঁদের গায়ে মথ।
মা আর কাকীমা বলতেন “সন্তানকে নিয়ে বাঁচো।তুমি ত মা।” অতীন ছোটোবেলার বন্ধু ছিল।শাশুড়িকে কাকিমা বলতে বলতে পুত্র বধূ হয়েও আর মা বলা হয়নি।
সদ্য স্বামীহারাকে আর কিবা বলবেন তাঁরা।মন মেনে নিয়েছিলো
কিন্তু
শরীর অবাধ্য।সে পোষ মানেনি।সেসব বড়ো উত্যক্ত হবার দিন।
উদগ্র কামনাকে অবদমন করার দিন……
সিঁড়ি তে পায়ের আওয়াজ। চুড়ির মত হাসি-কথা।সন্ধ্যাবেলা রুচিরা কমপ্লেক্স সরগরম।
রাস্তার আলোগুলো জ্বলে ওঠে। আর ঘরেও জ্বলে উঠেছে আলো।
পর্ণা গুনগুন গান করে ।চা বানায় খুশীতে। ঠোঁটে র কোণে হালকা হাসি লেগে আছে। প্রতাপ বড়ো সুন্দর করে তাকে অবিন্যস্ত করে দেয়।
একমাত্র মেয়ে দিল্লী উনিভার্সিটি তে এম এস সি করতে গেছে ছেলে হোস্টেলে চলে গেলো এঞ্জিনিয়ারিং পড়তে।নিয়মিত ফোন করবে তারা ধরা বাঁধা কথা হবে,আজকেও।ভিডিও কলে মা,কাকীমা,ছোটো ননদ আসবে।ওরা সকলেই একাকী বিধবা নারীর প্রতি সহানুভূতিশীল।
পর্ণার কর্পোরেট চাকরী আর দৌড়ঝাঁপের পরেও শরীর ক্লান্ত হতে চাইত।
একথা কি বলা যায় কাউকে!
সে ত মরেনি।
মরেনি তার কামনাও……।
এমনকি ইদানিং অতীন হাঁপিয়ে যেত, উত্তাপহীন হয়ে যেত সেকথাও বলা যায় না কাউকে।
” জীবন্ত নারীর ক্ষিদে পায় পর্ণা”__ তার কলিগ কর্পোরেট সি ই ও রাজেশ আগরওয়াল এক অন্যরকম রাতে তাকে বলেছিলো প্যারিসের হোটেলে ।তবু সে ছিলো ব্যতিক্রমই।
অতীনও জীবিত তখন। শীতল দাম্পত্যে আরো অনেকের মতই সাঁকো সন্তান।
নগরের অন্যতমা চিত্রশিল্পী সে __ সুপর্ণা ব্যানার্জি,অনন্ত যৌবনা যার পেছন পেছন তখন স্তাবকদের দল।
তবু অতৃপ্ত থাকে সে।যা চায় তা কেন যে ফুটিয়ে তুলতে ব্যর্থ হচ্ছে বারবার।এ ব্যর্থতা তার একান্ত নিজস্ব।এভাবেই ঋতু বদলায়।
তারপর অনেক শীত।উষ্ণতাহীন রাতের কামড় যোনিতে, অব্যবহৃত স্তনে, মনে…
মন! মন বলে কিছু হয় কি,যদি উপোসী থাকে শরীর!
নিজেকে বড় ভালোবাসে পর্ণা। আরষ্ট যোনিবৃন্তে স্নেহের হাত বোলায়।
টিভি তে খবর দেখে দার্জিলিং চায়ের সুবাসে।মোবাইলে চোখ বোলায় দ্রুত।
জানলা গলে নিটোল চাঁদ কুশল সংবাদ নেয়।
পর্ণা সুন্দরী। নিজেকে যত্নে পরিচর্যা করে সে।বুটিকের শাড়ি,ম্যানিকিউর,ফেসিয়াল আর বাহুতে ট্যাটু দেখে ভি আই পি গিন্নিদের ভ্রু কুঞ্চিত হয়।
একাকী বিধবার প্রতি সব সহানুভূতির প্লাবন স্তিমিত হয়।
শুভাকাঙ্ক্ষীদের কটাক্ষ উপেক্ষা করতে জানে সে। এভাবেই রাজেশ আসা যাওয়া করে।একদিন রাজেশও হয়ে যায় প্রাণী থেকে শুধু পুরুষ।এভাবেই সুমন লণ্ডন থেকে ফিরে এসে হঠাৎ জীবনে প্রবেশ।তবু রং ফিকে থাকে ক্যানভাসে।
এভাবেই এক মেঘলা আকাশ বিকেলে মিন্টোপার্কের মোড়ে পাশাপাশি গাড়িতে স্কুল বন্ধু প্রতাপের সঙ্গে দেখা।
তারপর গল্পটা দ্রুত অলিপাব থেকে বাড়ির ডিনারে একান্ত হয়ে যায়।
প্রতাপের সঙ্গে তার কোনো মিল নেই।
অতীনের সঙ্গেও ছিলো না।কী এসে যায় তাতে।
তবুও একাকী নারীর খিদে পায়।বিধবা নারীর খিদে পায়, ছাপোষা নারীর খিদে পায়।আর সকলের মত পর্ণা সেই খিদে চেপে দেবী হতে চায় না। সঙ্গম তার নেশা।
আচম্কা ঝড়ে উড়ে গেলো
মাঝ- দরজার পর্দাটা।পিপাসার্ত ছিল পর্না।ভীষণ।প্রতাপ মিটিয়ে দেয় তার সেই দেহের তিয়াস।

রাত দুটো।পর্ণা এখন যোগী।কামহীন, বাহ্যজ্ঞানহীন,একমনে রঙের পোঁচে সেজে উঠছে ক্যানভাস তৃপ্ত নগ্নিকার হাতে।