সুবীর সরকারের কবিতা

সুবীর সরকারের কবিতা

বাঁক

ধানগাছের হাওয়া।গোপন গানের মত ঘিরে ধরে ঘুম ও তন্দ্রা
আততায়ীর ছুরি নিয়ে আলোচনা পড়েছিলাম
বিদেশী জার্নালে
কুয়োতে বালতি পড়ে গেলে
কেমন বিষাদময় হয়ে ওঠে তোমার মুখ
কখনো ব্যান্ডেজে জড়ানো মেঘ দেখিনি
হিজল গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কতবার
আত্মগোপন করেছি
কলোনির পাশে হিমঘর
বিকল্প নেই বলেই তো ইদানিং হাততালি দিই না
নদীর প্রতিটি বাঁকে কেবল মায়া ফেলে আসা

সেমিকোলন

বাঘবনে বিলাতি কুকুর।প্রবল ঝগড়াঝাটির পর লাজ ও লজ্জা খুলে
সাজঘরে তুমি
রিংমাস্টারের উপর নির্ভর করে কতটা জমবে
সার্কাস
তুমি পার্ট ভুলে যাওয়া যাত্রাশিল্পী
গণবিবাহের পাশে দাঁড়িয়ে হাই তুলছো
তোমার কোনো মৃত্যুভয় নেই
তোমার পড়ার টেবিলে মুগ্ধতম বেড়ালের মত
শুয়ে থাকছে কেউ
মিছিলে মিছিলে ভরে ওঠা হাটবার
অন্ধ স্কুলের ঘন্টার মত একা হতে চাইছ
তোমার রোদচশমায় ছায়া ফেলে দু চারটে
আর্মিক্যাম্প
কোথাও কিছু থাকে না
জাগরণ নিয়ে ভুলে থাকতে হয়
ঘুম
হিরামনি নার্জিনারীর সাথে কথা সেরে যখন
ফিরে আসি
তুমি তখন তপ্ত দুপুরের সাক্ষাৎকার নিচ্ছ
তুমি তখন বিছিয়ে রাখছো নির্জনতা
তারপর কতবার আমার প্রবীণ চোখ জলে
ভরে উঠলো
আমি বুঝে গেলাম তোমার কাছ থেকে সরে
যেতে হবে আমাকে
সেতু ভেঙে যায়
সম্পর্ক ভেঙে যায়
আস্ত এক এসাইলামের মত হয়ে ওঠে জীবন

স্মৃতি

আমি মৃত্যুর আগে একটু জোনাকী দেখতে
চেয়েছিলাম
জলের সামনে দাঁড়িয়ে
জলস্রোত লিখতে চেয়েছিলাম
আস্তিন গুটিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসছে
মৃত্যু
কাদার উপর দিয়ে হাঁটছি
ছুঁড়ে দিচ্ছি পুতুলের বাক্স
আমার কোনো বান্ধবী নেই
বান্ধবীদের হাতব্যাগ থেকে কোনোদিন চকলেট
পাইনি আমি
আমি কিন্তু মেয়েদের শোনাতে চেয়েছিলাম
রক্তপাতের কথা
যুদ্ধ ও বল্লমের কথা
কামানের পাশে হেঁটে যাওয়া নির্জনতার
কথা
তোমার নাম লিখে আকাশে উড়িয়ে দেব
বেলুন
চড়কের মেলা থেকে নিয়ে আসবো ভাঙা
আয়না
আত্মহত্যার আগে তোমার সাথে আর দেখা
হবে না
আত্মহত্যার পরেও দেখা হবে না আমাদের
শহরে গান বাজবে
উড়ে যাবে বসন্ত কোকিল
খরা ও বন্যার স্মৃতিতে খুব দুলে উঠবে তুমি

সম্পর্ক

ভেঙে যাওয়া সম্পর্কের নাম তাঁবু দিলাম
পানপাত্র কেটে লিখলাম মাটির কলস
ব্যাক্তিগত পরিসরে এখন খাটো হয়ে আসা
মোমবাতি
পাখির ডাকে শুশ্রুষা থাকে।
আর ওষুধ নিরিবিলি করে
দেয়।
সারা গায়ে ঘামাচি মেখে দূরের পাহাড়ে বেড়াতে যাবো
সেই কবে মরে যাওয়া দিদিকে খুঁজবো।
গুহার মধ্যে লুডু খেলছে বাচ্চা লামা
বৃষ্টি আসার আগে এখানে বেলুন ওড়ে
সারারাত বন্দুকযুদ্ধ শেষে সৈনিকের কান্নার
শব্দ
সম্পর্ক ট্রাপিজের খেলা।
কলাবাগানে ঘুরে মরা একাকী বেড়াল।

বিবৃতি

আত্মহত্যা আসলে একটি বিদেশী শব্দ।
সুতরাং আত্মহত্যা করতে গেলে ধরে রাখতে হবে চোখের জল
আমি জ লা ধা রে ছেড়ে দেব ব্যাঙ ও ব্যাঙাচি
তারপর নদী ও নদীনালা।
তারপর গোপন স্লুইস গেট।
আমাকে ক্ষমা করুন,আমি দ্রুতগামী হতে পারছি না
এই তো,ওল্টানো নৌকোয় কেক,প্যস্ট্রি

কীটনাশক
আর ধান খেয়ে পালিয়ে যাওয়া পাখিরা