আশরাফ হাসানের কবিতা

আশরাফ হাসানের কবিতা

মৃত্তিকাচোখে সুলোচনা

মর্মন্তুদ আত্মার কাছে তুমি বারবার কেনো আসো ?
না আসলেই তো পারতে
নিকোটিন-প্রেমের মতো তোমার স্বার্থসোহাগী চোখ
ধূসর আনন্দের ছেঁড়া পালক জড়ানো ঈগলঠোঁট
চাঁদের গর্তের মতো খানাখন্দকে ভরা বুকের ইজেল
ডানার ককপিটে লুকোনো ক্লাইভের খঞ্জর l

বসন্তের হাওয়ায় তুমি লেলিয়ে দিয়েছো যে বখাটে আগুন
নিরুর বাঁশি না বাজলেও পোড়াচ্ছিলো স্বপ্নের রোম
দ্বিধার পাহাড় ঠেলে তবুও পৌঁছতে চেয়েছি ঝরনাপোত্যকায় l

বৈরী স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে
যে মহানুভব সাহস
আমি তার আখ্যানভাগে ছড়িয়ে দিয়েছি বর্ণের বিভা ;
তুমি যতই কোম্পানিরাজ্যে নিজেকে অধীশ্বর ভাবো
অরণ্যমময় করে তুলো জোছনা ও রোদের গল্প
বনেদি ভূস্বামীর মতো আলখাল্লায় ঝুলিয়ে দাও
ভণিতার যৌবন
আমি মেঘের রাজ্যে উড়িয়ে দেবো একঝাঁক হংসবলাকা
বাসন্তী রোদের গন্ধে কিংবা অঘ্রান-উৎসবে সৃষ্টিমাতাল হবো আরো একবার
কোনোদিন না-ই-বা তাকালে মৃত্তিকাচোখে সুলোচনা l

দুর্বোধ্য কবিতা

আমার কবিতা নাকি তোমার কাছে দুর্বোধ্য ঠেকে l
অথচ আমি দেখি তার চেয়েও দুর্বোধ্য স্বার্থের পরিভাষা ; প্রতিহিংসার খাপখোলা নগ্ন শব্দের উন্মত্ততা আরো বেশি অবোধ্য l লোভাতুর ঈগল চোখের দৃষ্টিকে পাঠ করা ততোধিক কঠিন l স্পাইডার জালের মতো তোমার অন্তঃপাঠ কবিতার চেয়েও অনুবাদ-দুরূহ l বেদনার প্রেস থেকে তুলে আনা অসহায় শব্দগুলোকে তুমি তো একেবারেই পাঠ করতে জানো না l রাতের নিঃসঙ্গ বুকে ডুকরে ওঠা ডাহুকের স্বর তোমার চির অচেনা l বিভেদের চোরাবালিতে আমাকে ডুবিয়ে যখন তুমি দিব্যানন্দে স্নান করো তখন তোমাকে আমি একেবারেই অনুবাদ করতে পারি না l গরিব আলীর ঘামের ঝাঁজালো গন্ধ হজম করতে না পেরে তুমি যখন বেচারার চাকুরীর সনদ চড়ামূল্যে সিন্ডিকেট মার্কেটে বিক্রি করো তখন তোমাকে অবিকল দুর্বোধ্য কবিতার মতোই মনে হয় l মানুষের বদলে যখন তুমি পাহাড়ে অর্বাচীন পাথর ও মরুভূমিতে নেকড়ের চাষাবাদ করো সে সময় তোমাকে ভাবলেশহীন বিমূর্ত শিলালিপি মনে হয় l আজকাল চাঁদে গর্তের দাপট যেমন চাউর হয়ে যায় তেমনি তোমার ভোজের ছলাকলা আমি কোনোদিন তর্জমা করতে পারি না l

আহা আমার কবিতার পরিবর্তে তুমি যদি একটিবার
ভাষান্তরিত হতে পারতে…

চায়ের কাপ ও নগরবাণিজ্যের উপধারা

চায়ের কাপ থেকে উড়ে যাচ্ছে রাত্রিবিষণ্ণতা l ধূম্রের মতো তরল নিঃশ্বাসগুলি জমা হচ্ছে একাকী দাঁড়িয়ে থাকা আকাশে l চাঁদের গোধূলি থেকে শুধুই ভেসে আসে অকাল অস্তমিত হওয়া জোস্নারোদের গল্প l সাপুড়ের ঝুপড়ি থেকে লাটিমের মতো বেরিয়ে আসে ছেলেখেলা মেয়েবেলা l সারাবেলা ডুব দেয় মাছরাঙা কাদামাটির কষ্টজলে l চায়ের কাপ শেয়ার মার্কেটের শূন্য বারান্দায় ঝুলে থাকে সর্বস্বান্ত বিনিয়োগকারীর মতো l

অস্ফুট নৈঃসঙ্গনিনাদে ভেঙে যাচ্ছে কাঁচঘেরা অনুভূতির ঘরদোর l সান্ধ্যকাকের চিৎকারের মতো সারি সারি আলিশান বাড়িগুলো রওয়ানা দিয়েছে অঘোষিত প্রস্থানবাণিজ্যে l

হায় ! গোধূলি-গোধূলি খেলতে খেলতে এখনো জানা হলো না বেতের বন কিম্বা নগরবাণিজ্যের উপধারাসমূহ l