অণুগল্প: প্রেমের ডিজিটাল রূপ

অণুগল্প: প্রেমের ডিজিটাল রূপ

প্রেমের ডিজিটাল রূপ
সাইফউদ্দিন আহমেদ বাবর

বর্ষার বিকেল।

টানা দশদিন বৃষ্টির পর আজকের দিনটা বেশ রৌদ্রজ্জ্বল,ঝক ঝকে ছিলো।আকাশে কালো মেঘের ওড়াওড়ি থাকা সত্বেও বৃষ্টি না হওয়ায় দিনটি বেশ সুন্দর ছিলো।
আর সুন্দর দিনটিকে আরো সুন্দর করে তুলার জন্যই রাকিব-নাজনি কে ফোন দিয়ে বলেছে,বিকেলে পার্কে এসে দেখা করতে।
নাজনি এসেছে।
পার্কটি লোকে লোকারণ্য।সব সময় যেমন হয়ে থাকে।তারা অনেক খুঁজে খুঁজে লেকের ধারে একটা ঝোপের আড়ালে বসেছে।
‘ঠিক চারদিন পর আমাদের দেখা হলো’
বললো,রাকিব।
নাজনি বললো,
‘চারদিন আগে তুমি আমাকে দেখেছো,ছাদ থেকে আমি তোমাকে দেখতে পাইনি’
নাজনি হাসলো।
আবার বললো,
‘ছাতাটা এমন ভাবে ধরে রাখলে দেখা যায়’?
‘কি করবো নাজনি?সেদিন কী বৃষ্টি ছিলো আর সঙ্গে ছিলো দমকা বাতাস’
‘বারে,আমি বুঝি ছাতা ধরে থাকিনি’?
‘তুমি তো ছাদে দেয়ালের আড়ালে ছিলে’
নাজনি বললো,
‘সেদিন তুমি আমাকে বেশিই দেখে ফেলেছো তাইনা রাকিব’?
‘মানে’?
একটা দীর্ঘ-নিঃশ্বাস ছাড়লো নাজনি।
‘এখানে বসার পর থেকেই তো দেখছি মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছো।তাও গভীর
মনোযোগ দিয়ে’
রাকিব লজ্জিত হলো।
‘কী যে বলো না নাজনি!ইয়ে…এক ফ্রেন্ড একটা ঝামেলায় পড়েছে তাই পরামর্শ চেয়ে ম্যাসেজ করছে।আমি তার রিপ্লাই দিচ্ছিলাম’
রাকিব লজ্জিত ভঙ্গিতে নাজনির দিকে তাকালো।তারা মাঝ খানে হাত দুয়েক দূরত্ব রেখে বসেছে।
নাজনি মুখটা কালো করে বললো,
‘তোমার ফ্রেন্ডের সাথেই থাকলে আজ পারতে!আমাকে খামোকা এখানে আসার কষ্ট দিলে কেনো’?
‘রাগ করোনা নাজনি প্নিজ।এই দেখো আমি মোবাইল পকেটে রেখে দিচ্ছি’
সেই মুহুর্তে নাজনি র ফোনে ম্যাসেজ এলার্টের শব্দ হলো।নাজনি মোবাইলে মন যোগ দিলো।

সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত্য দু’জনের মোবাইল স্ক্রিনেই দৃষ্টি নিবন্ধ রইলো।ম্যাসেজ আদান প্রদানের মাঝ খানে ছাড়া ছাড়া কিছু কথা হলো।
এখনকার প্রেমিক,প্রেমিকেরা সরাসরি কথা বলার চেয়ে এস এম এস এ,চ্যাটিংয়ে মজা পায় বেশি।তারা পুলকিত হয় ভিডিও চ্যাটে!

রাকিব আর নাজনি,সন্ধ্যার সঙ্গে সঙ্গেই পার্ক থেকে বেরিয়ে যে যার বাসার দিকে চলে গেলো।
তারা একে অন্যের দৃষ্টির আড়াল হতেই শুরু করলো এস এম এস।
এস এম এস এর সুবিধা হলো-এক সঙ্গে অনেকের সাথে চালিয়ে যাওয়া যায়।ধরা পড়ার ঝুঁকি জিরো পার্সেন্ট।কথা বললে সেটি কি সম্ভব?