জ্যোতি পোদ্দারের কবিতা
বৃত্ত ভরাট বানানো তিলফুল
এক
দুধ সাদা চিবুকে ঘনকালো তিল সত্যি সত্যি তিলফুল
নইলে স্পট– ফ্যাকাশে দাগ
ফেয়ারি এণ্ড লাভলি দিয়ে লুকাতে হয় জন্মদাগ।
প্রিয় বান্ধবীর চিবুকে তিলফুল কুড়াতে গিয়ে দেখেছি
কোন কোন দুধ সাদা চিবুক জাস্ট ব্যাকগ্রাউন্ড।
কালোরঙে বৃত্ত ভরাট বানানো তিলফুলে
হাসির ঝিলিক ধরলেও
শীতের উষ ধরে রাখতে পারে না।
দুই
নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেও একটু দূরে দাঁড়িয়ে দেখি
আমি মোর্চার ভেতর লাফাচ্ছি।
এতো এতো ভীড় আর হল্লা আর চলন্ত সব হাঁট বাজারের
পাতলা কুয়াশা।
কোথাও কোন স্থীরচিত্র নেই।
মোর্চার ভেতর সব দলা পাকানো জটে জটিলে জটিলেশ্বর।
অথচ আমি নেই।
সব চুল তেল চিটচিটে অন্ধকার আঁকা।
ভীড়ের ভেতর আমি নেই।
আমি অনেক দূরে—একাকী নিশান
পতপত করে বাতাসে কাঁপছি উঁচু বাঁকা বাঁশের মাথায়।
নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলেও নিজেকে দেখি মোর্চার ভেতর।
মোর্চার ভেতর ব্যাঙাচি আমি একাকী নিশান পতপত করে উড়ি।
তিন
যে-তুমি অনেক দূরে সে-তুমিকে ধরতে চেয়েছি।
হাত ও হাতিয়ার বাড়িয়েও ছুঁতে পারিনি।
চোখ মেলে দেখতে চেয়েছি তোমার অদেখা
কিংবা বলতে পারো অদেখা তোমাকে।
পারিনি– এ কথা নিজে জানি;কিন্তু বলি না।
আমার হয়ে আমার মতো করে পারিনি
ছেনেছুড দেখতে সমগ্র মানচিত্রের মাটি।
যতটুকু পেরেছি দেখেছিরঅপরের তোলা ছায়াচিত্র।
তোমাকে আমার হয়ে আমার মতো করে দেখতে পারিনি।
কাছে কিংবা দূরে যেখানেই থাকো
এবার চোখ অন্ধ করে বিষ্ফারিত চোখে
দেখব অদেখা তোমাকে।
চার।
একবার দুইবার নয় — বহুবার বহুবার
উঁচুতে খুব উঁচুতে ঢিল ছুঁড়ে ছুড়ে
ছুঁতে চেয়েছি কোন উঁচু নিশান।
কোন উঁচুই আমাকে শান্তি দেয়নি।
যদি ইটের টুকরো পাই ইটের টুকরো
কিংবা ভাঙা পাতিলের কোন চাঁড়া–
খুব নিচু হয়ে খুব উঁচুতে থাকা শিমুলের ডাল
ঢিল মেরে মেরে ছুঁতে চেয়েছি– পেয়েছিও বটে।
কিন্তু কোন ছোঁয়াই আমাকে শান্তি দেয় না।
কেবলই বুকের ভেতর খচখচ করে।
উঁচুর উলম্ব রেখা আঁকতে চাইলে আমাকে
বারবার মাটিই ছুঁতে হয়।
মাটি ছাড়া উঁচু স্পর্শের দূরত্ব মাপতে পারি না।
পাঁচ
আমি আলাদা-ই।
তুমিও।
গেইটে মুকুট পরে আছে যে ছড়ানো বাগানবিলাস
সেও আলাদা।
পোয়াতি বিড়াল গুটিশুটি হয়ে আস্তে আস্তে চিবাচ্ছে
যে ট্যাঙরা মাছের কাঁটা সে-মাছও শুধু আলাদা নয়
মাছের ঝুল আলাদা
রাঁধুনি আলাদা
বাড়ির কর্তা আলাদা
উনুনের আঁচ আলাদা
এমন কী আলাদা মাছ বিক্রেতাও।
স্বাদ ও সাধও যার যার মতো করে ভিন্ন।
ফাঁক ফাঁক দূরত্ব নিয়ে বৃত্ত ব্যাপি ছড়িয়ে আছে
আলাদা আলাদা ব্যক্তি ব্যক্ত ও ব্যক্তিত্ব।
পরিধির কাজই এমন ধারা।
আলাদা-ই তাঁর সৌন্দর্য ও অনন্যতা।
পরিধি পেরিয়ে কেন্দ্রমুখী হলে দেহ ঝুরঝুর
ক্রমেই দেহ ঝুরঝুর ঝুরঝুর
আর বিন্দুতে পৌঁছুলেই নেই হয়ে থাকা নানা মুখ ও মুখশ্রী।
One thought on “জ্যোতি পোদ্দারের কবিতা”
Comments are closed.