অসিকার রহমানের কবিতা

অসিকার রহমানের কবিতা

সে কবি শঙ্খ ঘোষ

কেমন করে শিরদাঁড়াটা রাখবে সোজা
শিখিয়ে গেলো হাজার প্রতিকূলে,
দেখিয়ে দিলো তুচ্ছ ধুলোয় রত্ন খোঁজা
টুকরো হীরের আবাসভূমি, বৃক্ষমূলে।

এই পৃথিবীর মাথায় এখন, দারুণ অসুখ বিসুখ।
আকাশচুম্বী হিংস্রতা, দিগন্ত কাঁপা রোষ
এই পাঁজরে গাঁথলে ঘুচে, মহাকালের দুখ্—
বরাভয়ের মণ্ত্র শোনায়, সে কবি শঙ্খ ঘোষ।

সৃষ্টি তোমার দুর্নিবার বিশ্ব করেছে জয়।
তোমার জীবন দর্শনে নেই দুঃখ, শুধুই অশোক,
উত্তোলিত মানুষ ভোলে, অপ্রেমে হেলায় শোক।

পড়ে থাকা পথে হিংসাকে তুলে, হে নির্ভয়,
মুছিয়ে দিয়েছো হিংসার সব দোষ —
কোন সে দেবতা ! সে তো তুমি, কবি শঙ্খ ঘোষ।

চোরাস্রোত

নদীতে নেমেছে হিংসা, হিংসার গাছ
হিংসা ফলেছে গাছে
পাতার শরীর থেকে ঝরে পড়ে রক্ত
হিংসার কোরাসে জন্ম ভুতুরে নাচ
নদীর জলে শীতলতা আছে
হিংসুটের আশ্রয় আছে কিনা বোঝা বড়ো শক্ত।

জলসেতুহীন নদী, হিংসা সাঁতার দিয়ে যায়,
মানুষের আশীর্বাদ চোরাস্রোত ডাকে আয় আয়।

সংগ্রামী কাব্যের অভিলাষী

বাতাসের অক্সিজেন মিশে থাকে কাদা জলে
মরা মানুষের চুমু খায় শেওড়া গাছের মগডাল
আকাশের চুল ধরে দোল খায় ভূত, ক্ষুধার্ত মলে
চেঁটে চেঁটে খায় সে বেছে বেছে নারী কঙ্কাল।

সোনার সূর্য ওঠার পরে পঞ্চমের মাঠ থেকে
পৌষালি ধান তোলা শুরু হয় কৃষকের ঘরে
কাস্তের ডগায় জ্বলে উঠে আর্তনাদের আগুন
নির্বাপিত হাঁটে সে শত শতাব্দী ধরে।

নদীর চরার থেকে তুলে আনা কঙ্কাল গুলি
যায় না চেনা কোনটা যে কার করোটি কিংবা পা
তারাও বলে না, এই আছি আমি তোর বংশধর। ‘
ভীষণ শব্দে বাতাস কাঁপায় হাড়-মজ্জার ঘুলঘুলি

সোনালী মাছের গায়ে শুয়ে থাকে কবিতা
মৎসকন্যা হয়ে রত্নরাজ্যে মহারানী —
মানুষের দুর্দিনে কবিতা বড়ই বিলাসী।
এদিকে ফুটপাত সংগ্রামী কাব্যের অভিলাষী।

আকাশে হারানো চাবি

এখানে সবকিছুই হতে পারে তোমার
আকাশ বাতাস নীল জল
মরিচীকাময় মরুস্থল
বলো তোমার ছাড়া এ সকল হবে কার?

উড়ন্ত আমি করেছি বিশ্ব পরিক্রমা
বাতাসে নিয়েছি একবুক নিশ্বাস
মরু জঙ্গলে গড়েছি আবাস
যথার্থ জীবিত তবু মরে অশ্বত্থমা।

সবই জানো তুমি
একটুকরো ভিটে আমার ঘর —
ক্ষীণ বাতাস এখানে অনড়
বিস্ময় জগতে আমার অতি ক্ষুদ্র বাসভূমি…

তাও কি তোমার বলে অসংকোচে করবে দাবি?
এ ঘরে লুকানো আকাশে হারানো চাবি !