বিকাশ চন্দের কবিতা

বিকাশ চন্দের কবিতা

আগুন

এখনতো উত্তপ্ত কড়াইয়ের পেটে দগ্ধ এপিঠ ওপিঠ
আবারও তো সেই আগুনের কাছে অন্তর্দাহ,
পেছনে পাহারাদার খালি পেট হাঁ মুখ বাঘ
তবুও প্রেম পরিহার অশ্রু জলের কোমল নীলাঞ্জলী,
শহর গ্রাম ভালো বুঝছে থম মেরে বসে বনতলি
হা পিত্যেশ নিরন্ন কুঁড়ে ঘর জানে অমল অন্তর,
রাজনীতি রাজপথ জুড়ে প্রেমময় সময় কুয়াশা ভেজা
আলো ছবি ঘরে চোখের জল—
পরকিয়া কথা বোবা কোকিল বোঝে।

রাজ ভবনে সিঁড়ি জানে পায়ে পায়ে লোভী মানুষের অগ্রগতি
গ্রামের পুকুর কচুরিপানা জানে কারচুপি নরপতি নির্বাচন,
শীতের কোকিলের মতো গাছ ময় বোবা পাখির নীরব উড়ান
পুকুর ঘাটে জল সইতে ডুবেছে সৌন্দর্য উঠেছে মায়া দেবী।

সংসার সংবেদী জানে সাদা পাতায় ভরে অনিন্দ্য জলছবি
চাঁদ শিশুর চলনের ছন্দ বোঝে না অলীক শাসন কলা,
ঘাসেরাও লজ্জায় অবনত সকালের চূর্ণ কুয়াশার আয়নায়
উতল ভাষার আড়ালে হারিয়ে গেছে প্রত্যাশিত উষ্ণ চুম্বন —
আকাঙ্ক্ষিত সকল বাসনা ফেলে জনার্দন দাঁড়িয়ে সেই আগুনের মুখে।

মা অক্ষর কান্না

জল জানে জমি জানে জন্মকাল ছুঁয়ে মাটি আলপথ
আয়ুকাল শুরু জানে হৃদয় ছোঁয়া আনন্দ নাকি কান্না।

আশ্চর্য মনোরম আত্মার আলো মুখ স্বাভিমান
মানবী প্রথমা অনন্যা নাকি দেবশিশু স্নায়ু,
সকাল কুয়াশায় দূর্বা ঘাসের কাছে অবনত মায়াতরু
শূন্য আকাশ আয়নায় ভাসে হাজার সূর্যক্ণা।

চাঁদ মহিমার গন্ধ ঝরে বকুল গন্ধী বুকে কোমল অগ্নিশ্বর
শিশুরা মানুষ হয় মানুষেরা বসে থাকে অক্ষর কবিতায়
অক্ষর শব্দে নিরহংকার কথাগুলো নিয়তি গহ্বরে,
আলো মাখে জল মাখে তালুবন্দি অক্ষর ঋতু কাল —
জন্ম মাটির রঙে পৃথিবীর রঙ হলে হাসে ভূবন পুরুষ।

এ সময় কবরে শ্মশানে মৃত্যুটুকুও শিউরে ওঠে একা
অরণ্য মেঘের কালোয় থমকে তখন বিষণ্ণ বৃষ্টি,
গাছ পাখি ফুলেদের অচেনা ভাষার শব্দের অমলিন ধ্বনি
লাল নীল গেরুয়া সবুজের কাছে লুকিয়ে গোপন তর্জমা —
সকল জন্ম কালের প্রথম কথার অর্থ কি মা অক্ষর কান্না !

থমকে জন্মকাল অন্ধকার জঠরে

মানব জমিন থমকে উড়ান বেলা শূন্য আকাশ তল
সামনে বিশাল খাদ পেছনে দুর্ভেদ্য প্রাচীর,
শীতের রক্তে বিপদের পথ দেখে অবলুপ্ত রাক্ষসের দাঁত—
ঋতু বদলে যায় তবুও ঋতু রাগ জানে অপেক্ষায় হিংস্র প্রহর,
অসহিষ্ণু রাজা জানে না তপস্বী জীবন বোধিবৃক্ষ পাতার স্খলন
ঘরভাঙা সময় খেলছে ধূর্ত নগর পালক—
আড়ালে মধ্যযুগ কপালে রক্ত তিলক হাতে মরণ হুকুমনামা।

বেদী মূলে শুয়ে আছে ক্ষুরধার সনির্বদ্ধ মৃত্যু খসড়া—
অদূরে ঈশ্বর পৌরুষ বিদগ্ধ মনের বাসনা বিকোচ্ছে ভক্তি অর্ঘ্যে
মানুষ জানে মুক্ত বসুন্ধরার সাথে হৃদয়ের অধিকার বসতি,
ভালোবাসা ঘিরে আছে রক্ত প্রবাল প্রাচীরে হৃদয় ঘ্রাণ—
দু’হাতে মাটির শরীরে পুষ্ট অঙ্কুর বোঝে জননী জানে গর্ভাদৃত ধান।

বাহুমূল ভেঙে উড়ে গেছে একে একে যত অবরুদ্ধ স্বরলিপি
কুলীন পদ্ম কথা বোঝেন একমাত্র সরস্বতী বোঝেনা পরম্পরা,
কোন রাজা রানী ভাবেনি তেমন সারিবদ্ধ দাঁড়িয়ে শিশু প্রশ্ন মুখ
নিমগ্ন কথায় বুঁদ হয়ে বসে আছে চেয়ারের অসুখ,
অদ্ভুত ভাবে কৃষক জানে মাঠে শস্যের আকাশ আত্মার অধিবাস
রঙ মেলানোর খেলায় থমকে আত্মা জন্মকাল অন্ধকার জঠরে।