জাহ্নবী জাইমার কবিতা

পুষ্পাঞ্জলি
বলেছিলে শীত ভেজা গোধুলী পথ হেঁটে সেঁজুতি সন্ধ্যায়
উঠবে মেতে আড্ডায়, আমার নীড়ের ফুল বাগিচায়
কুসুম কানন ফুলে ফুলে সুরভি ছড়াবে মনে
রাঙ্গা সালভিয়া, কসমস, দীর্ঘ গ্রীবার দ্বীপ্তিমান ক্যালেন্ডুলা
হাসি মুখে উচ্ছ্বাসিত জারবেরা, পিটুনিয়া, নীলাম্বরী লুপিং
কমলা বেগুনি অস্টার, বেগুনীর মাঝে সাদা ফ্লক্সফুল,
ললাটে দিয়ে শুভ্র বসনা রজনীগন্ধা, সাজিয়েছি নিজেকে,
তুমি আসবে বলে, ফুলের মাতাল গন্ধে খুঁজি তোমাকে
অপেক্ষায় গোলাপি সাদা বেগুনি গ্লাডিওলাস ডালিয়া।
বাহারী রংয়ের ফুল খোঁপায় গুঁজে যাব অভিসারে
তোমার প্রতীক্ষায় মল্লিকা, হলিহকও এন্টারহেনাম।
এমন কুহেলিকাময় পূষ্পশোভীত শীতের অপরাহ্নে,
অদূরে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মাতাল এই মন।
এক গুচ্ছ লাল গোলাপে ব্যাকুল অপেক্ষায় প্রতিটি প্রহর
এসো প্রিয় পূর্ণতা দাও, ভালবাসার উষ্ণ ছোঁয়ায়,
ভালোবাসি তাই পুষ্পাঞ্জলি অর্ঘ্য পরাবো গলায়।
কথা ছিল
কথা ছিল
একটি বলিষ্ঠ হাত বৈশাখে
গেরুয়া লেবুগন্ধি ভোরে
আমায় ধ্রুবতারা চেনাবে।
কিন্তু সে তখন শরতে
পারিজাত চয়নে রত ছিল।
কথা ছিল
একটি করুণাময় হাত আশ্বিনে
হলুদ পাখি কিংবা শ্বেত কপোত এনে দেবে।
কিন্তু সে তখন বসন্তের হলুদ বনে
পদ্মবিলে রাজহংসের সাথে মেতেছিল।
কথা ছিল
একটি ভালবাসার হাত গভীর মমতায়
আমায় পারস্যের গালিচা অথবা সবুজ প্রান্তর দেখাবে
কিন্তু সে তখন কার্তিকের কাশবনের বকের সাথে
কাশের ডগায় শিশির বিন্দুর হীরকদ্যুতিতে বিভোর
তাই জৈষ্ঠ্যের আগুনঝরা মধ্যাহ্নে
তৃষিত আমি এখনও গভীর প্রতীক্ষায়
কথা ছিল
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ার বনে।
দু’জন রেললাইনের মতো সমান্তরাল
হাতে হাত রেখে দূরে বহুদূরে যাবার
কিন্তু সে তখন…
অনাথিনী
কুসুমিত দিনের শেষে, অবিমিশ্র সন্ধ্যা ঘনায়
শীতের কুন্তল নগ্নতায়
ঈশানের হাড় কাঁপানো শীত
জনপদে অনাথিনী কাঁপানি ফণায়।
শীতের বিষাক্ত সরীসৃপ নিকট ঘনায়
কম্বলহীন একাকী প্লাটফর্ম সম্বল
জীবনের ব্যাকুলতা, আর্ত নিঃসঙ্গতা
অনাথিনীর বর্ষা, কাক ভেজা শরীর।
আসবে বসন্ত অপেক্ষায়, দক্ষিণা হাওয়া
তিস্তার আতপ্ত জলে ছায়া,
নীল প্রহরে মায়ার খেলা
কষ্টে জীবন, বন্যার জলে বিষাক্ত ছােবল।
জীবন বুঝি আজন্ম ঢেউয়ের কাপন
ভিটেহারা অনাথিনীর হৃৎকমল
অতল জলের গহ্বরে
কাড়লো জীবন প্রদীপ, অনাথিনীর বাবা মায়ের
অনাথিনী প্লাটফর্ম ঠায় দাঁড়িয়ে
অর্নিমিক অকস্মাৎ যদি…
শীত
এলো শীত ধবল বকের ডানায়
ধ্রুবতারা ভিজে এলো চাঁদ জোছনায়
ঝর্ণা ঝরে ব্যাপিত সাগর ঢেউয়ে
শীত এলো উষ্ণতা নিয়ে হৃদয়ে।
শীত এলো সরিষার কচিমনে লাউয়ের মাচায়
দূর্বা ঘাসে শিশির বিন্দু আঁকে মেঠো পথ পায়ে
পায় জোয়ার ভাটায় বাষ্পীয় ধোয়া শীতের পিঠায়
শীত এলো দরদ ভরা মায়ের কোলে।
এলো শীত মিষ্টি খুকুর নিক্কন নূপুরে
সরিষা ঘানি উদম উলঙ্গ দুপুরে
এলো শীত অতিথি পাখি বেসাতি জলসায়
এলো শীত আগুন পোহাতে গ্রাম বাংলায়।
রৌদ্র ছায়া
জলপ্রপাতের শব্দে জেগে ওঠে স্তব্ধ বনভূমি
স্বপ্ন শেষ হলে ঘুম থেকে জেগে উঠে আলোর ভুবন।
বিষন্নতা আঁকড়ে ধরে যুবতি আড়মোড়ে ভাঙ্গে।
স্বপ্নে পাওয়া অ্যাম্বারগ্রিসের মতো সুগন্ধময় হৃদরাজ্যে
কাছে আসা সুগন্ধি চিহ্নগুলো সারা শরীর স্বপ্ন ভূমি
কৃষ্ণচূড়া আগুন হয়ে ফুটে থাকবে সারা দিনমান
বসুন্ধরা মৌ মৌ গন্ধে মাতাল দুটি মন রৌদ্র ছায়ায়
বাস্তবতার চাদর অনাদর সময় তবু মায়ায়।
চন্দ্র ভ্রমণ
বাইরে যখন ভুবন জোড়া নষ্ট আলোর ফাঁদ
অন্ধকারে চাদর মুড়ে পাশের বাড়ির চাঁদ
আমার ঘর, ঘরতো নয় আট বাই আট খুপি
বর্ণমালায় প্রথম আলো, কেরোসিনের ঐ কুপি।
কি সারপ্রাইজ একপাল্লার দরজা তবু গলে
আদিম পাহাড় দাঁড়িয়েছে চাঁদ বাগানের কোলে
বিরূপ বাতাসে উপত্যকা নীলচে বাকল চাগে
চাঁদের গায়ে চাঁদ ছায়া কি আর অন্য কিছু লাগে?
মায়াবী চোখের তারায় স্বপ্নের দ্যুতি চারা দু’টি
চার অক্ষরের আলোয় বুননে অলিক জরিবুটি
চির হরিৎ পাতায় ঢাকা বনে পর্ণমোচীর চারা
পাকদণ্ডি যাত্রা শুরুর পথে পেয়েছি আশকারা!
যাত্রা পানে চন্দ্র ভ্রমণ হৃদয় আধো আলো চাঁদ
যাবার আগে জ্যোৎস্নাবতীর, ছিড়ে নষ্ট আলোর ফাঁদ।