এলিজা খাতুনের কবিতা

এলিজা খাতুনের কবিতা

পড়ন্ত প্রতীক্ষায়

কে যেন ডাকে ; মনে হয় কোন মানুষের কন্ঠস্বর !
অথচ আশেপাশে কোথাও নেই কোন ছায়া

সময়ের খাম ছিঁড়ে দেখি
ভাবনা খুলে দেখি,
চলে যাওয়া দিন খুঁড়ে দেখি
সেরে না ওঠা ব্যথা ছুঁয়ে দেখি
রাতের নক্ষত্রে দেখি
ভোরের মৌনতায় এমনকি সবখানেই
ছুটন্ত হরিণের মতো ছুটে বেরিয়েছে চোখ জোড়া
নাহ্… তার দেখা মেলে না

হিস হিস শব্দে বাতাসেরা কানাঘুষায় মাতে
আমার ভেতরে বাহিরে দিক দিগন্তে প্রহরায়
বসে আছে- হৃদয়সম্বলিত অবয়বের অপেক্ষা
তেমন একজন পেয়ে যাবার প্রতীক্ষা ;
নিখাদ একাকিত্বে দু’দন্ড অধিকার করতে পারে যে মুখ

সময়-সংসারের তাপদাহে
হযতো সে প্রত্যাশা ঝরে যায় একদিন
পেকে ওঠা চিরন্তন হলুদ পাতা পড়া যেমন
ক্রমশ বাতাস নড়ে অবিকল মানুষের কন্ঠের মতো
মৃত চন্দন কাঠের ক্ষয় থেকেও তো
জীবন্ত সুঘ্রাণ জেগে ওঠে !

নির্বাসিত

অজস্রভাবে ভেঙ্গে খন্ড খন্ড হতে হতে
চূর্ণ বিচূর্ণতায় খুঁজতে থাকি এক পরমাণু নিজেকে

দেখি-
ক্রমশ চলে যাচ্ছি ইচ্ছের কাছ থেকে দূরে…
বসতি ভীষণ অপ্রেমে
সমস্ত জানালা দরজা আঙিনা গলি শহর পৃথিবীর
ভৌগলিক পরিমাপ থেকে দূরে এবং দূরে…

অবিরত ভাঙছি সাধ-সাধনা
ছিঁড়ছি অধিকার না পাওয়া দলিল
দিনে দিনে অনিশ্চয়তার ধূসর পর্দা ওড়ে সম্মুখে
এ যাবৎ যাপনের সবটুকু অনুবাদ করে দেখি-
স্বপ্নহীন পোড়োভিটেয় কয়লার মতো জেগে আছি

কই ! তবু তো দিব্য আছি !
পোড়া চোখ জোড়া-
দারুণ দূরে আছে ঈর্ষার জল থেকে।
জনপ্রিয়তার আচ্ছন্নতা ঘুঙুর পরায়নি দু’পায়ে
গোলাপের কাঁটার মতো-
স্নায়ুর চারপাশে বিছিয়ে আছে নির্লোভ কাঁটা

গুঁড়িয়ে যেতে যেতে
‘আমি’ বলতে এক কণা ‘ধারণা’তে
নিসর্গের প্রগাঢ় নীরবতা বুনতে বুনতে এ-ও ভাবছি-
কয়লা জীবনে কখনও হয়তো পড়তেও পারে
দক্ষ হাপরের টান, উথলিতে পারে লাল আভা