অনঞ্জনের কবিতা
পৌষালি চাওয়া
বালি-বালি কুয়াশা স্নিগ্ধ-দৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে
তবু, তুমি কাছে আসনা,
বিন্দু-বিন্দু চাওয়া আকাশলীনা আকাশ হয়ে জাগে
তবু, তুমি চেয়ে বসোনা।
অসমাপ্ত কথার ছইয়ের নীচে স্বপ্ন আছড়ায়,
লজ্জারা হাওয়ায় কথা বলে,
কুয়াশা-ঘন শীতের সকাল তোমার নিমেষে
একাকী উষ্ণতা খুঁজে চলে।
হয়তো কুয়াশার ভিতর যে অনিশ্চয় লুকিয়ে
তাকেই তুমি খোঁজো আকুল,
এ নিশ্চিন্ত জীবন, এ বৈভব বাসি করে দেয়
হু-হু করা পৌষালি ব্যাকুল।
ঋতুর খরতা নিঃসৃত এ মহাবিষণ্ণতায়
নিরন্তর ব্যাপ্ত কুয়াশায়
নরম নদীর মতো নরম জলের মতো তুমি
ভরে দাও স্নিগ্ধ বিদিশায়।
বৃষ্টি
মেঘেরা দল বেঁধে আসে, ভাসায় আমায়,
যদিও কাঁদায়ই বেশী, তাই মেঘ ডাকলেই
আমার বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে
একটা খোলা জানলার কাছে নিয়ে চলে যায়,
আমি সেই জানলার চাতালে পা তুলে দিয়ে
বৃষ্টির ছাট খাই, বৃষ্টি তো ভিজিয়ে দেয়;
ভিজলে আমি টেরও পাইনা কাঁদছি না হাসছি,
ভিজতে ভিজতে আমার রোমশ বুকে পাক ধরে,
আমার চোখ ঝাপসা হতে থাকে, মসজিদের
পাশের ইঁটের রাস্তাটা – কখন রাজপথ!
আমি হাত দিয়ে মুখের জল মুছতে থাকি,
চোখের জল মুছতে থাকি, বৃষ্টি পড়তে থাকে।
বৃষ্টির জল জমে জমে গোটা একটা পুকুর,
পুকুর থেকে জলপরীরা উঠে মিলিয়ে যায়,
মিলিয়ে যায় ঠিক আমার জানলার কাছটিতে
তখনই মেঘেদের অট্টহাসি আমার দুকানে
ঝনঝন করতে থাকে, আমি পাগল হয়ে যাই ,
দু-কান চাপা দিয়ে ছুট্টে বেরিয়ে যাই রোদে-
চৈত্রের রোদে আমার চামড়া ঝলসে যেতে থাকে,
আমি বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে চাই, বাঁচতে চাই
মেঘেদের অট্টহাসি থেকে, আমি বাঁচতে চাই
ওই পুকুরটার থেকে, তাই আমি চৈত্রে, রোদে,
তাই আমি চামড়া পুড়িয়ে অশ্রুহীন রোদচাতকী,
বৃষ্টি আমাকে পাগল করে দেয়, আমি বাঁচতে চাই।