আতাউল হাকিম আরিফের কবিতা

আতাউল হাকিম আরিফের কবিতা

খেলা

প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে,চোখ তাঁর বিষণ্ণ নীলাভ
ভেতরে বেজে চলেছে শরীরি হল্লা,
কিছুটা দুঃখ,
মৃত্যুর কাছাকাছি ব্যঞ্জনাও বাজে!

বেলেল্লাপনা, নষ্টামি যেমনটি আছে
স্তব্ধতাগুলোও খুব নিরবে সন্নাসিনীর পথ ধরছে!

কখনোবা উষ্ণতার খুব কাছেই হেঁটে চলে নিষ্ঠুরতা
ভোগ এবং সমুদ্রের মুখ হা করে থাকে!
তবুও শরীরে শরীর খেলাচ্ছলে ফুল ফুটে
আকাশ,নদী,বৃক্ষ ও পাখিদের গুঞ্জন শোনা যায়!

ছেনি

নীলকমল আকাশের দিকে তাকিয়ে
কিংবা বাতাসের মর্মর ধ্বনিতে
আজো তোমার শিহরণটুকু খুঁজিফিরি।

সেই তুমি-যখন ছিলে পরিপূর্ণ যৌবনা,
আমরা দুজন কোমল জোৎস্নায়
স্নানোদক উম্মাদনায় মেতে উঠতাম

যদিও তোমার শিল্প সত্তার কাছে
আমাকে বলা যেতে পারে নিতান্তই কামারের ছেনি!
উত্তপ্ত লাল গালিচায় ঠাপ মেরে মেরে-
সুপ্রাচীন শব্দমালায় কোনো একদিন
রচিত করেছিলাম একখানা মহাকাব্য।

বিবর

ক্রুদ্ধ সময়, জুয়াখেলায় মত্ত মাতাল
শব্দরা বয়ে বেড়াচ্ছে

অপমানিত,বিষণ্ণ বোধের নিরিখে-
মাঝেমধ্যে ভীষণ উৎকর্ণ হয়ে উঠি!

এই জীবন-
স্তব্ধতা ছাড়াও আছে দূরবতী প্রতিধ্বনি

আরণ্যক মাদকতাহীন
ক্লেদাক্ত দেহ বয়ে বেড়াতে বেড়াতে
বিষ জমে যায় রক্তে।

বাতাসে নেই চঞ্চলতা-
আদিম সাম্যের পথ লুটে গেছে।

মহাকালের অস্থিমজ্জা শুষে-
কালো-কুলো বিবরে আচ্ছাদিত পৃথিবীর বুক।

পরাজয়

বাতাসের চঞ্চলতা গায়ে মেখে হাঁটছি
বলা যেতে পারে-
মানবিক বিষাদ থেকে ক্ষণিকের মুক্তি,
হয়তোবা নিজের অজান্তেই ফিরে আসে কৈশোরের দূরন্ত সময়,চনমনে রোদ্দুরে লম্পঝম্প
আমি তখন বাতাসের কাছে অনর্গল নালিশ জানাতে থাকি-
যে মানুষগুলো আমাকে কখনোই ভালবাসেনি
অথচ কাঙাল ছিলাম
যাদের আদ্র-বৃষ্টিজলে ভিজতে চেয়েছিলাম, ভেজা হয়নি।
জলের মগ্নতা থেকে কিংবা গোলাপের কাঁটা বিঁধে,
আন্তশূণ্য হৃদয়ে-আমি পরাজয় মেনে নিয়েছি।

আমি কোনো যোদ্ধা কিংবা প্রেমিক নই,
রমনীর ঠাসা যৌবন কখনো ছুঁয়েও দেখনি
শুধুই এইটুকুই বলতে পারি বহুদূর,
অনেকটা পথ বিভূঁইয়ে,পুনরায় ফিরে এসে বুঝলাম-
আমিও জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিক!

পাশুটে হাওয়ায়

যৌবনের দাগ কেটে গেলেও
জল গোলা চোখ দেখছে-ঘোর অন্ধকার,
বিবর্তনে উষ্ণতা নেই
কেবলি মৃত্যুছায়া চিৎ হয়ে শুয়ে আছে।

বৃক্ষ ও পাখিদের চোখে-পুঁজির বিজ্ঞাপন
আকাশ, নদী ও পাহাড়
ভীষণ,ভীষণ কালোরূপ ধারণ করেছে।

প্রিয়তার বুকে নেই স্তনাগ্র উম্মাদনা,
দীর্ঘমেয়াদে বৃষ্টিহীন
পাশুটে হাওয়ায় উড়ে যায়-
সুতীব্র ইচ্ছেগুলো।

বিভাজন

শ্রেণী বিভাজনের দগ্ধ পুঁজে আক্রান্ত আমার শহর
এখানে প্রতিনিয়ত বলাৎকার হয় সৃজনীর রূপ যৌবন!
কোনো কোনো দিন শুনতে পাই প্রজাপতির কান্না,
টেবিলে কিংবা বিছানায় টুপটাপ ঝরে পড়ে শব্দ!
ক্রমশ ধূসর হতে থাকে দেয়ালে ঝুলানো বিপ্লবী চে ‘র ছবিখানা।