সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

আজ থেকে ১০০বছর পর আমাদের সাহিত্যের প্যাটার্ন কেমন হবে ? এই প্রশ্নের সঠিক জবাব হয়তো এখন দেয়া সম্ভব হবে না। কারণ, ১০০বছর পর সময়টা কেমন হবে তা আমরা নিজ চোখে দেখছি না।তবে একটা নিজস্ব ইমাজিনেশন লাগানো যেতে পারে। আমরা যদি পেছনের দিকে তাকাই, তাহলে দেখতে পাই সময়ের সাথে সাথে সাহিত্যে এবং ভাষায় রিমার্কেবল চেঞ্জ আসে, এসেছে এবং আসবে। সেই হিসাবে আরও ১০০বছর পর আমাদের ভাষায়, সাহিত্যে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে নি:সন্দেহে।

আমরা যদি একটু অন্যভাবে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই পৃথিবীতে পরিবেশের বিষাদ পরিবর্তনের প্রভাব আমাদের চারপাশে পড়তে শুরু করেছে এবং তা অব্যাহত আছে। বিজ্ঞানী হকিং তো আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন— আগামী কয়েকশত বছরে মানবজাতিকে বাঁচতে অন্য কোনো গ্রহে মুভ হতে হবে। যদি এরকম পরিস্থিতি হয় তা হলে এর প্রভাব ভাষা বা সাহিত্যে কী রকম হবে আমরা জানি না। তবে পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আমাদের ভাষা, বিষয়, চিন্তায়, এমনকি উপমা কিংবা চিত্রকল্পে আসবে এক বিস্মিত পরিবর্তন। হয়তো তখনকার প্রজন্ম, সবকিছুতেই শর্টকাট ওয়ে খোঁজবে।কবিতায়, গদ্যে গ্রামার কিংবা বানান নিয়ে কোনো মাথাব্যথা থাকবে না।হয়ত তৈরি করবে এক নতুন সাহিত্য ক্যানভাস। হয়ত সাহিত্যের বিশাল অংশ জুড়েই হবে অন্যগ্রহের সাহিত্যের অনুবাদ। ইতোমধ্যে পরিবর্তনের গতি আমাদের সাহিত্য তথা বিশ্বসাহিত্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। হারিয়ে যাবে অনেক পুরোনো শব্দ সমূহ। সংযোজন হবে নতুন নতুন শব্দ। গ্লোব্যাল ল্যাঙ্গুয়েজ হিসেবে বিশেষ করে ইংরেজি শব্দ আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বহুল ব্যবহৃত হবে বিভিন্ন ভাবে এবং আমাদের ভাষায় তা বাংলা হিসাবেই ব্যবহার হবে অনর্গলভাবে। তথ্যপ্রযুক্তির হিউজ সম্প্রসারণে বিশ্বসাহিত্য ও বিশ্বায়নে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষার শব্দ, আমাদের ভাষা, আমাদের সাহিত্যকে আরও সমৃদ্ধ করবে নিশ্চয়ই।
এখন হয়ত কবিতা বা গদ্যে এই নিজস্ব স্টাইল বা নতুন প্যাটার্ন অনেকের কাছে দৃষ্টি নন্দন না ও হতে পারে। কিন্তু তখন কবিতায় যুগান্তকারী পরিবর্তন হবে ভাষায়। শব্দচয়নে। চিত্রায়নে এবং বিশেষ করে উপমায়। কেনোনা, তখন চারপাশের পরিবেশ হবে সাইন্স ডিপেন্ডেড। লেখক পাঠক স্নান করবেন রেডিয়েশনের সাগরে। তাই সাহিত্য বা কথা বলার ভঙ্গিও হবে তরঙ্গায়িত।
আর সে সময় অ্যাটোমেটিক্যালি সাইন্স ফিকশন আরও প্রখর হয়ে উঠবে গল্পে। কবিতায়। কথায়।

সে যাইহোক, বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় সাফল্য আমাদের জীবনযাত্রায় নিয়ে এসেছে অকল্পনীয় পরিবর্তন। সাহিত্যও এর ব্যতিক্রম নয়। এ ক্ষেত্রে উর্বর ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এখন ফেইসবুক। এখানে লেখা পোস্ট করতে নেই কোনো নিয়ম। তাই যারা ফেইসবুকের পূর্বে লিখতেন না, তাঁরাও লিখছেন। হয়তো নিজেরমত করে প্রকাশ করে যাচ্ছেন মনের ভাব। পেয়ে যাচ্ছেন ইন্সটেন্ট প্রতিক্রিয়া।কিন্তু ইচ্ছেমত লেখার কারণে অনেকেই লেখা না পড়ে কিংবা লেখার ভেতরে না ঢুকে টেকনিক্যালি শুধু লাইক কমেন্ট প্রাপ্তির জন্য ব্যবহার করে যাচ্ছেন ‘ অনবদ্য, অসাধারণ, অপূর্ব, অসামান্য’ ইত্যাদি। অনেকে এই স্রোতে ভেসে শুরু করেন ক্যাট-ওয়াক। আমরা এখন এরকম প্রশংসায় ভেসে যেতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি। আমরা অন্যের লেখার ভেতর থেকে সাহিত্যরস নিই না আবার রস নিয়ে কোনো কথাও বলি না। আমরা ভাবছি না, শুধু সাধু থেকে চলিত রীতিতে পরিবর্তন নয়— অন্তত আগামী ৫০ বছর পরের পাঠকের জন্য নিজের সৃষ্টিকর্ম রেখে যাওয়া। তাই ফেইসবুক হোক ব্লগ কিংবা অনলাইন ম্যাগ হোক— আমাদেরকে ব্রেকেট থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

পরিশেষে বলব, অনলাইন ভিত্তিক হলেও— সাহিত্য পত্রিকাগুলো, ফেইসবুক থেকে লেখা বা পাঠের জন্য ব্যতিক্রম একটি প্লাটফর্ম। কারণ, এখানে সম্পাদক/ সম্পাদকবোর্ড থাকে।চেষ্ঠা করেন যতটুকু সম্ভব, অনলাইন, অফলাইন লেখকের বাছাইকৃত লেখা দিয়ে পত্রিকাটি সাজাতে। তাই, লাইক, কমেন্টের জন্য নয় সত্যিই কিছু ভালোমানের লেখা পাঠের সুযোগ হয়ে ওঠে। ফলে একে অন্যের লেখার গভীরে প্রবেশ করতে পারেন। ভাবতে পারেন। ভাবাতে পারেন। যেহেতু লেখকের পাঠানো লেখা থেকেই বাছাই করে লেখা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই লেখককে তার লেখা শুধু বর্তমান নয় ; আগামী প্রজন্মের পাঠকের জন্য নিজেই লিখতে হবে। সেভাবে ভাবতে হবে। লেখার প্যাটার্নের ওপর নির্ভর করবে লেখার দীর্ঘস্থায়ীতা। এটা লেখকের নিজস্ব ভাবনার আওতাধীন।
একটি ‘অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা’ এই ইন্টারনেটের যুগে যেভাবে একজন লেখকের লেখা সহজে পৃথিবীর পাঠকের কাছে পৌছে দেয়— তেমনি সহজেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসরত লেখকের লেখা পাঠের সুযোগ করে দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় ড্যাশ— অনলাইন সাহিত্য পত্রিকা, সৃজনশীল লেখকদের সৃষ্টি কর্ম নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলো। যা ১ম ও ২য় সংখ্যায় লেখক এবং পাঠকমহলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে এবার ৩য়(নভেম্বর ২০২০ইং) সংখ্যা প্রকাশিত হলো। আশা করি পাঠক, লেখক— লেখাগুলো থেকে নির্যাস পান করে তৃপ্ত হবেন। লেখক, পাঠক সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা।

এ কে এম আব্দুল্লাহ
সম্পাদক, ড্যাশ—