সৌম্য ঘোষের কবিতা

স্বরলিপি
ক্ষরিত স্বপ্নের ভেতর
তোমার অনুচ্চারিত শব্দের ঘ্রাণ পাই,
মোহ ধুয়ে-মুছে তোমাকে পেলাম
অনুভবে, অবিচ্ছিন্ন অনুরাগে।
মনে হয় তোমাকে ফিরে পাবো
কোন এক রাত-ভাঙ্গা তুমুল জ্যোৎস্নায়,
চাঁদের আলপনায়, দীঘির ঢেউয়ে
এক নির্গুণ বর্ণরঙ আলোদ্বীপে
আমার অগোছালো অক্ষরমালা
তোমার পায়ের কাছে এসে
আশ্চর্য স্বরলিপি হয়ে ওঠে।
চিন্ময়ী
সন্তাপশূণ্য মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনির মতো
রাত্রির অনন্তনীলে বসে আছি একা …
হৃদয়ের ধ্যানে স্নাত হয় আমার হৈমন্তিক রাত ।
দেখি, তোমার কল্যাণী মুখে
শত আলপনায়
জড়িয়ে রয়েছে অনন্ত সুন্দর…
চাঁদজ্যোৎস্নার জলে
অক্ষর সাজিয়ে লিপিমালায়
তোমাকে চেয়েছি পুণ্যস্নানে,
কখন রোদ্দুর এসে বুনে দিয়েছে
পাতায় পাতায়
ভরা বসন্তের গান।
সোহাগ
নির্জন সৈকতে যতই তোমার
রূপ ও অরূপের
করেছি বন্দনা ,
তুমি উন্মুক্ত করেছো তোমার বর্ণমালা
সেই আশ্চর্য চিত্রমালা থেকে যত
কুড়িয়েছি মুক্তদানা
তোমার শরীর হয়ে উঠেছে
আভিজাত্যের ঐশ্বর্য , বর্ণপতাকা ।
নিরালোক
সান্দ্র মন্থরতার ভেতর এক অনির্দেশ্য
উদ্বেগ ও আর্তি প্রবেশ করে
হারিয়ে যাওয়ার কথা
নষ্ট হয়ে যাওয়ার কথা ,
যেভাবে পাহাড়ের কোল থেকে
হারিয়ে যায় বিশল্যকরণী !
প্রখর তাপে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়
অশ্রুময়ী…
তাঁর কাছে গিয়ে বসতে তাই মন সয়না ।
দূর থেকে দেখি-
দালান থেকে ধীরে ধীরে রোদ
সরে যাচ্ছে…
আমরা হেঁটে চলেছি ধ্বংসের দিকে
বেঁকে যাওয়া তমসাবৃত পথ ধরে…
অনুক্ত
কিছু না বলা কথা থেকে যায় সমস্ত জীবন
তাই একদিন
দিনান্তে নদীবেলায়
বিমর্ষ মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে একা–
নৈঃশব্দের ভেতর নির্জনতা
ভালো লাগে তার
যেটুকু হলোনা বলা-হবেও না কোনদিন…