সফিয়া জাহিরের কবিতা

সফিয়া জাহিরের কবিতা

আর কি চাই

আর কি চাই
নিলে তো সব, যা কিছু আছে চিরায়ত
চুরি করলে উন্মুক্ত মাঠ
বসত বাড়ি, মাতামহীর ক্ষীরের হাড়ি
পুকুর, নদীর বুক, তার দু’ধার
তবুও তোমাদের মিটলো না আশ!
তবে আর কি চাই?
নেবে নাকি এবার মাথার উপর স্থির হয়ে থাকা
পাণ্ডুর আকাশ?

জারজ

পিতাহীন বলে দাও গালি জারজ সন্তান বলে
কিন্তু তার তো মায়ের জঠর ছিলো,
ছিলো ‘মা’ নামের একটি মানুষ
হোকনা সে মা অবাঞ্ছিত,
হোকনা সে মা শক্তিহীন অথবা হতদরিদ্র
ঈশ্বরে ছিলো তার আস্থা, মানুষে ছিলো বিশ্বাস এবং প্রেম
তবে কেন এতো প্রশ্ন, নিন্দার ঝড়,
একঘরে করে রেখেও শেষ হয়না দন্ড বিধান
ক্ষত বিক্ষত করো সে ক্ষুদ্র প্রাণ
তার এ ছোট দেহে প্রাণ দেননি কি ঈশ্বর?

দেব না ভোট

জেনে রেখো আর চাইতে এসো না ভোট
করজোড়ে ভিখিরির মতো হয়ো না নত
বলে রাখছি আর দেব না ভোট
তোমাদের চিনে নিতে হয়নি এতোটুকুও ভুল

কি ছিল অঙ্গীকার ভুলে গেলে তাও!
প্রতিদিন দানবের রূপে হও আবির্ভাব
জ্ঞানপাপী জেনে রেখো –
‘এই দিন, দিন নয়, আরো দিন আছে’
তোমার মুখোশ যাবে যে খসে

বলে রাখলাম, এই আবুলের মা আমি
মিছে কথা কই নাকো, কারো ধার ধারি না
হারাবার নেই কিছু, যা আছে তাই নিয়েই তুষ্ট
তোমাদের মতো লোভের আগুনে পুড়ে না উদর

আবার যদি এসো চাইতে ভোট
কানে ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখব চৌরাস্তায়।

উনুনে চাপিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা

অগণিত অমানুষের সারি, সবাই জঙ্গলমুখি
আওড়াচ্ছে মন্ত্র, ঘোরপাক খাচ্ছে নেশায়,
জিহবায় এখন শুধু কাঁচা মাংসের স্বাদ
অমাবস্যা রাতে চিবিয়ে খায় মৃত মানুষের হাড়।
খেতে চায় ওরা অনেক কিছু –
কোকিলের ঠোঁট, কবুতরের ডানা,
পান সুপারির সাথে চিবিয়ে খায় বিজয়ের আনন্দ
এবং উনুনে চাপিয়ে ধর্মনিপেক্ষতা
বারবার পান করে বুকের তাজা রক্ত,
যতনে শরীরে মাখে আল-হারামাইন আতর।

রডডেনড্রন পরাগে তোমার চোখের জল

তোমার চোখের জল ক্লিক করে রেখেছি অনলাইন শপিং বাস্কেটে
ভালোবাসার কারেন্সিতে হবে তার মূল্য পরিশোধ
তা যতই হোক না তার দাম, করবো না দরকষাকষি
ভবঘুরে বলে ভেবোনা তুমি গিয়েছি ভুলে প্রেম
তুমি যে আমার যাপিত জীবনের হলুদ সূর্যমুখী,
বহির্দ্বারে রেখেছি ঝুলিয়ে ভায়োলেট রঙের নোট
কলিং বেল টিপে যেন ফিরে না যায় ডেলিভারি ম্যান
কান্নার পার্সেল দেবনা রাখতে জমিনে
রাখবো যতনে আমার বুকের গভীরে –

ম্রিয়মাণ আকাশ বলছে রাখবে লিখে এক গুচ্ছ কাব্য
চাঁদেরও বড্ড খায়েস তোমার চোখে জ্বালবে আলো
সমুদ্রের ফেনিল জলরাশি ফুঁপিয়ে বলে,
কান্নাগুলো বিলি করবে মহাসমুদ্রের বুকে
তুমি নাকি দেবীসম হেঁকে বলে গুরুগম্ভীর ব্লেনক্যাথ্রা,
পিয়ানোর রিডে তাই বেজে ওঠে প্রেমের লয়
রডডেনড্রন পরাগে দেখি তোমার চোখের জল!