রেদওয়ান খানের কবিতা

দেহবিতান-২
প্রতিরাতে দেহ কত ভালো লাগে,বলো?
কিছু রাত হোক জানালায় বসে থাকা
কিছু রাত হোক জোছনায় জ্বলা চিতা–
কামিনীগন্ধার সৌরভে স্নান করো ।
এক বিছানায় কত কাল থাকে প্রেম ?
পালঙ্ক এবার দুই ভাগ হয়ে যাক
মুদিত নয়ন খুঁজে নিক কিছু আলো
যামিনী-আঁধার স্তব্ধতায় ছাড়া পাক ।
এক সাথে আছি,তবু ভাগ হবে জমি
টুকরো টুকরো হয় নি কি সংসার ?
ছলনায় মোড়া লৌকিক ভালোবাসা
পারস্পরিক অভিশাপে ছারখার!
উননে আগুন না-জ্বলুক তবে আজ
অন্তর্দাহনে পোড়ে কিছু নিরবতা
একূল ওকূল– দুই কূল থাকে দূরে
জোয়ারে ভাটায় বিপরীতমুখি কথা!
ফুল-বাসরের রাতে সিঁদ কাটে চোর
তাবিজমালায় দিয়েছে কি ধরা– মন ?
কাল-গোসলের পরে শুকিয়েছে দেহ
হলদে পাতায় ভরেছে সবুজ বন ।
দেহবিতান-৩৩
অবচেতনের আয়না হয়ে পড়ে থাকবে এইসব কথা ও কবিতা ।
একদিন আষাঢ়ের জলে ভিজেছিল গৃহহীন চৈতন্যের বিস্তীর্ণ ছায়াপথ
সেই সিক্ত পথ রঙিন হয়ে উঠেছিল কী জানি কার ঘুংঘুরের শব্দে
হয়তো কোথাও কেউ ফুলের গন্ধের মতো ভাসিয়েছিল অদৃশ্য জীবন ।
তুমি পড়ে নিও,যদি কবর-ফলক ভিজে ওঠে অক্ষরে অক্ষরে
শব্দে শব্দে যে ব্যবধান র’য়ে গেল
সেই ফাঁক তুমি পূর্ণ করে নিও মৃত-অভিমান জোড়া দিয়ে দিয়ে
সে-জীবন তুমি পুনরায় লিখে নিও আপন ভাষায় ।
যদি খুঁজে পাও খুন-হওয়া অপূর্ণ বালকের মমি-ইতিহাস–
স্তরে স্তরে তার দেখতে পাবে মসলিনে মোড়া বিগত জীবন
পরাজয়ের ঐশ্বর্য্যে ডুবে থাকা মুখ তুমি চিনে নিও– কী রকম জীর্ণ ভঙ্গুর
নক্ষত্রের আত্মীয় সভায়,লোক-লোকান্তরে উঠবে কি বেজে ব্যথার ঘুংঘুর!
বর্ণমালার বর্ষণ-বয়নে তুমি লিখে নিও আত্মহননের নিহিত কারণ।
কাল-মহাকাল-১
আমি কি তোমারে কমু, কই যাই,কার কাছে যাই?
কও তবে, তোমারে জিগাই যদি-কী রকম হয়!
যৈবন এমনই- মিছা কথা সকলেই কয় –
জানতে যা চাও- তার কোনও সদুত্তর নাই।
কারো কাছে থাকে না,সে যায় কোন নরকের টানে-
ডাকাতিয়া নদীটির পাড়ে গেলে মন ভাঙে কার?
‘ভালোবাসা’ হয় যার ডাকে তারে জোনাকি-আঁধার
‘মনুরা’ ভাঙিয়া পড়ে তার দূর নিষাদের গানে।
দেহের জঙ্গল থেকে বার হয় দেহাতীত মন
কী-রকম দাপায় তার খদ্দের,জানে দ্বিচারিণী-
পাঁজরের তলে তার আঁধারের কাল-মহাকাল
তবু সন্দেহ ঘুরপাক খায়,চিলেরা যেমন-
ঘুরে দূর আসমানে!তুমিও তো!বুঝিনি,ভাবিনি
আগে! মানুষ নক্ষত্র- কেউ তার পায়না নাগাল।
কাল-মহাকাল-২
তোমারে কি দেই নাই আমি চাঁনতারা নাকফুল ?
বাঁশের চোঙায়-জমা সিকি দিয়া টোবা বিস্কুট
কিন্যা দেই নাই ? আষাঢ়ে-বাদলে চালভাজা,বুট-
ঘরের পিঁড়ায় বসে খাই নাই ? আলু-থালু চুল
দেই নাই বাঁধি লাল ফিতা দিয়া ? বেঈমান নারী !
পয়লা বৈশাখে যে দিছিলাম লাল-পেড়ে শাড়ি!
ক্যামনে ভুলিয়া যাও স-ব কিছু!নারীর স্বভাব-
সংসার পাতিয়া ভাঙ্গা পুরুষের পুরনো সংসার।
মায়ের হাতের মাটি-লেপা ঘর ভেঙ্গে চুরমার
করিয়া গহীন হৃদয়ে আমার দারুণ আকাল-
পুঁতিয়া এখন খোঁজো তবে কোন সোনার হরিণ ?
এমন পিরিতি আমি চাই নাই,এমন সংসার-
যার আনাচে-কানাচে নাই কোনো ঝিল্কি-সকাল-
আমারে ঘিরিয়া রাখা ভালোবাসা-আবেগের ঋণ।
সুবাসিনীগণ অথবা পথশিশ্নের উলঙ্গ বাসনা
আমি এক ক্ষুধার্ত কালের কাঙাল–
আদিগন্ত মুখ ব্যাদান করে আছি।যার চোখ আছে,সে দেখুক।
সোনার বাঙলার স্বপ্নস্নাত এক নেতার জন্মদিনে
সামান্য করুণা ও কাঙালিভোজের আশায় পার করি তাঁরই জন্মশতবর্ষের প্রভাত
আমার জন্মতৃষ্ণায় ঢক ঢক করে ঢেলে দেয়া হয় দুর্গন্ধে ভরা রাষ্ট্রের বায়বীয় প্রতিশ্রুতিসমূহ
আমি এক ক্ষুধার্ত কালে কাঙাল –
ছিন্নভিন্ন গীতবিতান বুকে নিয়ে ফাল্গুনী পূর্ণিমায় ডুকরে উঠি নিজের ভিতর
একুশের রক্তস্নাত আমাদের সুবাসিনীগণ– আহা আমাদের বঙ্গবালারা–
আবীরের রঙে রাঙিয়েছে উত্থিত পথশিশ্নের উলঙ্গ বাসনা!