ভবেশ বসুর কবিতা

হাসির পরে বৃষ্টিতে মিলেছি
তুমিও যেমন ঐক্যের খোঁজে হঠাৎ হঠাৎ ঘর বারান্দায় খেলা কর— মিথ্যা বলবো না,আমিও যাই নির্ভেজাল মানুষ খুঁজতে
আমাদের দেখাদেখি সামনের গাছটাও চলে আসে,ছায়া নিয়ে তার ফুল ফল— শ্বাসপ্রশ্বাসে কাটিয়ে যায় কিছুটা সময়
সবাই তো প্রতিবাদ করে না— এই বিভৎস সভ্যতার ঝড় বিদ্যুৎ দেখে মুখোমুখি বসে,একটি জীবন যদি পাওয়া যায় শস্যদানায়।
প্রতিদিন প্রতিবার দেখি আমাদের মতো ভাঙা গলায় রোদ আসে,জ্যোৎস্নাও— ভেঙেচুরে আলিঙ্গনে যাবে,তাই সকলেই মুগ্ধ সন্ধ্যায়
এই রোদ জড়ায় আমাকে,তোমারই মতো ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে বদলেছি কতটা কথায়
আমিও জ্যোৎস্নার মতো চোখে চোখ রাখি— যেন কিশোরীর সাজে নির্মল স্থিরতা।
এভাবে সবাই আকাশের নিচে বৃত্তের মতো পরস্পর হাসির পরে বৃষ্টিতে মিলেছি
তুমি আমি দিন ও রাত যখন যেমন— কেউ না কেউ বহুবার একে অন্য হয়েছি।
তুমি আমি কি মানুষ ছিলাম অথবা এই পৃথিবীর একরকম ?
ঐক্যের খোঁজে হঠাৎ হঠাৎ ঘর বারান্দায়— তুমি আমি যেমন রোদ মাটি জল
তেমনই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে সবাই বদলেছে,কখনো মানুষ হয় !
আমাকে ঘিরেই যদি ভিক্ষা তোমার
ঋণ মুকুবের কথা এলে ভাবি,কার কাছে নিয়েছি সকল— কতটা ঋণী
আমার আগে পৃথিবী এসেছে,উপমা বদল করেছে মাটি— বলল ভালো সময় খারাপ সময়
সব মন্দির মসজিদ দূরে ঠেলে ক্ষমা চেয়েছে প্রেম— মেঘের ভিতর বয়ে যায় একটানা মেঘ
এই দেখ বন্দীরা শিকল ভাঙল— দরজা জানালা সব
দরজায় কড়া নেড়ে দেখ,এসেছি যেমন আমি— তোমারও অস্তিত্ব জেগে উঠেছিল আগেই
তাহলে বলো কার কাছে কবে ঋণী আমি ?
তুমি এলে ভাঙল যেমন ঘুম,ঘুমের ভিতর স্বপ্নরা করেছে খেলা— প্রেম আমারই
আমি কেটেছি খাল,তুমি এনেছ বয়ে পিপাসার জল— কার শ্বাস বেশি বল ?
আমাকে ঘিরেই যদি ভিক্ষা তোমার,সে অন্ন তোমারও—উপবাস ভাত রন্ধন আমাদের
মেঘগুলি আসে যায়,নীলাকাশও পথ পায়—
বল কার কোন কথায় ক্ষয়েছে পৃথিবী !
সীমার বাহিরে অসীমকে দেখি,অসীমের ভিতরে আছে সীমা— দুজনেরই কলতান
কার কাছে তাহলে কে দামী,আমি স্থবির হলে তুমিও কান্নায়
চেতনার গভীরে পৃথিবী বেঁচে থাকে বিশ্বাসে,অবিরাম অনির্দিষ্ট দিন নির্দিষ্ট হয়
কি আছে কাছে বলো,কি-ই বা দিতে পারি— দিয়েছ যা বাতাসেই ছড়ানো আছে
এই দেশ বিদেশ বালিয়াড়ি, নদী গাছ পাথর আমাদেরই সন্তান।
আমি যদি হেমন্তের অনুভবে
আমার যখন চৈত্র শেষ হয়,তোমার তখন বৈশাখ শুরু সুখে
আলো নিভলে জ্বালাতে পারি না,পাখি কিন্তু ধরেছে নতুন রাগ
তুমি চনমনে আরো,হারানো দিন আঁতিপাতি করে খুঁজে চলেছ— আষাঢে মেঘের মতো জল ঢালা শুরু কর মাঠে।
কোনোদিন সমান যায় না এ পৃথিবীর, অমসৃণ সবসময়
আমি হেমন্তের অনুভবে গেলে,প্রকৃতি দিয়েছে তোমায় শ্রাবণ
আহা কত কি আছে,ধূসর হলে মন আকাঙ্খার শিশির বরণ।
চিরদিন নদী থাকে না নদী,ভাটার টানে ঋণ শোধ ঘর বন্দী
বন্দীরা পালায়,কেউ খুলে বাঁশের আগড়— কি সুখ গভীর।
দূরে যাই আবিষ্কারে ভেসে,নিকট ক্রমশ নিস্তেজ অতীত ভেঙে
আমি বাড়ি মুখো হলে—— তুমি ধরলে পাহাড়ী পথ আগুন বাতাস জলের ভিড়ে।
সব পথে জ্যোৎস্না নেই,সব পথে রোদও নেই
অগণন বনের ভিতর সকাল সন্ধ্যার এলোমেলো খেলা
মনে হয় এখনই দুহাতে আঁকড়ে ধরি আমাদের স্নানের বেলা।
মেঘও উড়ে কথা ফিসফিস
ভালোবাসা জমা থাকে,পাথরের মতো জমাট— অন্ধকারে হিরের গহনা
কেউ ভালো সাঁতার জানে,চোখের সামনে হতে ঢেউ সরায়— ভয় করে না
ভালোবাসা এত তীক্ষ্ণ কণা,অনেকের চোখ চাইতে পারে না চোখে—— সূর্যের চেয়েও তীব্র তাপ
ভয় করে যদি যেও না সমুদ্রে, আয়ু চেটে খাবে স্রোত পাথর
বেঁচে আছো তবু এঁটো পাতা চেটে,ছদ্মনামে ভিড়—— শব্দ নয় প্রতিশব্দেই মেঘ ঘনায়।
পাথর কাটতে লাগে অনেক সংলাপ,সকাল বিকাল সংখ্যা পাঠ
দেখ পা মাড়িয়ে গেলে শিশির জল,একা গোলাপই চিনেছে যা
চিতায় শোয়ানোর মতো ঘরের ভিতর পড়ে আছে দেহ,যেন চুপিচুপি ঘুম
আমিও আঁধারের নীচে লিখছি চিঠি,যদিও শরীরে বিশ্বরূপ।
দু চোখ বদলায়— মানুষেরও জন্ম মৃত্যু,আগুনেরও ওঠানামা সহজ কাজ
মাটি মাটি দাম্পত্য সুখ,চোখ মেলে দেখ ঝড় ঝড় কাম গন্ধে মাতাল
কখনো প্রবাহী কখনো বা অপ্রবাহী সকলেই,জল মেঘ উড়ে চলে কথা ফিসফিস
ভালোবাসা জমা পাথরের মতো,তুমি এলেই আমাদের জড়ায়— আমুদে ভ্রমর মধু মধু রূপ।
সাধন ভোজনে দৈত্য থেকে বাল্মীকি
এত সুগন্ধ নিয়ে ঘর করেও দুঃখ বাড়ে,কি যেন বলার ছিল দিনের শেষে
এত রঙ এধার ওধার,এত সময় দিয়েছি তবু সমবেত মিছিলের বিরুদ্ধে মত
সারারাত জেগে থেকেও চুরি হল সকল,তাই কি শেষে অবরুদ্ধ হাতকড়ি ভয় !
সবার জন্য সিংহাসন,সুরক্ষিত রাজ্য সীমানা সৌখিন বাসনা
তবু মাথার উপর উঠে এল ভয়ংকর হাত মৃত্যুর শ্বাস— কি যেন বলার ছিল এই নিরালায়।
এত ইন্দ্রিয় আনন্দে মাতলাম,তবু একলা দুপুর সঙ্গী কেউ নেই
শিকল ভাঙি শিকল গড়ি,কেউ আসেনি সরব সাক্ষী
ভাতরুটির জন্য রত্নাকর, সাধন ভোজনে আবার বাল্মীকি
এ আমার প্রেম,দূরত্বকে কাছে নেওয়ার অন্তহীন যাত্রা
তবু কষ্ট পাই গণভোটে পরাজয়ে,ফিরে যাওয়ার আগে কি যেন বলার ছিল এই প্রতিক্ষায়।
আমি কি শুধু প্রেমিক ছিলাম,পরাধীন যারা তাদের জন্য দিয়েছি শিখা সাহস
ঘোলা জলে পরিচ্ছন্নতার ছন্দ,সকালে পূজা সন্ধ্যায় প্রদীপ
দু পায়ে হাঁটি আমি,বলেছি আরো পা দাও— বসবে ফসলহীন মাঠে বাজার
নিরুদ্দেশ হবো কেন,গাছ হতে গাছ— আরো লম্বা হতে চাই
তবু ছোট হয়ে আসে জীবন আমার,সময়ের কোপে দুখণ্ড— মনে হয় রক্ত বর্ষণে ডুবেছে গলা
কি যেন বলার ছিল,আলোটা বাড়িয়ে দাও এই অবেলায়।