বিকাশ চন্দের কবিতা

বিকাশ চন্দের কবিতা

বরণ

সকল সত্ত্বার ভেতরে কেউ একাকী থাকেনা কোন দিন—
জীবন্ত সকল প্রাণী জীব জগৎ সূর্যের পরিবার,
বহুত্বের সিঁড়ি ভাঙে সমানে আলোহীন চাঁদ—
এভাবেই জড়িয়ে আছি আকুল ভাবনার সমস্ত জলাশয়,
কত কথা প্রতিদিন বলি হিসেবহীন জানে আকাশ
আরও কত বছর প্রেমারতি পায়ে পায়ে মিশে যায় বাতাসে,
ফুলে ফুলে চুম্বন নাছোড়বান্দা সময়ের নির্ভার সুখ
তমসো মা একটু আলো পথ দাও রক্তপাত হীন !

কাঞ্চন জঙ্ঘার রূপ বদলের ঝিলিকে সূর্য জাগে,
গঙ্গা এখনও শিবের জটা জালে সৌভাগ্যের স্রোত—
তুমুল ভালোবাসায় কবেই অন্তর্হিত আজন্ম ক্রোধ।
জল ফল ফুলেদের ঋতু চক্রেই কেবল বসন্তের সাজ
ব্যাধও ভুলেছে জীবন বোধের ধারাপাত জীবিকা বিষাদ,
শোকাহত অরণ্য জননী জানে না প্রতিদান কথা —
বন্দুকের নলে থোকা থোকা রক্ত গোলাপ হাসে,
বিশ্বময় গোলাপে গোলাপে তখন ভ্যালেণ্টাইন ডে।

স্বভাব স্বাভাবিক পৃথিবীময় মানুষের ঘরে অনিন্দ্য মায়া
যে যার উচ্চারণে ব্যাস্ত বিশ্বময় স্থিরচিত্র প্রশান্ত প্রকৃতি বরণ।

প্রবাসী পাখির উড়ান

মুখের উপর আটকে আছে আচ্ছাদিত সুখ
কোথায় আছে আমার অচিন পাখির আহ্লাদী গান
সুখ দুঃখ অনায়াসে শরীর হীন ভ্রমন বাসনায়
কে কার সাথে কেমন সে অলৌকিক অনুসরণ !

অনুসৃত পরম্পরা ভেঙে তছনছ ঝড়ে ঘাড় মোড়া গাছ
নিজেকে লুকানো নিজের কাছে ধোয়া মোছা যাতনা ঘর,
কোনো বোদ্ধা বোঝেননি শোনেননি কোন চৌকস যোদ্ধা—
পৃথিবীর কোন কোণায় ভেঙে যাচ্ছে অনাক্রমণ চুক্তি
এখন টানা পোড়েন অসুখে মানুষে হিম্মত ওয়ালাও বিভ্রমে
দিব্যি পোশাক মুখ শরীর বদলে বদ্ধ ঘরে ঝিমুচ্ছে কঙ্কাল !

সুখের কতটা কাছাকাছি দুঃখের অনন্তকাল জানে যৌবন
চতুর্দিকের মন পাখিতো বন পাখিদের নিত্য নতুন সই,
দানা পানির নিত্য যোগান পাঁজর খোলা মুক্ত হাওয়া কাঁদে
জানে ক্ষুধা তৃষ্ণার কাতর হৃদয় পাথর বুকের কোমলপ্রাণ,
অসম সময়ে মানুষও প্রতিবন্ধ জড়িয়ে বিনি সুতো মালা
গাছে ফুলে আকাশে বাতাসে প্রেম কথা নতুন শস্য ঘ্রাণ—
যন্ত্রণায় জ্বলে প্রাণের আলো হৃদয়ে প্রবাসী পাখির উড়ান।

ধ্রুব

বিষণ্ণতায় মৌণ এখন রাত পরিদের ঘরের কথা
ছায়ার মতো দিনে রাতে হারিয়ে যাচ্ছে নীলিমায়
মরশুমি ফুল বেল জুঁইয়ের স্নিগ্ধ বাসর মুখ
জীবন বন্দী হলুদ সন্তাপ ঝরা পাতা জানে ঘাস মাটি,
অসময়ে নিয়ে গেছে এক মুঠো মাটি অশুভ দালান জানে
মাতৃ কারিগর জানে জীবাত্মা পূজা জানে কি জগন্ময়ী।

চিতার আগুন নেভে পোড়েনি হৃদয় জ্বালা—
যত বার যেতে ছেয়েছি আত্ম জনের ঘরে সংসারে
ততবারই উগরে আসে শব্দ অক্ষর মাখা মাখি
সকাল সূর্যের মতো লোহিত কণিকা এক কাঁসার থালা।

কোন পথে গেলে চেনা মুখ মিলে যাবে বঁধুয়া —
মারণ সময়ে বিষম শোকে তোমার চোখে জল,
আজব সকল কথার ভেতর কত টুকু জেগে থাকো তুমি
কত দূর যাবে সাথে সইতে পারবে অনাগত সময় অবধি।

ছাপা কাগজে তোমার প্রিয় শব্দাবলী ভোরবেলা গান
আমিতো দেখেছি দিগাঙ্গনা শব্দ প্রতিমা মুখ,
ঘরের দরজা কি মসজিদ না মন্দির নাকি গীর্জার
যারা পারে তারা থাকুক সময় সোহাগি সুরে,
কে কি ভাবলো রতি ঋতি সুখ সকল সৃষ্টি ছাড়া
নইলে আমি শুক্র গ্রহের পথিক তুমি রইলে ধ্রুব তারা।