দেবাশিস মুখোপধ্যায়ের কবিতা

চোখের আলাপ
১.
ঠোঁটে তার বাতাসের বাঁশি
ধরা পড়ে জলের আয়নায়
একটি মেয়ের ছবি নূপুর হারানো
চতুর্থ শিকারীর ফাঁদ কেটে
ফিরে আসে তার সঙ্গী মেঘ
হারানো তার আজন্ম স্বভাব
হঠাৎ বৃষ্টি নাম দিলে
কান্না শোনে সমস্ত পাড়া
২.
চোখের ভিতর সাধু বসে
আদর করে আলো
পাথর সরিয়ে রেখে
ঘর আর ঘর থাকে না
মায়াবী নক্ষত্র এসে
জায়গা করে নেয়
সে এক দুরন্ত হাতছানি
হাত পা দেহ বশে নেই
ভেসে আসে পারিজাত ঘ্রাণ
আমি চুরি করে
৩.
গাছটি ঘুমিয়ে আছে মাটির উপরে
ঝড় চলে গেছে ভিন্ন পথে
চন্দন কাঠের নৌকায়
চিতার তাপ নিতে মানুষ ছুটেছে
পুরনো গ্রামাফোনে
বড়ে গুদামের ঠুংরি
হেসে উঠেছে সুইসাইড নোট
৪.
রুটিন মাফিক কিছুই হয় না
কখন অভিমানী রোদ্দুর
কতশত অন্ধকূপ পেরিয়ে
ওলোটপালোট অনুভূতি
কোনো মুখোশ ছাড়াই
অভিসারে হেঁটে যায় বর্ষায়
ভেনাস বিউটি পার্লার
সাবধানী চাহনির আড়ালে
বিজ্ঞাপন সাঁটে দেওয়ালে
রহস্য উন্মোচিত না হলে
গোপন প্রশ্ন জেগে থাকে
যেন কস্তুরী
৫.
পতঙ্গের ব্যথা নিঃস্বতার কথা বলে
অনিকেত বাতাসে রোদের ঝিলিক
কেঁদে ওঠে ভিতর শিকড়
লাফিয়ে নামে চাহনি ঘুঘুর
তবুও শূন্যতা প্রশ্রয় পায় না
যতিচিহ্ন উঠে শুধু হইচই
বিয়োগের বুদ্বুদ মিলালে
সারল্য আসে ফিরে
ঝড়- ভাঙা পাখিদের নীড়ে
চোখের আরোহণ
১.
আপেলে ছড়ানো ব্রা
জেল্লা তুলছে ঘরের
গান থেকে সোহাগ
হলুদ বাড়ি লাজে রাঙা
পুজোর অ্যালবামে
পুরনো তালা ভেঙে
ফিরল শ্রাবণ
মল্লারে ভেসে গেল
সাজানো বিষাদ
নিষেধের স্বর
২.
অলৌকিক আলখাল্লা খুলে
তুলে নি পাতার পোশাক
ফুরফুরে হাওয়ায়
মেদুর পদ্মের রহস্য খোলে
নির্মাণের গল্পে
ভ্রূণ স্বপ্ন কথা রাখে
লৌকিক ঝরোকায়
৩.
গভীর জলের গুহায়
গাছেদের দীর্ঘ ছায়া
খিল খোলে স্মৃতি
ছোট ব্যালকনি
বসে আছে ডাকবাক্সে
শ্লোকহীন মেঘে
বৃষ্টি না এলেও
অক্ষর ভিজে চিঠিদের গায়
৪.
কুমারী ভোরের কাছে
যে নৈঃশব্দের শেষ
সেখানে দীর্ঘ মাঠের বুক
জলকণায় আয়না ফোটায়
ডানা ধরা পড়ে
মাছরাঙায় ফিরোজা রোদ
অমলিন
৫.
সহবাস জেগে আছে ডালে
পাতা জানে কখন লিখবে
ফলের কাহিনী
হারমোনিয়াম ছাড়া
ম্যাজিক প্রভাতী সঙ্গীতের
উচ্ছেদের গল্প ফুরালে
মাটি নিশ্চিন্তে রান্না চাপায়
সুবাস ঘরে ফেরে