জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা

থ্রিলার

জেমস বন্ডের নাম শুনেই আমার বিড়ালটির
কান খাড়া যেন এক্ষুনি ইঁদুর ধরার ঝাঁপ।
০০৭ এর সঙ্গে জেমস বন্ডের গাঁটছড়াটি
কোন বেদমন্ত্রে বাঁধা জানেন ইয়ান ফ্লেমিং।
তীক্ষ্ণতায় সে সেভেন ও ক্লক ব্লেডের আইকন
নীলচোখের স্লিম বিড়ালের সঙ্গে তার মিল।
ওয়ান ম্যান আর্মির ফাইটার-কমান্ডার বন্ডের
তাল আর বেতাল হলো ডানহাতের ভদকা মার্টিনি
আর বাঁহাতের পুসি গ্যালোর জিনিয়া ভ্যালেরি
সিলভিয়া বা অ্যান্ড্রিয়া দ্য স্টিমুল্যান্ট বিউটি বন্ড গার্ল
সাপের সম্মোহনে ষড়জ-পঞ্চমে গায়…
প্রথম ও পঞ্চম রিপু ছাড়া বন্ড এক শীতের সাপ।
জাদুকলমের খোঁচা পরিত্রাতা জেমস নিন্দার পাশে
দুর্বলতা-অস্ত্রের দুর্দম আনন্দ সমুদ্র পাহাড় দেশ
জাদু করিশ্মা অ্যাড্রিনাল ফোয়ারা স্বর্গ-নরক একাকার
ধ্বংসের ফাঁকে আশার আলো জয় নিয়ে় ছুটির লোভন
অহিংস বিকেল ছেঁড়ামেঘ নীলজলসুন্দরী গরম তরলে
ডুবে লাইসেন্সড কিলার বন্ড।
বন্ড ছুটছে স্পিডবোটে নামছে প্যারাসুটে
উড়ছে সুপার সোনিক জেটে ডুবে যাচ্ছে সাবমেরিন
ভেঙে দিচ্ছে শত্রুর সব প্রতিরোধ দুহাতে সুন্দরী দুহাতে
পিস্তল বারুদগন্ধ বাগানে সে অপরাজেয় বিনাশক।

সৌধলিপি

মুখটাকে শোপিস রাখো।
কাছাকাছি নিষ্কাম কর্মে
দুর্গন্ধ একটি প্রাচীর বা
দূরনিক্ষেপ যন্ত্র।
ডেন্টাল প্লেক বা আলসার
অন্ধকারে জীবাণু যাপন।
ফ্ল্যাশব্যাকে বিলাসকৌশল
চুড়িওয়ালি চোখে চেড়ির খিদে।
মলিন দেয়াল জুড়ে উজ্জ্বল
বর্ণমালার পরকীয়া অর্থাৎ
ব্যর্থতার কথাকাব্য।
শোপিসে দাগছোপ ঘা
দুপোঁচ পুলটিস দিও ব্যর্থতা।

আউলকবি বৈদ্যনাথ

সংজ্ঞা বদলে যায়।স্তুতিপাঠকের ডানায় আগুন সংকেত জাগে।প্রতিবাদের শাণিত ভাষায় ছন্দে গানে নতুন সংজ্ঞা পায় চারণ।চরণে চরণে তার সমাজের কথা দেশ রাষ্ট্র মানুষের কথা।কলমের কালি লেখে কৃষক শ্রমিক মজুরের কথা।দুঃখ তাড়ানোর স্বপ্নমাখা ইস্তাহার অসাম্য আর অন্যায়ের চিরশত্রু বাঁশিতে ঢালো বিষ।
তোমার অর্ফিয়াস-বীণায় উদ্ধারের দুর্লঙ্ঘ্য শপথ উচ্চারণে আত্মস্বার্থ গন্ধটুকু নেই।শাসক-শোষক-তোষণ জানে না যে কবি সুর যার শেখেনি স্তব অন্যায়ের এ কবির বাঁশিতে তার প্রাণ।
অথবা খরায় অভাব-দারিদ্র‍্যে মরে যেতে জানে না যে প্রাণ, কিংবা ঘুঙুরের বোল ব্রীড়াবতীকূল ভাসে কাশফুলে। পাঁদাড়ের ভাঁটফুল ভুডুর ডুমুর শালিক দোয়েলের খুনসুটি স্বর্গ টেনে আনে।নিক্কণে বৈষ্ণবী পা রাধাকুঞ্জে ডাকে শ্যাম ললিতা-লালিত লতা জড়ায় মাধব।অপরূপ সুগন্ধি ফুল শালবন হিজল পিয়ালের ডাল ছায়া ধরে থাকে।কদমকেশরে কালিদাস জাগে। প্রেম ও আগুন বুকের দুপাশে রাখো ঘরের চারণ।

মাথা

কবন্ধ শব্দটির এখনো মাথা গজালো না
অথচ তারা বেশ হাঁটে ফেরে আনন্দ মাখে
পতাকা নিয়ে হাঁটে ফাটা কাঁসি হয়ে বাজে
জিন্দাবাদ!মানছি না!মানবো না!এমন কত
কথাই বলে ভাবনা টলে যায় ভাবি এরা ঠিক
মানুষ নয় আধা মানুষ বা চার আনা মানুষ
বাকিটা ভাবলে হাত-পাগুলো উঁচু ছাদের
কার্নিশ দেখায় ওদের মাথা নেই বলে আমার
ভাবনায় স্টিকার লাগায় কিছু উচ্ছৃঙ্খল জীব
মাথা থাকলে কি প্রলয় আসবে?
স্কন্ধকাটার সংসারে নামতা বাজায় অভাব
শিশুটি জ্বরে ঘ্যানঘ্যান করে না ওষুধ না পথ্য
মাথা না পেলে ঝুপড়িতে আলো জ্বালাবে কে?

বিকল্প

পারি না এমন নয় ভেঙে দিতে সব ব্যবধান
তুমি যে উত্তরহীন এটুকু দূরত্ব প্রায় উড়ে যায়
জেলখানা গান।
প্রথমে আগুনই ছিল সকাল পরিবর্ত বিকেলে
তুমি আসবে ভাবনার আটচল্লিশ ঘণ্টা সময়
কাকের ডানায় ঠিক উড়ে যেত।
এখন মুহূর্তগুলো খুব ভারি বিমল অভ্যন্তর
বহিরঙ্গ উপচানো নর্দমায় গেছে।
তুমিও আসো না বলতে দ্বিধা নেই যদি আসো তবু
নিশ্চিত জানি এই গ্র‍্যানাইট দৃঢ় অন্ধকার অভঙ্গুর।
এত চেনা মুখ শব্দ পরম্পরা কীভাবে রাখার ?
তার চেয়ে কংক্রিট পথ ফেলে নেমে যাই ভূমিজ পাড়ায়
নগণ্য চাওয়ার পাশে হাঁস-মুরগি সংসার কোলাহল গান
ওখানে অন্ধকার মাঠে জোনাকির ফুল… আলো আর আলো।