গৌতম মণ্ডলের কবিতা
দেশ চাই
তিনি এলেন,দেখলেন,
এবং কতগুলো খামার বানিয়ে নিলেন প্রথমে;
তিনি সমস্ত জনসংখ্যাকে ভাগ করলেন,
নতুন নতুন নাম দিলেন,
কিছু গর্ধভের মাথায় সিং লাগিয়ে দিলেন,
সিংহের মাথায় পুঁথি
এবং আকাশের সীমানা নির্ধারণ করে দিলেন বকেদের জন্য,
স্বচ্ছন্দে মেনে নিল তারা, কারণ তাদের ডানায় লাগানো ছিল ধর্মের তেতো ফল।
কিছু অদ্ভুত প্রাণীর জন্য তাঁর মাথায় কোনো উদ্বেগ ছিলনা,
কারণ তাদের একদলের কাজ ছিল রাজ-পথে ফুল ছড়ানো।
আর একদলের ছিল সভা সমিতি পুরস্কার,
এবং ল্যামিনেটেড কাগজে নিজের নাম দেখে বিস্ফারিত হওয়া।
তারা, আসে, বসে এবং ট্রেনের কামরায়, নৌকার পাটাতনে পাড়া নিজেদের ডিম প্রদর্শন করে।
ওদিকে কিছু পাগল, খ্যাপাটে কোথাও থাকতে চায়না,
গিলোটিন দাও আর ফাঁসি
মাথায় পরতে চায়না অন্যের সিং, কিংবা পুঁথি।
তারাই চীৎকার করছে, দেশ চাই, রাষ্ট্র নয়।
রোজ রোজ তুমি এমন করতে পারো কি?
আমাদের মাঠ দিগন্তরেখা অব্দি
তুমি করে দিলে কাঁটাতার দিয়ে বেড়া,
একেকটা খোপের নাম দিলে অধিকারে
আমি থেমে যাবো,কেননা সর্বহারা।
রোজ রোজ তুমি এমন করতে পারো কি?
আমাদের দল চলছিল গুহা বনে
তোমার একটা প্রাসাদ ছিল যে চাওয়ার
সময় বুঝে আকাশের দিক হ’তে
ঈশ্বর এনে সহজ করলে পাওয়া।
রোজ রোজ তুমি এমন করতে পারো কি?
ক্রীতদাস সেজে অট্টালিকার বাইরে
তোমার রঙেই সাজিয়ে দিলাম তাস,
তুমিও তখন টের পাওনি কি পেয়েছ
আমাদের মাঝে ছিল এক স্পার্টাকাস।
রোজ রোজ তুমি এমন করতে পারো কি?
নতুন পাগড়ি মাথায় জড়িয়ে নিয়ে
ধর্মের কাছে মাথা করে দিলে হেঁট,
তুমিও তখন সন্তর্পণে ভাবো
প্রগতি দিয়েই এবার লড়বে বেট।
রোজ রোজ তুমি এমন করতে পারো কি?
আমরা তখন ভাগ হয়ে গেছি দলে
খোলা মাঠ আর বিনিময় প্রথাটথা,
সব ভুলে গেছি,মন্দিরে মসজিদে
সুযোগমতো বদলে ফেললে খাতা।
রোজ রোজ তুমি এমন করতে পারো কি?
আমরা যখন খাবার চাই ও কাজ
তুমি তুলে আনো বাবরির জমিজমা,
আবার আমরা ভাগ হয়ে গেছি দলে
তুমি ভোগ করো রাজপাট তরজমা।
রোজ রোজ তুমি এমন করতে পারো কি?
তবুও আমরা হাতে হাত রাখি যদি
এই দুর্দিনে পাশাপাশি পথ হাঁটি,
তুমি বলে দাও তোমার কানুন দিয়ে
দেশহীন আমি, আমার নেই তো মাটি।
রোজ রোজ তুমি এমন করতে পারো কি?
তোমার লাগানো কাঁটাতারে যদি আজ
জীবনের পথ দেশহীন হয়ে যায়,
নিশ্চিত জেনো,উপড়ে ফেলবো সব
রাষ্ট্রের বেড়া, পৃথিবীর সব দায়।
পাহাড়
প্রিয় আননূর
এবার তোমার দেশে গেলে বান্দরবান দেখিও
পাহাড় দেখতে কার না ভালো লাগে!
আমার তো আরো…
কান্না বলো, দুঃখ বলো
অন্ধকার, অন্ধকারে খসে পড়া জল
সবই এক সময় জমে জমে পাহাড় হয়,
আমার ভিতর পাহাড় আছে, তোমারও, সবারই
ভেতরের পাহাড় দেখতে পাইনা ব’লে ছুটে যেতে
ইচ্ছে ক’রে বরফের ঢিবির কাছে।
প্রিয় আননূর,
এবার তোমার দেশে গেলে বান্দরবান দেখিও,
প্রিয় আননূর,
এবার আমাদের দেশে গেলে বান্দরবান দেখিও।