গল্প: প্রাণের আগমন

গল্প: প্রাণের আগমন
মোস্তফা হায়দার
রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাড়ি, মাধুর ছাড়াই স্বাভাবিক জীবনের বাইরে এসে অস্বাভাবিকভাবে কতই না মা সন্তান জন্ম দিয়ে এ সবুজ ভূমিকে হৃদ্য করেছে। সে তালিকা সমাজ হাতে রাখে না। যদি তা হয় বস্তি বা পাগলের তা হলেতো থাকবেই না। কিন্তু একজন শিক্ষিত সমাজের শিক্ষক যদি হন তাও তালিকায় আসবে কিনা জানা থাকে না। সমাজও ভদ্রতা এবং অন্যান্য কারণে তা এড়িয়ে যায়। অথবা স্থানের নির্দিষ্টতার কারণে তা থাকে আরো আড়াল।জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়ার কোথাও এমনটির সুযোগও রাষ্ট্র রাখেনি। তবে খ্যাতির আড়াল ভেদ করে যখন ব্যক্তি হয়ে যায় উচ্চতার মাপকাঠিতে তখন জায়গাটি হয়ে যায় অনন্য।
মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়ে ফারজানা বাড়ীতে রেষ্ট করছে। সরকারিভাবে এ ছুটি পাশ হওয়ার পর প্রায় বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এ ছুটির আঞ্জামে সক্রিয় থাকে। সরকারি অফিস থেকে শুরু করে সব প্রতিষ্ঠানে তখন পাশের বন্ধুদের উপর কাজের চাপটা বেড়ে যায়। অলটারনেটিভ কোনো ব্যবম্থাও তেমন একটা করার থাকে না। ফলে মানবিক কারণে অন্যরা তা সারিয়ে নিতে বাধ্য হয়। এটার বিপরীত চিত্রও আমাদের ভাবায়। স্ব স্ব কাজের ক্ষেত্রে জট থেকে যায়। রাস্ট্রীয় অর্ডার বলে হয়ত কেউ মুখ খোলে না। নিরবে হজম করতে হয়। তবে নিয়ম করা যেতো যে, মাতৃত্বকালীন ছুটি পর্যন্ত বিশেষ আদেশের
মাধ্যমে অলটারনেটিভ ব্যবস্থা করা। হয়ত একসময় হয়ে যাবে নয়তো সয়ে যাবে।
ফারজানা পাঁচ ভাই বোনের এক মাত্র বোন। সবার মধ্যমনি। সুন্দরের চেয়ে সে পরিপাটি বেশী। ছাত্র জীবন থেকে একটু ব্যতিক্রম স্বভাবের। ছেলেদের মতো সব খেলাধুলায় তার অঙশগ্রহণ ছিল প্রাণবন্ত।বাড়ীর আশ পাশ থেকে শুরু করে স্কুল কলেজে যার সরব উপম্থিতি থাকতো বিভিন্ন ইভেন্টে। বাবা সালামত সাহেব মাষ্টারি করলেও ছেলে মেয়েদের বিষয়গুলো দেখভাল করতো মা শরীফা খাতুন। তবে ফারজানাকে বাবা একটু ভিন্ন চোখে দেখতেন। মেয়ের মুখে যেন খই ফুটত। জাতিগড়ার কারিগর বলে সহজে তিনি তা আঁচ করতে পেরেছিলেন। মেয়েকে সব সময় একটু ব্যতিক্রম রাখতে চেষ্টা করতেন।’মেয়েকে বলতেন তোমরা পাঁচ ভাই বোন।সবার মাঝে সম্ভাবনার ছোঁয়া আমার চোখে পড়েছে। বিশ্বাসও আছে। কিন্তু তোমার চেহারায় রাজ্যের বিশালতা দেখছি। তুমি একটু মনোযোগি থেকো। যে কোন কাজে সতর্কতার সহিত সামনে হাঁটবে”।
গত পাঁচদিন ধরে ফারজানা র বার বার বাবার এ উপদেশগুলো মনে পড়তে লাগলো। কি বা করার থাকে! নারীরাতো ইজ্জতের বায়নায় সব করতে হয়। ফারজানা মেডিক্যাল চেকআপটাও নিয়মিত করার চেষ্টায় কসুর করতেন না। স্বামী ফরিদ থাকেন প্রবাসে। বাড়ীতে ভাই ব্রাদার নেই। ফারজানার বাপের বাড়ীতে তার ছোট দুভাই ছিল। এটাই স্রষ্টার পরের ভরসা।
ফারজানার চাকরিস্থল টা ভাগ্যক্রমে বাবার বাড়ীর পাশে হওয়ায় অনেক সুবিধা হয়েছে। খুব সতর্কতাও অবলম্বন করেন। স্বামী ফরিদ নিয়মিত খোঁজ রাখেন। শশুর শাশুড়ি তো আছে।
স্বামী ফরিদ এবার বাড়ি আসার পর স্ত্রীকে ইচ্ছে প্রকাশ করে যে, দেখো ফারজানা এবার আমরা একটু পরিপাটি হয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবা দরকার। ডাক্তারও বলেছে প্রয়োজনে প্রথমটা নেয়ার পর কিছুটা ব্রেক দিতে। তাই আগ্রহে আমার এবারের ইচ্ছে স্রষ্টা যদি পূর্ণতা দেয়। তাহলে কল্যাণের স্রোতধারা বইবে। ফারজানা মুখে কিছু না বললেও চেহারায় সম্মতির রুপ এঁকে দিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে নাকে মুখে ঘষতে লাগলেন। শেষমেষ তা রুপ নিয়েছে আগামী প্রজন্মে।
আজ শুক্রবার মধ্যরাত থেকে হালকাচালে ফেইন শুরু হয়েছে। ভোরের আলোর জন্য অপেক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। না ; ব্যাথা বাড়ছেই।
ফারজানা ভোরের অপেক্ষা না করে মা কে ডাকলেন এবং রিকশার ড্রাইভারকে কল দিলেন। ড্রাইবার খোকন কে মাস খানেক পূর্ব থেকে বলা আছে। সে হিসাবে সে কল পাওয়ার সাথে সাথে রবি র আলোর পূর্বে এসে হাজির। ছোট ভাই রাহাতকে ডাক দিলেন। মাকে নিয়ে ফারজানা নিজেই রিকশার হুট তোলে ওঠে বসলেন। ড্রাইভার জিগায় -আপা টানবো নাকি!
ফারজানা বলার আগেই শরীফা খাতুন বলে – টানো। একটু দেখে শুনে টেনো কাকা।
কাকি আপনে চিন্তা করবেন না। আল্লাহ ভরসা।
ফারজানাদের বাড়ী থেকে মেডিক্যাল মাত্র দেড় কিলোমিটারের মাথায়। গাছুয়া মেডিক্যালের গেটের সামনে রিকশা এসে হাজির। ফারজানার পেইনও বাড়তে শুরু হয়েছে। সে আস্তে আস্তে পা ফেলে কোন রকমে সিঁড়ি বেয়ে মেডিকেলের দুতলায় উঠলেন। রিসিপশনে গিয়ে ইমার্জেন্সিতে কাউকে পাচ্ছেন না। পূর্ণিমা নামে এক নার্স পূর্ব থেকে তার পরিচিত। পূর্ণিমাদিদি অবশ্য এ এলাকার সবার পরিচিত। তবে ইদানিং দিদি তার ছেলে মেয়েদের মানুষ করতে গিয়ে শহরে বাসা নিয়ে থাকেন। তাই বৃহস্পতিবার হলে চলে যান। রবি অথবা সোমবারের দিকে অফিসে আসেন। ফারজানা কাউকে না পাওয়ায় হঠাৎ করে পূর্ণিমা দিদির কাছে কল দিতে প্রস্তুতি নিলেন। ফারজানা ধারণা করেছেন সিপটিং ডিউটির কারণে হয়ত পূর্ণিমা দিদি কোয়ার্টারে আছেন। এতো সকাল ঘুম থেকে উঠলেন কিনা সেটাও ভাবছেন। এ দিকে তার ব্যাথাও বাড়তেছে। মাঝে মাঝে মা কে জড়িয়ে ধরে চিৎকার দেন। এখনো রিসিপশনের বাইরে টুলের উপর বসে আছেন মা মেয়ে। ছোট ভাই এতো সব কিছু না বুঝলেও নিয়মকানুন কিছু জানেন। তাই সে এ দিক সেদিক কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। বোনের ব্যাথার চিৎকারের আওয়াজ পেয়ে ছোট ভাই কে কোথায় আছেন বলে চিৎকার চেঁচামেছি শুরু করলে মহিলা ওয়ার্ডের ব্যাড থেকে সদ্য জয়েন করা এক নার্স এসে হাজির হন। ফারজানা তাঁকেও চিনে। তার নাম রিতামনি। ফারজানা দেখা মাত্রই বলে রিতা দিদি আমার খুব ব্যাথা হচ্ছে। একটু পূর্ণিমা দিদিকে যদি কল দিতেন। আমি দুবার দিয়েছি। দিদি মনে হয় ঘুমাচ্ছে। আপনার কল পেলে হয়ত রিসিভ করতে পারে।
ফারজানা ব্যথার চোখে ভুল নম্বরে কল করে বসে আছেন। কল চলে গেছে বান্ধুবী নৌমিতার কাছে। যার ফলে কোন সাড়া পায়নি। অথচ ফারজানা সার্বক্ষনিক পূর্ণিমা দিদির ট্রিটমেন্টে ছিলেন। তাই ফারজানার একটু রাগ আসছিল।
ইতোমধ্যে রিতামনি ফারজানাকে মহিলা ব্যাডে শোয়ানোর ব্যবস্থা করলেন। তিনি একাই আছেন। মেডিক্যালে পুরুষ ডাক্তার বলতে কেউ নেই। সবাই শুক্রবার আসলে শহরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। হোক সে সন্দ্বীপে জন্মগত ডাক্তার। ফলে ডেলিভারি কেস বলে কোন ধরণের ঝুঁকিও নিতে সাহস করতে পারছে না।
রিতা দি আপনি একটু পূর্ণিমা দিদিকে দ্রুত আসতে বলেন। রিতা দিদি একটু ইতস্তত। কারণ পূর্ণিমা দিদি তো শহরে গেছে। এটা বলবে কী বলবে না সেটাই ভাবছে। রিতার মুখের ভাব দেথে ফারজানা বুঝে গেছে – পূর্ণিমা দিদি সন্দ্বীপে নেই। সে একটু ঘাবড়ে গেছে। রিতা ফারজানাকে অভয় দিয়ে আশ্বস্ত হতে বলে-কিছুক্ষণ দুজনে নিরবতা পালন করলেন। ফারজানা কিছুক্ষণ চুপ খেকে মা ও রীতাকে বললো -আমাকে একটু দেখে নেন। পজিশন সব ঠিক ঠাক আছে কিনা! রিতা তাকে আশ্বস্তের মানসে বলে- আপনি একটু চুপ থাকেন। দেখি কী করা যায়।
ফারজানা বেশ কিছুক্ষণ দম ধরে ছিলেন। পাশে থাকা মা শরীফা খাতুন বলতেছেন, মা রে এটা নারী জাতির জন্য কঠিন পরীক্ষা! এ সময় বেশী বেশী আল্লাহরে ডাকতে হয়। আল্লাহ ছাড়া এ যাত্রায় নারীর কোন উপায় নেই। নারীত্বের এ স্বাদ বড়ই বেদনার। একটু ঝিম ধরে থাক্। দেখি আল্লাহ কী করে।
রিতামনি কল করে আরো একজন নার্সকে ডিউটিতে আনলেন। তিনি অবশ্যয় রিতার চেয়ে ৪বছরের সিনিয়র। ভালই বুঝে সুজে। মাধবী আসার পর রিতার সাহস বেড়ে গেছে। মাধবী ফারজানাকে ধাত্রীবিদ্যার অনুকূলে নিয়ে চেকআপের ব্যবম্থা করেন। চেকআপ শেষে মাধবী জানায় – ‘আপনার বাচ্চার পজিশন একটু ওলট পালট মনে হচ্ছে। তার চেয়ে বরং এখনো সময় আছে। আপনার শরীরে অবস্থাও ঠিক আছে। আপনি দ্রুত চট্টগ্রামে চলে যান। সেটাই আপনার জন্য ভালো হবে ‘।
ফারজানা চোখ মেলে মা র দিকে তাকালে শরীফা খাতুন বলে – মা দ্রুত বের হও এখান থেকে।
ফারজানারা আর দেরি না করে রিকশার ড্রাইভারকে পুনরায় কল দিলে সে আসার আশ্বাস দেয়। ফারজানার কথা শুনে মাধবী আর রীতা দুজনে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। ভেতরে ভেতরে তারা টেনশন মুক্ত হলেন।
যদিও মেডিক্যালের এ নার্সরাই সময় অসময়ে রোগীদেরকে অযথা ধরে রাখতে চেষ্টা করলেও সাধারণত ডেলিভারী রোগী বুঝে কাজ করেন। আজও তাই হয়েছে। ফারজানারা শিক্ষিত পরিবারের হওয়ায় পূর্ণিমা দিদি মেডিকেলে কোনো বড় ডাক্তার না থাকায় তারা আজ কোন ভুল সিদ্বান্ত নিতে সাহস করেনি। তবে বেশীরভাগ নর্মাল ডেলিভারী করেই ছাড়ে। বখশিষ ভালই থাকে।
ফারজানা সাহস সঞ্চার করলেন এবং মা কে নিয়ে নিচে নেমে রিকশায় উঠলেন। সোজা বাড়ীতে গিয়ে হাজির। তখনো ফারজানার বাবা স্কুলে যায়নি। বাড়ীতে যেতে যেতে গাছুয়া ঘাটের ফাস্টটিভের সময়ও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এতোদাঞ্চলে নদী পারাপারের তেমন কোন উন্নত ব্যবস্থা হয়নি। ফারজানা বাসায় এসে খেয়ে ধেয়ে নিজে নিজে সাহস সঞ্চার করে মা কে সাথে করে বাড়ি থেকে রওয়ানা হলেন। মা মেয়ে রিকশায় ওঠে বাড়ি থেকে রওয়ানা দিলেন।
স্বামী বিদেশ। কল করার তেমন কোন ব্যবস্থা নেই।স্বামী স্ত্রী দুজনের ভাল বুঝাপড়া আছে। শাশুরির প্রতি আস্থা থাকায় মাস খানেক পূর্বে চিঠি দেয় ফারজানার কাছে।
প্রিয় ফারজানা,
ভালোবাসা নিও। নিশ্চয় আমার অনাগত প্রজন্ম কে পৃথিবীর রং রুপ দেখানোর ভরসায় আল্লাহর রহমতে ভাল আছো। প্রতিনিয়ত দোয়া করি ভালো থাকার। আল্লাহর পরে তোমাকে শাশুড়ি মা র কাছে রেখে এসেছি। তাঁর আদেশে চলতে চেষ্টা করবে।
দিনক্ষণ ঠিক হলে যেভাবে সুন্দর মনে করবেগড় মুরব্বিদের পরামর্শ নিয়ে ডেলিভারি কাজটা করতে চেষ্টা করবে। আল্লাহর ভরসা ছাড়া এ সময় নারীদের আর কোন পথ নেই। আমি পাশে থাকলে তোমার নিশ্চয় ভাল লাগত। কিন্তু নিয়তি যে এমনই। হয় বাসায় ভাল ধাত্রী এনে না হয় মেডিক্যাল গিয়ে ডেলিভারী করার চেষ্টা করবে। যেভাবে ভাল মনে করবে সেভাবে করতে চেষ্টা করিও। দোয়া করি ভাল থেকো।
বাড়ীর মুরব্বিদেরকে সালাম দিবে আর ছোটদের স্নেহ ও ভালোবাসা দিবে। শাশুড়ি মা কে দোয়া করতে বলিও।
চিঠি পেলে সব জানাবে কিন্তু।
ইতি
তোমার স্বামী।
বাড়ী থেকে বের হয়ে সোজা মেইন রোড তথা হকসাহেবের বাজার টু গাছুয়া ঘাট। বাড়ী থেকে এক কিলোমিটার পার না হতেই রিকশার মাঝে ফারজানার পেইন শুরু হয়েছে।
চরের মাঝখানে একটা সরকারী দিঘী আছে। ওই দিঘীর ঠিক উত্তর পাশ বরাবর রাস্তা। যদিও দীঘি রাস্তা থেকে শ তিনেক গজ দূর আছে। এই সরকারী দীঘি টা সবসময় এতদাঞ্চলের কৃষকদের পানি সেচে ভালই কাজ দিতো। এই দীঘির চতুর্পাশজুড়ে একসময় প্রচুর তরমুজ,ভাঙ্গি ইত্যাদির চাষ হতো। এ দুটো ফসলের চারা রোপন থেকে ফসল পাঁকা পর্যন্ত এ দীঘির পানি নিয়ে সবাই পানি সেচের ব্যবস্থা। আর এ কারণেই একসময় এ অঞ্চলের তরমুজ বাইরে রপ্তানি হতো। কত মানুষ যে জমিনের আইলে বসে খেয়েছে তার কোন শেষ ছিল না। শ একশো থেকে সর্বোচ্চ পাঁচশ ছিল। তখন বেশীর ভাগ মানুষ জমিনে গিয়ে সম্তাদামে কিনতো সাথে ফ্রি খেয়ে আসতো। জমিনে দুচালা একটি তাবুর মতো থাকতো। খড়কুটোর উপর কাঁথা পেতে রাত যাপন হত। স্কুল মাদ্রাসার বন্ধের দিনে সবাই গিয়ে স্ব স্ব আত্মীয়ের জমিনে গিয়ে হানা দিত। আলাদা একটা আমেজ ছিল।
ফারজানার প্রসবকালীন ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। ধৈর্যের বাঁধ ভাংতে শুরু হতে দেখে মা শরীফা খাতুন রিকশার ড্রাইভারকে বললেন বেরী বাঁধ আর কতদূর বলতো?
ড্রাইভারের উত্তরের অপেক্ষা না করে ফারজানা বলে- মা তুমি রিকশা থেকে দ্রুত নামোতো ; ব্যগটা খোলে দুটো কাপড় বের করে রিকশার আড়াল করো ; আমি আর সহ্য করতে পারছি না। শরীফা খাতুন মেয়ের কথায় অতটুকু আঁচ করতে না পারলেও প্রসব বেদনা যে যন্ত্রণার তা তিনি ভালই জানেন। কিন্তু শরীফা খাতুন মনে করেছে মেয়ের প্রসব বেদনার পরিমাণ একটু বেড়ে গেছে। শরীফা খাতুন রিকশা থেকে নামার আগেই ফারজানা ড্রাইভারের হাত ধরে নেমে বললেন- ব্যগটা খোলেন। ওখানে দুটো কাপড় ও একটি বিছানা চাদর আছে। তার আগে আপনি রিকশাটাকে রাস্তা থেকে নিচে নামিয়ে ঘাসের চর্নায় রাখেন। ড্রাইভার কালু ব্যগটা রাস্তায় নামিয়ে রিকশাটাকে রাস্তা থেকে ঘাসের চরনায় তথা ফুটপাতে নামাতে লাগলেন। শরীফা খাতুন ব্যগ থেকে দ্রুত কাপড় আর বিছানা বের করতেই ফারজানা কাপড় একটি টেনে সবুজ ঘাসের উপর বিছিয়ে বসে গেলেন এবং মাকে দ্রুত কাপড় ও বিছানা দিয়ে ঘীরা দিতে বলতে না বলতে সে শুয়ে গেলেন।
জীবন দেয়ার মালিক তাকিয়ে থাকেন ব্যক্তির চেষ্টা করার দিকে। স্রষ্টা যে কারো চেষ্টাকে বাস্তবতায় রুপ দিতে তেমন একটা কার্পন্য করেন না। যদি ব্যক্তির নিয়ত ঠিক থাকে এবং বিধাতার লিপিতে যদি তা লিপিবদ্ধ থাকে। গত কয় বছর পূর্বে এক বিমানযাত্রী বিমান ফ্লাই করা অবস্থায় মধ্যাকর্ষণ শক্তির উপরে একটি সন্তান প্রসব করে। যা ইতিহাসের এক বিরল ঘটনা। সারা পৃথিবী ব্যাপি নিউজ হতেই থাকল। হুকুম দাতার হুকুম যে মুহুর্তে কার্যকর হবে সে কাজটি সেখানেই সম্পাদিত হবে। এ বিশ্বাসের জায়গা অনেক বড়।
কক্সবাজার ঈদগাও এলাকার একটি মুড়া পাহাড়ে যৌথবাহিনী গিয়েছে অবৈধ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে। কখনো পুলিশি কায়দায় কখনো হাতি ব্যবহার করে। হাতি ব্যবহার করার কারণ ছিল। যাতে মানুষ ভয় পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় এবং হাতির শূল দিয়ে উচ্ছেদ করা সহজ হয়। একটি টোঙা পাহাড়ের টিলায় একটি মাটির ঘর ছিল। ছনের ছাউনি দিয়ে মাটির ঘরটির সামনে হাতি নিয়ে হাজির প্রশাসনের লোকহীন মাহুত এবং এলাকার কিছু পাতি নেতা। যারা ছিল সুবিধাভোগি। যেই ক্ষমতায় থাকুক না কেনো সুবিথাভোগিরা সবার সাথে নিজেদেরকে ভালই মানিয়ে নিতে পারে। তারা এ সমাজের ধুয়া তুলসী পাতা। তাদের সার্থই সবসময় ঝিঁয়ে থাকতো।
হাতিকে বার বার মাহুত ইশারা করছে। হাতি ইশারা শুনছে না। হাতি বার বার ঘোঁ ঘোঁ করছে। মাহুত বার বার চাপ দিলে একপর্যায়ে মাহুতকে হাতি শূল দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে ছুঁড়ে মেরেছে। মাহুত অনেক দূরে গিয়ে পড়েছে। পাশে দাঁড়ানো লোকজন সবাই অবাক। ঘটনা কী! মাহুত আস্তে আস্তে ওঠে বসলেন। হাতি ওই ঘরের সামনের উঠোনে বসে পড়লেন। দুজন গিয়ে ভয়ে ভয়ে মাহুতকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে আসলেন।মাহুত নেমে সবাইকে বললেন – আপনারা কেউ একজন ঘরের ভেতর প্রবেশ করুন। দেখেন তো সেখানে কী সমস্যা!
এলাকার একজন ঘরে ঢুকেই দেখতে পাচ্ছেন, দুজন মহিলা। একজন আরেকজন ডেলিবারি হওয়া মহিলার পাশে নাড় কাটছেন! এ ভয়ানক দৃশ্য দেখে সে অবাক। অথচ মহিলারা জানেই না বাহিরে এতো কান্ড ঘটে গেছে। কারণও ছিল। পুরুষরা সবাই যৌথ বাহিনীর ভয়ে পলাতক। বাহির থেকে দরজা হালকাভাবে লাগানো ছিল বলে অন্যরা মনে করেছে বাসার সবাই পলাতক।