গল্প : খুঁটি

গল্প : খুঁটি
আরিফুর রহমান
ঝোড়ো হাওয়ায় কাঁঠালগাছটি ভেঙে মাটিতে লুটিয়ে পড়বার উপক্রম হয়েছে।
তেমন বড়ো গাছ নয়। এবারই প্রথম ফলবতী হয়েছে। অনেকগুলো মুছি থেকে কেবলমাত্র একটি কাঁঠালে পরিণত হচ্ছে। সদ্য কৈশোর পেরোতে যাওয়া কোনো মেয়ে হঠাৎ মা হয়ে গেলে যেমন টলোমলো করে, তেমনই গাছটির দৈহিক গঠন! থেকে থেকে হাওয়ার জোরালো ঝাপটা আসছে আর ডালপালা সমেত ওর মাথাটা নুয়ে পড়ছে। স্পর্শ করছে সবুজ ঘাস বুকে নিয়ে ছুটে যাওয়া শহরমুখী রাস্তাটা!
‘আব্বা দেখলে নিশ্চয়ই আমাকে ডেকে বলতেন, দেখ মা, গাছটা কেমন সিজদাহ্ করছে!’ ভাবছে মায়মুনা মিতু। ভাবতে ভাবতেই মনে মনে বলল, ‘ওটা তো দক্ষিণ দিক আব্বা! ওদিকে নুয়ে পড়লেও সিজদা দেওয়া হয়?’
‘দুর পাগলী, গাছেদের আবার পশ্চিম দিক কী! ওরা যে-দিকে সিজদাহ্ দেবে সেদিকেই কাবাঘর! কেবল মানুষের কাবা পশ্চিমদিকে।’
‘পৃথিবীর সব মুসলমানের কাবা পশ্চিমদিকে না আব্বা। আমরা আরবের পূর্বদিকে থাকি বলে আমাদের কাবা পশ্চিমে, কিন্তু যারা আরবের উত্তরে দক্ষিণে কিংবা পশ্চিমে থাকে তাদের?’
মিতু স্পষ্ট দেখতে পেল তার আব্বা কোনো উত্তর না দিয়ে অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। হয়ত ভাবছেন, মেয়েটা কত বড়ো হয়ে গেছে! কেমন বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করে তাকে জব্দ করছে!
মিতু দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ‘আব্বা খুব অল্পতেই অবাক হয়ে যান!’
হাওয়ার বেগ কমে এসেছে। এখন কাঁঠালগাছটি কেবল এদিক-সেদিক দুলছে। সাথে দুলছে ছোট্ট কাঁঠালটি।
মিতু আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে, জানালার গ্রিল ধরে, চুপচাপ। ওর মনেও বইছে ঝোড়ো হাওয়া। সেই ঝড়ে ওর হৃদয়বৃক্ষটিও দুলছে এদিক-সেদিক। সাথে দুলছে ছোট্ট একটি প্রাণ, ওর হৃদয়বৃক্ষের শাখা খামচে ধরে! বড়ো অসহায় বোধ করছে মিতু। ‘কী করবে এখন? কীভাবে সামলাবে এই ঝড়? কী করে আগলে রাখবে নিজেকে কিংবা ওই ছোট্ট প্রাণকে?’ শত ভেবেও সে কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না প্রশ্নগুলোর।
মিতু আড়াই মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
প্রথম যেদিন কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য আপার কাছ থেকে খবরটা জেনেছে সেদিন তার মুখটা ঝলমল করে উঠেছিল, আনন্দে। তার খুশি দেখে স্বাস্থ্য আপাও খুশি হয়েছিলেন। বেশকিছু উপদেশও দিয়েছিলেন। ‘ভারী জিনিস তুলবে না। সাবধানে হাঁটা-চলা করবে। পুষ্টিকর খাবার ও ফলমূল খাবে। মনে রাখবে, তোমার ভেতরে আরেকটি ছোট্ট প্রাণ বড় হচ্ছে। নিজের যত্ন নেয়া মানে ওর যত্ন নেয়া।’
কিন্তু নিজের যত্ন আর কোথায় নিতে পারছে মিতু? সব চলছে আগের মতোই! বরং তার প্রতি অন্যদের অবহেলা যেন একটু বেড়েছে! কারণ সন্তানধারণের খবর শুনে তার স্বামী তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠেছিল এবং সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, এ সন্তান রাখা যাবে না!
মুহূর্তেই দুচোখ জলে ভরে গিয়েছিল মিতুর। প্রচণ্ড কষ্টে দুমড়েমুচড়ে যাওয়া মনটাকে সামলাতে সামলাতে সে কেবল বলতে পেরেছিল, ‘কী বলছ তুমি! আমাদের প্রথম সন্তান….!’
কথা শেষ করতে পারেনি সে। তার আগেই হুংকার ছেড়েছিল তার স্বামী, ‘আম্মা বলেছে না তিন বছরের আগে বাচ্চা না নিতে? মনে নাই? তাছাড়া আমি এখনো বেকার, দুজনেই বাবা-মারটা খাই। এর মধ্যে বাচ্চার ঝামেলা!’
‘এই ঠুনকো অজুহাতে….!’
‘তোমার কাছে ঠুনকো অজুহাত হতে পারে, আমার কাছে এটাই বড়ো সমস্যা।’
কী ভেবে, হঠাৎই দপ করে জ্বলে উঠেছিল মিতু, ‘তা সমস্যা সমাধানে তোমার চেষ্টা-চরিত তো কিছু দেখি না! সারাদিন থাকো তো জুয়াখেলা নিয়ে! জুয়াড়ি!’
রাগে হিস হিস করতে করতে তার স্বামী বলেছিল, ‘চুপ কর্, যা বুঝিস না তা নিয়ে কথা বলিস না। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা, আর তার জন্য যারা বাজি ধরে তাদের জুয়াড়ি বলে না, বাজিকর বলে। বাজিকরও ভদ্রলোকই হয়!’
‘হাহ্, ভদ্রলোক!’
সাথে সাথে মিতুর বাঁ-কান পেঁচিয়ে একটা থাপ্পড় মেরেছিল তার স্বামী! দুদিন সেই কানে কিছু শুনতে পায়নি সে, আর টানা সাতদিন পাষণ্ডটার সাথে কোনো কথা বলেনি!
ওই ঘটনার দুদিন পর গর্ভপাতের ওষুধ এনে রেখেছিল ঘরে; কিন্তু মিতু খায়নি, ফেলে দিয়েছে। তারও দিন পাঁচেক পর, গতকাল বিকেলের দিকে মিতুর স্বামী ওকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘ওষুধে কাজ হয়েছে?’
সে কোনো উত্তর না দিয়ে ওখান থেকে সরে গিয়েছিল। রাতে একই বিষয়ে আবারও কথা উঠলে এবং উত্তর পেতে জবরদস্তি শুরু হলে মিতু ওর শাশুড়ির ঘরের দিকে যেতে যেতে কেবল বলেছিল, ‘আমি মা-র সাথে কথা বলব।’
অবশ্য যে ক্ষীণ আশা নিয়ে সে তার শাশুড়ির কাছে গিয়েছিল তা শতগুণ ভয়ংকর দুরাশায় রূপান্তরিত হতে একটুও সময় লাগেনি! তারপর থেকে সে আতংকে নিজের ভেতরে গুটিয়ে আছে, ঝিনুকের মতো। আর ছোট্ট প্রাণটি যেন ঝিনুকের ভেতরের মুক্তোর মতো আলোর মুগ্ধতা ছড়িয়ে তাকে জিইয়ে রাখছে জীবনের যুদ্ধে। তবে সে জানে, তার খোলসটা খুব বেশি শক্ত নয়, নিজেকে এবং ওকে আগলে রাখবার জন্য।
বুকের খুব গভীর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল মিতুর। ও দাঁড়িয়েই আছে খোলা জানালায়।
হাওয়ার বেগ আরও কমে গেছে। এখন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ঝরছে। তার মাঝেই কাঁঠালগাছটির মালিক এলেন গাছটির কাছে, হাতে একখণ্ড বাঁশ। গোড়া থেকে মাথা পর্যন্ত বারদুয়েক দেখে নিয়ে গাছের নিচে এলেন তিনি। যুতসই একটি জায়গা খুঁজে নিয়ে বৃষ্টিভেজা নরোম মাটিতে গেঁথে দিলেন একদিকে চোখা বাঁশের খণ্ডটি। তারপর নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে গাছটির কাণ্ডের তিনটি জায়গায় রশি দিয়ে বেঁধে দিলেন বাঁশটির সাথে। তৈরি হয়ে গেল একটি খুঁটি। কিছুক্ষণ আগে ঝোড়ো হাওয়ায় নুয়ে পড়া গাছটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবার একটি অবলম্বন পেয়ে গেল।
কেন জানি, হঠাৎই, কাঁঠালগাছটির সাথে নিজের সাদৃশ্য খুঁজে পেল মিতু! ওর মনে হলো, গাছটির মতো সে-ও যেন জীবনের ঝোড়ো হাওয়ায় বারবার নুয়ে পড়ছে!
আর মনে মনে এমনই একটি অবলম্বন কি সে খুঁজছে? মানে নিজের পাশে দাঁড়ানো একটি শক্ত-সামর্থ্য খুঁটি? হয়ত তা-ই!
গাছটির মালিক চলে গেছে।
মিতু স্থিরচোখে গাছটির দিকে তাকিয়ে আছে। ওর মন দখল করে নিয়েছে ‘খুঁটি’ শব্দটি।
এইচএসসি-র পরপরই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মিতুর। ওর বাবা বলেছিলেন, ‘এটাই উপযুক্ত সময়, বিয়েটা করে নে মা। ওরা ধনী মানুষ, তুই সুখী হবি…. তোর মা চলে গেছে সাতবছর হয়ে গেল। এই সাতটা বছর ধরেই তো তুই কষ্ট করছিস। আমার দুঃখের সংসারটা আগলে রাখছিস। এবার নিজের সংসারের কথা ভাব মা। ছেলের বাবা আমার বন্ধু…।’
‘আমি আরও পড়াশোনা করতে চাই আব্বা।’ ওর বাবাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল মিতু। ‘তাছাড়া তুমি একা কি করে থাকবে? আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাব না!’
‘একা থাকব কেন? আমিও তোর সাথে তোর শ্বশুরবাড়ি যাব! আর পড়াশোনার কথা বলছিস? আমি জানি তুই পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাস। কিন্তু এখন আর শুধু সার্টিফিকেট দিয়ে কিছু হয় না রে, খুঁটিরজোর লাগে!’
মিতুর বাবা ওর জন্য সেই খুঁটি হয়ে উঠতে পারেননি। পারেননি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে। মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে মাত্র একটি রাত কাটিয়ে পরদিন ভোরেই ফিরেছিলেন নিজের ভিটেয়। সারাদিন নিমগ্ন ছিলেন নিজের ভেতর। কারোর সাথে একটা কথাও বলেননি। তারপর শেষ বিকেলের ক্লান্ত সূর্যের সাথে নিজের অবসাদগ্রস্ত প্রাণের শেষ আলোটুকুও নিভে যেতে দেখেছিলেন তিনি!
শোকস্তব্ধ মিতু দুদিন পর জানতে পেরেছিল, সাড়ে চার বিঘা ধানিজমিসহ ওদের ভিটের নতুন মালিক ওর শ্বশুরমশাই!
বৃষ্টি থেমে গেছে। বিকেলটা দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কেবল মিতুর ভাবনা ফুরোচ্ছে না। সে একইভাবে দাঁড়িয়ে আছে জানালায়। দৃষ্টি খুঁটিসমেত ওই গাছটির দিকেই। এখন কিছুটা এলোমেলো হাওয়া বইছে। কিন্তু হাওয়ায় গাছটি সেভাবে দুলছে না, কেবল ওটার মাথাটা দুলছে এদিক সেদিক। ছোট্ট কাঁঠালটিও আগের মতো ভয়ংকরভাবে দুলছে না, কেবল থিরথির করা কাঁপন লেগেছে ওতে। যেন শেষ বিকেলের আলো আর ওই বাউরি বাতাসে রুমঝুম ঝুম নাচ করছে কাঁঠালশিশুটি, খুশিতে!
মনে মনে মিতু নিজের জন্য তেমনই একটি খুঁটি খুঁজছে যাকে অবলম্বন করে সে সোজা হয়ে দাঁড়াবে এই জীবনঝড়ের বিরুদ্ধে, আর ভ্রুণ থেকে মানুষের অবয়ব পেতে যাওয়া তার সন্তানটিরও হবে নিরাপদ আশ্রয়।
যদি না পাওয়া যায়, তাহলে কি সে হেরে যাবে? দপ করে জ্বলে উঠল মিতু, নিজেই নিজের মনের ভেতর, কক্ষনো না!
কোত্থেকে এসে মিতুর পেছনে দাঁড়াল ওর স্বামী। ‘তোমার পায়ের নিচে এত রক্ত কেন মিতু? রক্ত কেন পড়ছে? কীসের রক্ত?’
প্রচণ্ড ক্ষোভে রক্তচক্ষু করে স্বামীর দিকে তাকাল মিতু। ‘তুমি জানো না কীসের রক্ত? খুনি! গতরাতে তোমার মা-র অতগুলো কথা হজম করে এলেও তো তুমি আমাকে ছাড় নাই। ভুলে গেছ? ধমকে ধমকে যে ওষুধ খেতে বাধ্য করলে, এটা তার-ই ফলাফল!’
সাথে সাথে মিতুর স্বামীর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল! ‘যাক, অবশেষে বোঝাটা নেমে গেল!’
‘আমার সন্তান তোমার কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছিল? অমানুষ! খুনি!’
মুহূর্তেই মিতুর স্বামীর উজ্জ্বল মুখখানা অন্ধকারে ভরে গেল। রেগেমেগে মিতুর দিকে দু’তিন পা এগিয়ে বলল, ‘আমি খুনি? ….তোকে খুন করেই একদিন খুনি হব, দেখিস!’
‘তুমি খুনি! তোমরা খুনি! ….আমার আব্বাকে খেয়েছ আর আমার সন্তানটিও….!’
ততক্ষণে বেরিয়ে গেছে মিতুর স্বামী। মিতু নিচের দিকে তাকাল। বেশখানিকটা রক্ত জমে গেছে ওর পায়ের নিচে!
মিতু মনেপ্রাণে চাইছে এখন তার কাছে একটি ফোন আসুক। সেই জাদুকরী আহ্বানটি আবারও তার কানে বাজুক, ‘তুমি চলে এস। আমি এখনো তোমার অপেক্ষায় আছি।’
লোকটা মিতুকে ভালোবাসে, হাইস্কুলের ওপরেরদিকের ক্লাসে উঠবার সময় থেকেই। এতদিনেও সেই ভালোবাসা এতটুকুও ধুলোমলিন হয়নি সেটা মিতু টের পায় তার ফোনকলগুলোর আবেগঘন কথাবার্তা শুনে। তাছাড়া মাসখানেক আগে শেষবার তার মুখোমুখি হয়েছিল। তখনো তার দুচোখভরা মুগ্ধতা আর অমোঘ আকর্ষণ দেখেছে সে; আগের মতোই। ফলে অনাদর এবং অবহেলায় পতিত পড়ে থাকা মনের জমিনটুকুর খরা কাটাতে সে ভালোবাসার বৃষ্টির প্রতীক্ষা করতেই পারে। আর সমাজ? ভাঙা মেরুদণ্ডের ওই বস্তু সদৃশ প্রাণটিরও কিছুটা ঘৃণা প্রাপ্য রয়ে গেছে মিতুর কাছ থেকে!
শেষমেশ মিতু নিজেই মোবাইল হাতে তুলে নিল এবং বুকের ভেতর জমা হওয়া দ্বিধার বাষ্পটুকু হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে একটি নম্বরে কল করল। ওর মোবাইলের স্ক্রিনে যে নামটি দেখা গেল তা ডা. মাসুদের! হোমিও কলেজের লেকচারার ডা. মাসুদুর রহমান।
২.
বছর চারেক পর গ্রামে এসেছে মিতু; বেড়াতে। সাথে তার তিন বছর বয়সী ছেলে মিতুল এবং স্বামী ডা. মাসুদ।
মিতু কিছুদিন আগেই মামলায় জিতে তার বাবার সব জমিজমা ফিরে পেয়েছে।
বাড়ির বাইরের উঠোনে ছুটোছুটি করছে মিতুল। গোরস্থানের পাশে দাঁড়িয়ে ওকে দেখছে মিতু ও ডা. মাসুদ। একটু আগে তিনজনই হাত তুলে মোনাজাত করেছে মিতুর মা-বাবার আত্মার শান্তির জন্য।
ভিটেয় পা দিয়েই মা-বাবার কবরের শিয়রে একটি কাঁঠালগাছের চারা রোপণ করেছে মিতু। তারপর স্বামীকে ডেকে বলেছে, ‘ডাক্তার সাহেব, গাছটিতে একটি খুঁটি দিয়ে দাও, যাতে ওটা মেরুদণ্ড সোজা করে বেড়ে উঠতে পারে।’
ডা. মাসুদ নিজ হাতে গাছটির পাশে একটি খুঁটি পুঁতে তার সাথে বেঁধে দিয়েছে গাছটি।
মিতুল ছুটোছুটি করতে করতে মা-বাবার থেকে বেশ কিছুটা দূরে রাস্তার পাশে গিয়ে কোনো কিছুর সাথে হোঁচট খেয়ে পড়ে গেল। তারা দুজন ছুটে ওর কাছাকাছি আসবার আগেই একজন পথিক ওকে তুলে ধরে ভরসা দিতে কিছু বলতে গিয়ে থমকে গেল। ছেলেটা দেখতে ঠিক তার-ই মতো! লোকটি তার তোবড়ানো গালভর্তি দাড়ি-গোঁফ ও মাথাভরা উসকোখুসকো চুল নিয়ে বিস্মিত চোখ তুলে ছেলেটির মা-বাবার দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে আবারও দৃষ্টি ফিরিয়ে আনল ছেলেটির ওপর। কিন্তু মনে মনেও ছেলেটিকে নিজের সন্তান দাবী করবার মতো সাহস জমিয়ে উঠতে পারল না! কারণ তার নিজের মেরুদণ্ড ততটা সোজা নয় কিংবা কোনো খুঁটির জোরও নেই!
শুধু মিতুলের স্পর্শটুকু তার জীবনের বাকি সময়ে একটু সুখানুভূতি জাগ্রত করবার অবলম্বন হয়ে রইল!