আসাদ মান্নানের কবিতা

আগুনের দীর্ঘ নদী
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেল দক্ষিণ সমুদ্রে
একটা ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়ে ধীরে ধীরে
উপকূল পার হচ্ছে; আমার পৈত্রিক ভিটে বাড়ি
গাছপালা ফসলাদি সব কিছু লণ্ডভণ্ড করে
দূরন্ত ঘূর্ণির পাক কিছুক্ষণ আগে আমাদের
পুকুরের পূর্ব পারে আমার দাদার কবরের
ঘাসে দম বন্ধ করে পড়ে আছে ; হয়তো বা ক্লান্তি
অথবা আপন আয়ু শেষ করে কিছুটা নির্মল
বায়ুর সান্নিধ্য পেতে তার এই ভদ্র আচরণ।
দৃশ্যটা যখন আমি রাতে টিভির খবরে দেখি
তখন আমার চোখে অনিদ্রার পর্দা উড়ে আসে
আমাকে ঘুমের জন্য বার বার ভেতর মহলে
যেতে ডাকা হচ্ছে– বলা হচ্ছে, বাতি নিভে গেলে পর
প্রবেশ নিষেধ জেনো, দরজাটা বন্ধ হয়ে যাবে।
আমি বলি, ক্ষতি নেই; দ্যাখো এক দরজা বন্ধ হলে
আমি যে মহলে থাকতে জন্ম থেকে এত কাল ধরে
অপেক্ষার শত সূর্যবাতি গোপনে জ্বালিয়ে রাখি–
এইভাবে ভাবতে থাকি, একদিন ঘুম আসবে চোখে
ঘুম আসলে স্বপ্নে তার দেখা পাবো যাকে ভালোবাসি।
ভালোবাসলে কারও সঙ্গে এক ঘরে থাকতে হবে কেন–
প্রকৃতির ধর্ম কিন্তু এর বিপরীতে– যত দূরে
থাকা যায় ভালোবাসা তত গাঢ় হয়, শক্ত থাকে
কাছে গেলে স্বার্থজালে বাঁধা পড়ে দম আঁটকে মরে–
ক্ষয় হতে হতে ভালোবাসা শূন্যতায় মিশে যায়।
অথচ এখন আমি ভালোবাসা ভালোবাসা বলে
ঘুমের ভেতরে চিৎকার করে ওঠি; থেমে যাওয়া
ঘূর্ণিঝড় উড়ে এসে আমার একান্ত ভুবনের
অন্তরঙ্গ নগ্নতার ঘরবাড়ি সব কিছু কেন
এভাবে তছনছ করে দিয়ে যায় আপন খেয়ালে
কে যেন আড়ালে থেকে অহর্নিশি মন্র দেয় কানে,
ভালোবাসা প্রাকৃতিক — কোনোদিন স্বীকার করো না,
তাহলে বিপদ হবে, নরকের দরজা খুলে যাবে। অলৌকিক পাহাড়ের গুহা থেকে গায়েবী আওয়াজ
শুনে আমি চিৎকারিয়া বলি, কাউকে ভালোবেসে যদি
আমাকে নরকে যদি যেতে হয় তাও যাবো আমি
তবু যাকে ভালোবেসে অনিদ্রায় কালরাত কাটে
অদৃশ্য ঘূর্ণিতে ছিঁড়ে গেছে সব বন্ধনের গিট
প্রকৃতি আমার প্রিয় ভালোবাসা ফিরিয়ে এনেছে
আমি ভালোবেসে পাড়ি দেবো আগুনের দীর্ঘ নদী।